চলচ্চিত্রের কাহিনীকে বাস্তব ঘটনা বলে প্রচার

51
চলচ্চিত্রের কাহিনীকে বাস্তব ঘটনা বলে প্রচার চলচ্চিত্রের কাহিনীকে বাস্তব ঘটনা বলে প্রচার

Published on: [post_published]

২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া ভারতীয় ভৌতিক সিনেমা  Pari এর প্রেক্ষাপট হিসেবে বাংলাদেশের কিছু কাল্পনিক ঘটনা সংযুক্ত করা হয়েছিল । এসকল ঘটনা এবং চরিত্রকে সত্য ঘটনা হিসেবে ফেসবুকে দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করা হচ্ছে। তবে ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে এসব দাবির কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

গুজবের উৎস

সিনেমায় বর্ণিত ঘটনাগুলোকে সত্য হিসেবে দাবি করা কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে

এ সকল পোস্টে বলা হয়েছে, ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা অঞ্চল থেকে হওয়া এক খবর বাইরের বিশ্বে খুব হইচই ফেলে দিয়েছিলো, সেটা হল সাতক্ষীরা ও তার আশপাশের অঞ্চল থেকে হঠাৎ করেই বেশ কিছু নাবালিকা মেয়ে মানুষ গায়েব হয়ে যায় ।  কিছুতেই তাদের খোজ পাওয়া যায় না । “ওলাদচক্র (Oladchakra)” নামে এক গ্রুপের এই ঘটনার পেছনে প্রত্যক্ষ হাত ছিলো বলেই জনশ্রুতি ঘটে ।  সবাই বলতে শুরু করে এই “ওলাদচক্র”ই মেয়েদের হঠাৎ করে হারিয়ে যাওয়ার পেছনে দায়ী । 

কে/কি এই ওলাদচক্র?

স্যাটানিজমের (Satanism) নাম আমরা সবাই শুনেছি । সৃষ্টিকর্তা হিসেবে শয়তানকে বিশ্বাস করা ও তার পূজা করাই এক কথায় স্যাটানিজম ।  এটা এমন একটা স্বতন্ত্র‍্য ধর্ম যার চর্চা করা সভ্য সমাজে পুরোপুরি নিষিদ্ধ ।  এর চর্চা করতে হয় গোপনে এবং যুগে যুগে বিভিন্ন গ্রুপ এই স্যাটানিজমের চর্চা করে এসছে । “ওলাদচক্র” তেমনি একটি গ্রুপ ।

ওলাদচক্র মেয়েদের কেন অপহরণ করা শুরু করলো?

এর কারণ হচ্ছে জ্বীনজাতির মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জাত “ইফ্রিত” (Ifrit) এর বংশবিস্তারের উদ্দেশ্য । ইফ্রিতের অস্তিত্বের কথা ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী পরীক্ষিত ।

*ইসলামে ইফ্রিতের অস্তিত্ত্বের কথা জানা যায় বুখারী শরীফ থেকে। সেখানে বর্নিত আছে মহানবী (সাঃ) কে এক ইফ্রিত নামাজে বাধা দিয়েছিল, এজন্য মহানবী (সাঃ) ইফ্রিত কে বেধে রাখতে চেয়েছিলেন যেন সকালে সবাই ইফ্রিতকে দেখতে পারে কিন্তু হঠাৎ করে তার মনে পড়ে, হযরত সোলায়মান (আঃ) ‘ইফ্রিত-এর সঙ্গে কথা বলছিলেন (সূরা নাম্‌ল ২৭:১৫-৪৪), এ কথা মনে পরার সাথে সাথে তাকে মুক্ত করে দেন।*

#ইফ্রিতের_পরিচয়ঃ

আগেই বলা হয়েছে ইফ্রিত জ্বীনজাতির মধ্যে সবচাইতে ভয়ঙ্কর ও বিপদজনক ।  তাদের কখনো দেখা যায় না, তবে তাদের আওয়াজ শোনা যায়, তাদের অস্তিত্ব অনুভব করা যায় । এরা মানব নারীর সঙ্গে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করতে পারে এবং এতে করে সেই মানবনারী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে থাকে । সাধারণ মানুষ নয় মাসের মাথায় জন্মগ্রহণ করলেও ইফ্রিত এর সন্তান জন্ম নেয় এক মাসের মাথায় ।  তার ঔরসেই মানবীর গর্ভে ২৯ দিনে বেড়ে উঠে ভ্রুণ ।  যে সন্তান জন্মগ্রহণ করে সে জন্ম নেয় “Naval Cord” ছাড়াই,  অর্থাৎ সে এই একমাস মায়ের গর্ভে বড় হয়েছে ঠিকি কিন্তু মায়ের শরীর থেকে পুষ্টিলাভ করেনি,  তাকে হৃষ্টপুষ্ট করে বড় করে তুলেছে খোদ শয়তান জ্বীন ইফ্রিত নিজে ।

