বাংলাদেশে চলমান বন্যা পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে একটি বাঁধ থেকে পানি ছাড়ার ভিডিও ভিন্ন দুইটি ক্যাপশনে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ছে। একটি ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছে এটা ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টি জলকপাট খুলে দেয়ার ভিডিও। অন্য ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছে এটা বাংলাদেশের কাছাকাছি অবস্থিত ভারতের কোনো বাঁধের ভিডিও। অর্থাৎ, এর মাধ্যমে ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে যে, এই বাঁধ থেকে পানি ছেড়ে দেয়ার কারণেই বাংলাদেশে বন্যা হচ্ছে। কিন্তু, অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে যে, ভাইরাল বাঁধটি হচ্ছে পাকিস্তানের তারবেলা বাঁধ। এই বাঁধের সাথে বাংলাদেশে চলমান বন্যার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সুতরাং, ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায় ভাইরাল এই পোস্টগুলো মিথ্যা।
ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে ১৯ আগস্ট ২০২৪ থেকে ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলের নদীগুলোতে পানি বাড়তে থাকে। এর ফলে বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে যায় এবং সেখান থেকে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। এর পরের দিন থেকে এই তিনটি জেলা সহ আরও ১০ জেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দেয়। ২১ আগস্ট ২০২৪ থেকে বন্যা পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করে। ভারি বৃষ্টিপাত এবং ভারতের ত্রিপুরার উজান থেকে নেমে আসা ঢলকে এই বন্যার প্রধান কারণ হিসেবে ধরে নেয়া হচ্ছে। এই বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে ভারতের বিহার ও ঝাড়খণ্ডে বন্যা পরিস্থিতির কারণে ২৪ আগস্ট ২০২৪ এ ফারাক্কা ব্যারেজের সবগুলো জলকপাট খুলে দেয় দেশটি। যেহেতু, ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমানা থেকে মাত্র ১৭ কিলোমিটার দূরে, তাই এটা খুলে দেয়ার ফলে বাংলাদেশে আবার বন্যা হবে বলে দাবি করা হচ্ছে। এই জলকপাট খুলে দেয়ার ভিডিও দাবি করেই ফেসবুকে আলোচিত ভিডিওটি শেয়ার করা হচ্ছে।
তাই ভাইরাল এই ভিডিওটির উৎস রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধান পদ্ধতিতে খুঁজে দেখা গেছে এটা ভারতের ফারাক্কা বাঁধের নয় বরং পাকিস্তানের তারবেলা বাঁধের ভিডিও। hameed 95 নামের একটি টিকটক অ্যাকাউন্ট থেকে এই ভিডিওটির অনুরূপ একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ করা হয় যে, জলকপাট খুলে পানি ছাড়ার দৃশ্যটি পাকিস্তানের তারবেলা বাঁধের। পরবর্তীতে, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তারবেলা বাঁধ সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে পাকিস্তান ওয়াটার অ্যান্ড পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (ওয়াপদা) এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে তারবেলা বাঁধের বেশ কিছু ছবি পাওয়া যায়। নিবন্ধটি থেকে আরও জানা যায় তারবেলা বাঁধ পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের সিন্ধু নদীর উপর অবস্থিত। এর পানি নিঃসরণ করার জন্য দুইটি স্পিলওয়েস রয়েছে। যার মধ্যে একটি হচ্ছে ৭ টি জলকপাটের সার্ভিস স্পিলওয়েস এবং অন্যটি হচ্ছে ৯ টি জলকপাটের অক্সিলিয়ারি স্পিলওয়েস। ভাইরাল বাঁধটির সাথে এই সার্ভিস স্পিলওয়েসের মিল পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, এর মাধ্যমে এতটুকু নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে, আলোচিত বাঁধটি বাংলাদেশের কাছাকাছি অবস্থিত ভারতের নয় বরং, পাকিস্তানের অবস্থিত একটি বাঁধ। ভৌগলিক ভাবে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মাঝখানে ভারত অবস্থিত বলে এই বাঁধ থেকে পানি ছেড়ে দেয়া হলে বাংলাদেশে বন্যা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
অন্যদিকে ফারাক্কা বাঁধের ১০৯ টি জলকপাট রয়েছে, কিন্তু ভাইরাল এই ভিডিওতে মাত্র ৭ টি জলকপাট দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া, ফারাক্কা বাঁধের এই ১০৯ টি জলকপাট খুলে দেয়া হলেও পদ্মা নদীতে পানি বাড়েনি। বাংলাদেশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের তথ্য মতে ফারাক্কার ভারতের অংশে এই মুহূর্তে বন্যা পরিস্থিতি চলমান থাকলেও এই মুহূর্তে বাংলাদেশে বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল পোস্টগুলোকে মিথ্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।