গাজা ভূখণ্ড থেকে হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলের মূল ভূখণ্ডে প্যারাস্যুটের মাধ্যমে প্রবেশ করছে- এমন দাবিতে ১৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বরাতে জানা যাচ্ছে যে কিছু হামাস যোদ্ধা গাজা থেকে ইসরায়েলের মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছে ঠিকই, তবে আলোচ্য ভিডিওটি সেই ঘটনার নয়। এই ভিডিওটি মূলত মিশরের মিলিটারি একাডেমি’র সামনে ধারণ করা হয়েছিল, যা ইসরায়েল সীমান্ত থেকে বহূ দূরে অবস্থিত। তাই এই দাবিকে ফ্যাক্টওয়াচ বিভ্রান্তিকর সাব্যস্ত করছে ।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেন্ডেন্ট এর এই খবরে বলা হচ্ছে, হামাস জঙ্গি গোষ্ঠীর যোদ্ধারা অনলাইনে একটি ভিডিও ফুটেজ শেয়ার করেছে যা থেকে দেখা যাচ্ছে যে তারা ইসরায়েল সীমান্তে ‘প্যারাগ্লাইড’ করে অবতরণ করছে।
এই খবরের সাথে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে, উচু দালান কোঠা বিহীন মরুভূমি সদৃশ সমতল ভূমিতে কিছু যোদ্ধা প্যারস্যুটের মাধ্যমে অবতরণ করছে।
হামাস থেকে প্রকাশিত অন্য একটি ভিডিও বিশ্লেষণ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম সিএনএন জানাচ্ছে, গাজা সীমান্তের উত্তরে Zikim নাম এলাকার দিকে দু’জন প্যারাগ্লাইডারকে উড়তে দেখা যাচ্ছে।
অন্যদিকে , ছড়িয়ে পড়া ১৬ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে প্যারাগ্লাইডারদের সাথে সাথে একটি সুউচ্চ ভবন দেখা যায়, যে ভবনের সামনে আরবিতে লেখা রয়েছে الكلية الحربية (আল কুল্লিয়াতুল হারবিয়্যাহ) যার অর্থ হয় ‘মিলিটারি একাডেমি’।
আরবি এবং ইংরেজি উভয় বানানেই ম্যাপে এই ভবনটা অনুসন্ধান করা হলে একই ফল পাওয়া যায়। এটি মিশরে অবস্থিত, যার পূর্ণ ঠিকানা হল – 4955+G97, El-Orouba, Al Matar, El Nozha, Cairo Governorate 4470801, Egypt । গুগল ম্যাপে এই নির্দিষ্ট ভবনের ছবিও দেখতে পাওয়া যাচ্ছে, যার সাথে আলোচ্য ভিডিওর ভবনটির ছবি হুবহু মিলে যায়।
ইজিপশিয়ান মিলিটারি একাডেমির ওয়েবসাইটে গেলেও একই ছবি এবং একই ঠিকানা দেখা যাচ্ছে। এমনকি ইজিপশিয়ান মিলিটারি একাডেমির একটি বড় লোগো/মনোগ্রাম আলোচ্য ভিডিওতেও ভবনটির সামনে দেখা যাচ্ছে।
অর্থাৎ , এটা নিশ্চিত যে এই ভবনটি মিশরের মিলিটারি একাডেমি, যা মিশরের অভ্যন্তরে অবস্থিত। ম্যাপ থেকে দেখা যাচ্ছে, এখান থেকে নিকটবর্তী ইসরায়েল সীমান্ত ৪১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
১৬ সেকেন্ডের আলোচিত ভিডিওটির মূল উৎস খুজে পাওয়া সম্ভব না হলেও, এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে এটা হামাস যোদ্ধাদের ইসরায়েলের মূল ভূখণ্ডে প্যারাগ্লাইডিং করে ঢোকার ভিডিও নয় ।
বুম লাইভ এবং দ্য কুইন্ট একই রায় দিয়ে ফ্যাক্টচেকিং প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। দেখুন এখানে এবং এখানে।
সিদ্ধান্ত
হামাস যোদ্ধারা প্যারাগ্লাইডিং করে ইসরায়েলের মূল ভূখণ্ডে ঢুকেছে, এটা সত্য। তবে আলোচিত ১৬ সেকেন্ডের ভিডিওটি মিশরের অভ্যন্তরে ধারণ করা, যা মিশর-ইসরায়েল সীমান্ত থেকে বহু দূরে অবস্থিত। তাই এই ভিডিওকে হামাস যোদ্ধাদের প্যারাগ্লাইডিং বলে যারা দাবি করছেন, সেই দাবিটি ভুল । এমন দাবিযুক্ত পোস্টগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ তাই ‘বিভ্রান্তিকর’ সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।