এই সন্তান ভবিষ্যতে ইফ্রিতের হয়ে বংশবিস্তারের ধারা অব্যাহত রাখে এবং এভাবেই ইফ্রিতের অস্তিত্ব টিকে থাকে যুগের পর যুগ ।

সাতক্ষীরা অঞ্চলের ‘ওলাদচক্র’ ছিলো এই ইফ্রিত জ্বীনের উপাসক সংঘ এবং তাদের কাজ ছিলো এই জ্বীনের জন্য মেয়েদের কে ধরে আনা ।  জ্বীনদের সঙ্গম হয়ে গেলে তারপর একদিন বাচ্চার জন্ম হয়ে যাবার পর মেয়েটিকে মেরে ফেলা হতো ।

এভাবেই চলতে থাকতো প্রক্রিয়া ।  কিন্তু এই খবর চাপা থাকে না । মানুষের কাছে কোনভাবে পৌছে যায় এই ওলাদচক্রের খবর, আর “কেয়ামত আন্দোলন” নামে এক আন্দোলন শুরু হয় এই ওলাদচক্রের বিরুদ্ধে যার নেতৃত্ব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর কাসিম আলী (Qasim Ali) ।  সবাই এই আন্দোলনকে সমর্থন দিলেও দিনে দিনে এই আন্দোলনের নিয়মকানুন চরমপন্থী হওয়ার দিকে ধাবিত হলে একটা সময়ে সরকার এদের ব্যান করে দেয় ।

প্রফেসর কাসেম আলি একটা বই লিখেছিলো, বইয়ের নাম “The Evil Child” বইয়ের মূল বিষয়বস্তুই ছিলো ইফ্রিত!

ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান

Evil Child

গুগল সার্চে The Evil Child নামে কোনো বই খুজে পাওয়া গেল না। পারি চলচ্চিত্রের পর্দায় The Evil Child এর একটি কপি দেখানো হলেও ,  রকমারি কিংবা আমাজন এর মত বইয়ের ওয়েবসাইটেও প্রফেসর কাসিম আলির লেখা The Evil Child নামের কোনো বই দেখা যাচ্ছে না ।

এখান থেকে প্রতীয়মান হয় যে কেবলমাত্র সিনেমার কাহিনীর প্রয়োজনেই এই নাম সম্বলিত একটি বই (কিংবা শুধু বইয়ের প্রচ্ছদ) তৈরি করা হয়েছিল।

প্রফেসর কাসিম আলি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথিত প্রফেসর কাসিম আলী’র ডিপার্টমেন্ট এর নাম পোস্টে বলা হয়নি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে বর্তমান ফ্যাকাল্টি সদস্যদের তালিকায় অনুসন্ধান করে কাসিম আলী নামক কাউকে পাওয়া যায়নি। গুগল সার্চেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নামের কোনো অধ্যাপক কে পাওয়া গেল না।

ওলাদচক্র

একইভাবে, কেয়ামত আন্দোলন কিংবা ওলাদচক্র নামের কোনো সংগঠনের খোজ পাওয়া যায়নি।

তবে ,কাছাকাছি বানানে ‘অলাতচক্র’ নামে একটি উপন্যাস রয়েছে বাংলা সাহিত্যে। লেখক আহমদ ছফা ১৯৯৩ সালে মুক্তিযুদ্ধে কলকাতা শহরকে উপজীব্য করে এই উপন্যাস রচনা করেন । ২০২১ সালে এই কাহিনী অবলম্বনে ‘অলাতচক্র’ নামে একটি বাংলা চলচ্চিত্রও মুক্তি পায়।

২০০৩ সালে ‘অলাতচক্র’ নামে তারাদাস বন্দোপাধ্যায় এর একটি ভৌতিক ছোটগল্পের সংকলন ও প্রকাশিত হয়েছিল। একই নামে , ২০২০ সালে এশরার লতিফ এর লেখা একটি থ্রিলার উপন্যাস ও প্রকাশিত হয়েছিল ।

বলা বাহুল্য , এ সকল বই কিংবা চলচ্চিত্রে সাতক্ষীরা , ইফ্রিত, শয়তানের উপাসনা ,  কেয়ামত আন্দোলন ইত্যাদি কোনো প্রসঙ্গই আসেনি।

বাংলা ‘অলাতচক্র’ শব্দের অর্থ হচ্ছে– চক্রের মতো আগুনের রেখা / জ্বলন্ত অঙ্গার বা জ্বলন্ত কাঠ বেগে ঘোরালে যে চক্রকার আগুনের রেখা দেখা যায় ।

