সম্প্রতি “নেশা সম্পর্কে হিন্দু পন্ডিত যা বললেন” শিরোনামে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে এক ব্যক্তিকে নেশার পক্ষে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, উক্ত ভিডিওতে নেশা সম্পর্কে হিন্দু পন্ডিতের যে বক্তব্যটি ব্যবহার করা হয়েছে তা বিভ্রান্তিকর। মূল ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখলে বুঝা যায়, বিজয় ভাগবত স্বামী মহারাজ নামে এই ব্যক্তি আসলে নেশার বিপরীতে কথা বলেছিলেন। কিন্তু মূল ভিডিওটির এমন একটি অংশ উক্ত পোস্টে ব্যবহার করা হয় যেখানে তাকে নেশার পক্ষে কথা বলতে দেখা যায়। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এমন ভিডিওকে বিকৃত হিসেবে চিহ্নিত করছে।
তিন মিনিটেরও বেশি দীর্ঘ এই ভিডিওতে দেখা যায়, একজন “হিন্দু পন্ডিত” নেশার পক্ষে তিনটি যুক্তি দিচ্ছেন এবং একজন “ইসলামিক স্কলার” নেশা কেনো ‘হারাম’ এর পক্ষে তিনটি যুক্তি দিচ্ছেন। ভিডিওর প্রথম অংশে উল্লেখিত হিন্দু পন্ডিতকে বিভিন্ন ধরনের নেশার পক্ষে মন্তব্য করতে দেখা যায় এবং ভিডিওর শেষ অংশে উল্লেখিত ইসলামিক স্কলারকে নেশার বিপক্ষে মন্তব্য করতে দেখা যায়।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান
ফেসবুকে ভাইরাল এই ভিডিওর একটি অংশের সাহায্যে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করে উল্লেখিত হিন্দু পন্ডিতের কিছু ফেসবুক ভিডিও সামনে আসে। সেখানে বর্তমানে ভাইরাল এই ভিডিওটি না পাওয়া গেলেও উক্ত হিন্দু পন্ডিতের একটি পরিচয় পাওয়া যায়। “শ্রীমৎ ভক্তি বিজয় ভাগবত স্বামী মহারাজ” নামে একটি পরিচয়ের মাধ্যমে পরবর্তীতে ইউটিউবে অনুসন্ধান করা হলে “হরেকৃষ্ণ মহা উৎসব, পূর্ব মেদিনীপুর: শ্রীমৎ ভক্তি বিজয় ভাগবত স্বামী মহারাজ” শিরোনামে ২০ নভেম্বর ২০২০ তারিখে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
এক ঘন্টা পাঁচ মিনিট দীর্ঘ এই ভিডিওতে উপস্থাপকের বক্তব্য থেকে জানা যায় উক্ত ব্যাক্তির নাম বেনুধারী প্রভু। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় তার আসল নাম শ্রীপাদ বেণুধারী দাস ব্রহ্মচারী।
উক্ত ইউটিউব ভিডিও থেকে আরোও জানা যায় ভিডিওটি পূর্ব মেদিনীপুরে সংঘটিত হরেকৃষ্ণ মহা উৎসবের। এক ঘন্টা পাঁচ মিনিট দীর্ঘ এই ভিডিওর ৩৯ মিনিটে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, ভিডিওর এই অংশটিই বর্তমানে ফেসবুকে ভাইরাল হচ্ছে এবং দাবি করা হচ্ছে তিনি নেশার পক্ষে কথা বলেছেন। কিন্তু মূল ভিডিওটির ৩৮ মিনিট থেকে ৪৪ মিনিট পর্যন্ত বক্তব্যটি শুনলে বুঝা যায়, সেখানে এক পাঠককে উদ্ধৃত করে ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে “নেশা করার তিনটি লাভ রয়েছে” এমন মন্তব্য করেন। মূল বক্তব্যটি নেশার সম্পূর্ণ বিপক্ষেই ছিলো। এর প্রেক্ষিতেই ইসলামিক স্কলার মিজানুর রহমান আজহারীর একটি ভিডিও এর সাথে যোগ করে দেওয়া হয় যেখানে তিনি নেশা কেনো হারাম এর পিছনে তিনটি যুক্তি দেখাচ্ছেন।
মূলত এই দুইটি ভিডিওর মাধ্যমে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে কিভাবে একজন হিন্দু পন্ডিত নেশার পক্ষে বক্তব্য দিচ্ছেন এবং অন্যদিকে একজন ইসলামিক স্কলার এর বিপক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন।
তবে এমন ভিডিওর প্রেক্ষিতে সাধারণ ব্যবহারকারীদের কেউ কেউ বিভ্রান্ত হলেও অনেকেই এমন বিভ্রান্তিকর একটি ভিডিওর প্রতিবাদ করেছেন।
সুতরাং, পরিষ্কারভাবেই বুঝা যাচ্ছে ১ ঘন্টারও বেশি দীর্ঘ একটি ভিডিও থেকে সামান্য কিছু অংশ নিয়ে সেটিকে নেতিবাচক ভঙ্গিতে ফেসবুকে প্রকাশ করা হয়েছে যার মাধ্যমে এক ধরনের বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এমন একটি ভিডিওকে “বিকৃত” চিহ্নিত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?