যা ছড়িয়েছে: টায়ার ফেটে যাত্রীবাহী বাস পড়ল খাদে, নারী-শিশুসহ নিহত অন্তত ২৮।
যে ধারণা দেয়া হচ্ছে: ঘটনাটি ঘটেছে বাংলাদেশে!
ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত: দাবিটি বিভ্রান্তিকর। কারণ, যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে অন্তত ২৮ জন নিহত হবার ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়। মূল ঘটনাটি ঘটেছে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে। কিন্তু ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এসব সংবাদের শিরোনামে নির্দিষ্ট কোনো দেশ বা স্থানের উল্লেখ নেই। যে কারণে সংবাদটি দেখে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটি হয়তো বাংলাদেশের ঘটনা। যার ফলে সাধারণ ব্যবহারকারীদের অনেকে বিষয়টি বাংলাদেশের ঘটনা ভেবে শেয়ার করেছেন।
ফেসবুক ভাইরাল এমন কিছু লিংক বাছাই করা হয়েছে। যা দেখতে পাবেন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফেসবুকে আলোচিত সংবাদটি বাংলাদেশের একটি মূলধারার গণমাধ্যমে “টায়ার ফেটে যাত্রীবাহী বাস পড়ল খাদে, নারী-শিশুসহ নিহত অন্তত ২৮” শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদটির সাথে একটি ফটোকার্ড ব্যবহার করা হয়েছে। ফটোকার্ডটিতে দুর্ঘটনায় দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া একটা গাড়ি এবং কিছু মানুষ দেখা যাচ্ছে। উক্ত সংবাদের বিস্তারিত অংশে দেখা যায়, পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের ওয়াশুক জেলায় একটি যাত্রীবাহী বাস উল্টে খাদে পড়ে যাওয়ার পর নারী ও শিশুসহ অন্তত ২৮ জন নিহত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের একটি গণমাধ্যম উক্ত ঘটনাটি পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের বরাতে প্রকাশ করেছে। জিও নিউজ সংবাদটিতে যেই ফিচার ইমেজ ব্যবহার করেছে তা যে প্রতীকী ছবি এটি উল্লেখ করেছে। অপরদিকে বাংলাদেশী গণমাধ্যমে ফিচার ইমেজে জিও নিউজ থেকে ভিন্ন ছবি ব্যবহার করেছে। যে কারণে ছবিটি এই দুর্ঘটনার কিনা তা জানা সম্ভব হয়নি। তবে একই ঘটনার উপরে We News নামের একটি সাইট যেই ফিচার ইমেজ ব্যবহার করেছে সেই ফিচার ইমেজের সাথে বাংলাদেশী গণমাধ্যমে ব্যবহৃত ইমেজের মিল রয়েছে।
লক্ষণীয়, বাস দূর্ঘটনায় অন্তত ২৮ জন মারা যাবার এই ঘটনাটি আমেরিকার গণমাধ্যম The Washington post পাকিস্তানের গণমাধ্যম JEO News এবং ভারতের গণমাধ্যম The Indian Express থেকে প্রকাশিত হয়েছে। তিনটি দেশই প্রতিবেদনের শুরুতে স্থান বা দেশের নাম উল্লেখ করেছে। যদিও বাংলাদেশি গণমাধ্যমের শিরোনামে স্থান বা দেশের নাম উল্লেখ নেই।
প্রতিনিয়ত একাধিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিবেদনের শিরোনামে যখন স্থানের নাম বা দেশের নাম উল্লেখ করা হয়, তখন তা নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি হয় না। অথচ “টায়ার ফেটে যাত্রীবাহী বাস পড়ল খাদে, নারী-শিশুসহ নিহত অন্তত ২৮” এ জাতীয় শিরোনাম থাকলে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। যেমনটি দেখা যাচ্ছে, এটি পাকিস্তানের ঘটনা সত্বেও অনেকে বাংলাদেশের ঘটনা বলে ভেবেছেন। অনেকেই সংবাদটির নিচে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। ভেতরের সংবাদ পড়ে যখন দেখেছেন এটি পাকিস্তানের ঘটনা, তখন বাংলাদেশের সাংবাদিকতার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া সংবাদটিকে ফ্যাক্টওয়াচ “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।