তবে ‘ওলাদচক্র’ নামে কোনো শব্দ বাঙলা অভিধানে পাওয়া যায়নি।

কেয়ামত আন্দোলন

বাংলাদেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সময়ে কমপক্ষে ৮ টি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছে। এদের মধ্যে রয়েছে শাহাদত-ই-আল হিকমা, হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ, মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি) , জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), হিযবুত তাহরির ,আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এবং আল্লাহর দল ।

তবে ‘কেয়ামত আন্দোলন’ নামক কোনো সংগঠনকে বাংলাদেশ সরকার নিষিদ্ধ করেছে-এমন তথ্য পাওয়া গেল না ; যেমনটি আলোচ্য পোস্টে দাবি করা হয়েছে। এই নামে কোনো সংগঠণের কোনো অস্তিত্ত্বের প্রমাণ গুগল অনুসন্ধানে পাওয়া যায়নি।

১ মাসে মানব শিশুর জন্ম  !

মানবশিশুর জন্ম সম্পর্কেও আলোচ্য পোস্টে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া হয়েছে। সকল মানবশিশু জন্মাতেই ৪০ সপ্তাহ এর মত সময় লাগে। প্রথম আট সপ্তাহে শিশুটির শরীরের আভ্যন্তরীণ সব অঙ্গগুলি তৈরি হয়।

তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে মস্তিষ্ক, মেরুদণ্ড অন্ত্র আর হৃদপিণ্ড তৈরি হতে থাকে।

পঞ্চম সপ্তাহে হৃদপিণ্ড নিয়মিত স্পন্দিত হতে থাকে। চোখ আর কানে এবং  মাথায় স্নায়ুতন্ত্র তৈরি হতে শুরু করে।

ছয় সপ্তাহে ফুসফুস তৈরি হতে থাকে, ভ্রূণটির শরীরে রক্তপ্রবাহ শুরু হয়। এ সময়ে শরীরের ভেতরের কংকালটাও আকার নেয়া শুরু করে, আর স্নায়ুতন্ত্রের ভেতর দিয়ে মস্তিষ্কের পাঠানো সংকেত পাঠানোও শুরু হয়।

সাত থেকে আট সপ্তাহে  চুল, লোম ও স্তনবৃন্ত দেখা দেয়। মুখ, ঠোট কনুই আর পায়ের আঙ্গুলও এই সময়ে আলাদা করে চেনা যায়।

নয় থেকে বারো সপ্তাহে পরিপাকতন্ত্র কিছুটা কাজ শুরু করে। মাথাটা ভ্রূণের প্রায় অর্ধেক আয়তন দখল করে রাখে। বারো সপ্তাহর পরে আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে শিশুটির লিঙ্গ জানাও সম্ভব হয়।

তেরো থেকে ষোল সপ্তাহের মধ্যে মাথা হালকা চুলে ঢেকে যায়। এই সময়ে হাড়গুলিও শক্ত হতে থাকে, এবং ভ্রূণটি নিজে থেকে হাত পা নাড়াতে পারে।

১৭ থেকে ২০ সপ্তাহের মধ্যে মস্তিষ্ক দ্রুত বাড়তে থাকে। স্টেথোস্কোপ দিয়ে এই সময় হৃদপিন্ডের স্পন্দন শুনতে পাওয়া যায়।

২১ থেকে ২৪ তম সপ্তাহের ভেতর ভ্রূণটি হাত মুঠো করতে পারে, এবং ফুসফুসের কোষগুলি পরিণত হয়ে অ্যালভিওলি তৈরি করে। তবে চোখ তখনো বন্ধ থাকে।

২৫ থেকে ২৮ তম সপ্তাহে ভ্রূণটির দৈর্ঘ হয় প্রায় ১৫ ইঞ্চি। তখন এটি চোখের পাতা খুলতে বা বন্ধ করতে পারে।মস্তিষ্কের ক্ষমতা আরো দ্রুত বাড়তে থাকে এবং স্নায়ুতন্ত্র শরীরের কিছু কাজও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এই সময়েই আঙ্গুলের ছাপ চূড়ান্ত হয়ে যায়।

২৯ থেকে ৩২ সপ্তাহে স্নায়ুতন্ত্র শরীরের ওপর আরো নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং ফুসফুস নিয়মিত ওঠানামা করতে থাকে।

তেত্রিশ থেকে আটত্রিশতম সপ্তাহে শরীরের হালকা লোম দ্রুত মিলিয়ে যেতে থাকে। হাত মুঠো করার ক্ষমতাও বাড়ে। কানের লতি সম্পূর্ন হয়।

আটত্রিশতম সপ্তাহে ভ্রূণটিকে পরিপূর্ণ ধরা হয় এবং সেটি জন্মের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে, এবং আর এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে শিশুটির জন্ম হয়।

