যা দাবি করা হচ্ছে: সম্প্রতি দেশ টিভির নিউজের ফেসবুক পেইজ থেকে “জাতিসংঘে শত্রু ফিলিস্তিনের পক্ষে ভোট দিলো ইসরায়েল!”-শিরোনামে একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে দাবি করা হয়, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটে মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বানের খসড়া প্রস্তাবে ফিলিস্তিনের পক্ষে ভোট দিয়েছে ইসরায়েল।
ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত: দাবিটি বিভ্রান্তিকর। “দেশ টিভি নিউজ” নামের ফেসবুক পেইজ থেকে প্রকাশিত ভিডিওটি হচ্ছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক অধিবেশনের। সেখানে নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান প্রেসিডেন্ট সার্জিও ফ্রাঙ্কা দেনেসা (Sérgio frança Danese) ভুলবশত ‘ইসরায়েল’ নামটি উচ্চারণ করেছিলেন। কিন্তু সেটি ভোটের সময় নয় বরং খসড়া প্রস্তাব উত্থাপনকারী দেশুগুলোর নাম উল্লেখ করার সময়। এই তথ্যটিকে ইসরায়েল ফিলিস্তিনের পক্ষে ভোট দিয়েছে বলে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, অধিবেশনটিতে রাশিয়ার তোলা খসড়া প্রস্তাবের পক্ষে কিংবা বিপক্ষে ভোট দেয়া থেকে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনকে বিরত রাখা হয়েছিল। অন্যদিকে, জাতীয় ও আন্তজার্তিক মূলধারার সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসন্ধান করে ইসরায়েলের ফিলিস্তিনের পক্ষে ভোট দেয়া সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি।
গত ১৭ই অক্টোবর দেশের মূলধারার গণমাধ্যম “দেশ টিভি” তাদের ফেসবুক পেইজ থেকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন চলমান সংকটে রাশিয়ার যুদ্ধবিরতি আহ্বানে ইসরায়েল তাদের শত্রু ফিলিস্তিনের পক্ষে ভোট দিয়েছে এমন দাবি করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। দেশ টিভির প্রতিবেদনটির শিরোনামে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসরায়েল তাদের শত্রু রাষ্ট্র ফিলিস্তিনের পক্ষে ভোট দিয়েছে।
তাই ভিডিওটি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রাসঙ্গিক কিছু কী-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করে ফ্যাক্টওয়াচ টিম। অনুসন্ধানে জাতিসংঘের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল থেকে গত ১৭ই অক্টোবর আপলোড করা একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটি ছিল গত ১৬ই অক্টোবর নিরাপত্তা পরিষদে অনুষ্ঠিত ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে এক অধিবেশনের। রাশিয়া সেই অধিবেশনে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি চেয়ে একটি খসড়া প্রস্তাব উত্থাপন করে। সেই খসড়া প্রস্তাবটি উত্থাপনের সময় যেসকল দেশ একাত্মতা প্রকাশ করে তাদের নাম উল্লেখ করা হয় । তবে, সেইসব দেশের নাম উল্লেখ করতে গিয়ে অধিবেশনের প্রেসিডেন্ট সার্জিও ফ্রাঙ্কা দেনেসা ভুলবশত ইসরায়েল নাম বলে ফেলেন। এবং তারপরেই তিনি তার ভুল স্বীকারকরে বলেন, ফিলিস্তিনের পক্ষে একাত্মতা প্রকাশকারী দেশের তালিকায় ইসরায়েলের নাম নেই। তবে, এই অধিবেশনে খসড়া প্রস্তাবের পক্ষে কিংবা বিপক্ষে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকতে হয় ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনকে।
অর্থাৎ, ইসরায়েল কোনো ভোট করেনি বরং প্রেসিডেন্ট ভুল করে খসড়া প্রস্তাব উত্থাপনকারী দেশগুলোর তালিকায় ইসরায়েলের নাম নিয়ে ফেলেন। পরবর্তীতে তিনি সেটি সংশোধনও করেছেন। প্রেসিডেন্ট সার্জিও ফ্রাঙ্কা দেনেসার ভুলবশত ইসরায়েল নাম উল্লেখ করার অংশটুকু দেশ টিভির সেই প্রতিবেদনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে। শিরোনাম ও থাম্বনেল ভুলভাবে এই তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ এ গাজা উপত্যকার কাছাকাছি ইসরায়েলি মূল ভূখণ্ডে অতর্কিত রকেট হামলা চালায় ফিলিস্তিনির স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস বাহিনী। এর জবাবে ইসরায়েলের সরকার ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং পাল্টা হামলা চালায়। ইসরায়েলের এই হামলায় গাজার অনেক নিরীহ ও বেসাময়িক মানুষ নিহত ও আহত হয়। এই যুদ্ধ বন্ধে গত ১৬ই অক্টোবর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন রাশিয়া। তবে তাদের এই প্রস্তাবটি সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোট না পাওয়ায় বাতিল করা হয়।
এছাড়া, জাতীয় ও আন্তজার্তিক মূলধারার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসন্ধান করেও ইসরায়েলের ফিলিস্তিনের পক্ষে ভোট দেয়ার কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি। তাই গত ১৭ই অক্টোবর দেশ টিভি থেকে প্রকাশিত সেই সংবাদটিকে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিবেদনটিতে দেয়া তথ্যগুলো ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
সুতরাং, সকল দিক বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে চিহ্নিত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।