৩৭ সপ্তাহের চেয়েও কম বয়সী শিশুকে বলে প্রি ম্যাচিউর বেবি। বিভিন্ন অসুখে বা দুর্ঘটনার কারনে নিয়মিত সময়ের আগেই অনেক মা কে প্রসব করতে দেখা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অসময়ে এসকল প্রসব বা গর্ভপাত এর বাচ্চা মৃত্যুবরণ করে। সবচেয়ে কম সময় মাতৃ গর্ভে থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার বিশ্ব রেকর্ডটি আমেরিকার কার্টিস নামক এক শিশুর , যে গর্ভধারনের ২১ সপ্তাহ পরে ভূমিষ্ট হয়েছিল ।

৪ সপ্তাহ বা এক মাস গর্ভের পরেই সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার কোনো খবর বিশ্বে পাওয়া যায়নি।

Navel Cord বিহীন শিশুর জন্ম

একই ভাবে, নাভি কিংবা Navel Cord / umbilical cord / নাভীরজ্জু বিহীন কোন বাচ্চা জন্মের কথাও কখনো শোনা যায়নি । এই নাভীরজ্জুর সাহায্যে শিশুটি মাতৃগর্ভে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায়। মানুষ ছাড়া অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর শিশুদের ক্ষেত্রেও এমন নাভীরজ্জু দেখা যায়।

সাক্ষীরায় তরুণী নিখোঁ

সাতক্ষীরা  সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় (বিশেষত, সীমান্তবর্তী এলাকায়) অবৈধভাবে নারী ও শিশু পাচারের ঘটনা ঘটছে দীর্ঘদিন ধরে। সরকার এসকল পাচার রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিলেও, পাচারের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় আসেনি।

বৈধভাবে বাংলাদেশের শ্রমিকরা প্রধানত মধ্যপ্রাচ্য , মালয়েশিয়া,সিঙ্গাপুর সহ বিভিন্ন দেশে কাজের সন্ধানে যায়। তবে এক শ্রেণীর অসাধু পাচারকারী একটু কম শিক্ষিত বা সচেতন কাজে আগ্রহী ছেলে-মেয়েদেরকে বিদেশে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধভাবে বিভিন্ন দেশে পাচার করে থাকে। গৃহকর্মী, গার্মেন্টস কিংবা অন্য কোনো আকর্ষণীয় কাজের কথা বলে মেয়েদেরকে অনেক সময়েই ভারত সহ বিভিন্ন দেশের যৌনপল্লীতে বিক্রি করে দেয় এসব পাচারকারীরা।

বাংলাদেশ প্রতিদিন এর এই প্রতিবেদন এ বলা হয়েছে, নারী পাচারকারীদের ভয়ংকর সিন্ডিকেট গরিব, অসহায়, ভাগ্যবিড়ম্বিত নারী ও শিশুদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করছে বিভিন্ন দেশে। পরে তাদের বিক্রি করে দেওয়া হয় বিভিন্ন যৌনপল্লীতে। মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন বাসায় যৌনকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নারীদের। সবচেয়ে বেশি পাচার হচ্ছে পাশের ভারতে। এ ছাড়া রয়েছে সৌদি আরব, দুবাই, জর্ডান, লেবানন, মালয়েশিয়া।

জানা গেছে, এশিয়ার মধ্যে নারী পাচার ঘটনার দিক থেকে নেপালের পরই বাংলাদেশের স্থান। পাচারকারীরা বিভিন্ন পথে নারী ও শিশু পাচার করে থাকে । এ দেশের সঙ্গে ভারতের ৪ হাজার ২২২ আর মিয়ানমারের সঙ্গে ২৮৮ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর সীমানা দিয়েই পাচার হয় বেশি। যশোরের বেনাপোল, সাতক্ষীরার শাকারা, ভোমরা, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ, কক্সবাজার, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছয়টি রুটসহ অন্তত ১৮টি রুট দিয়ে আশঙ্কাজনক হারে পাচার হচ্ছে নারী-শিশু। সীমান্ত দিয়ে নারী ও শিশুদের নিয়ে যাওয়া হয় ভারতে। সূত্রমতে, প্রতি বছরই ২০ থেকে ২৫ হাজার নারী ও শিশু পাচার হচ্ছে। এর মধ্যে ১০ হাজারের বেশি নারী-শিশু পাচার হচ্ছে ভারতে। যদিও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের তথ্যানুসারে বছরে বাংলাদেশ থেকে ভারত হয়ে বিভিন্ন দেশে ৪০ থেকে ৫০ হাজার নারী ও শিশু পাচার হয়।

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি ও জানাচ্ছে , বাংলাদেশের ১৮টি রুট দিয়ে প্রতি বছর প্রায় ২০ হাজার নারী, শিশু ও কিশোরী ভারতে পাচার হচ্ছে। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় থাকা পাচারকারী সিন্ডিকেট চাকুরিসহ নানা লোভ দেখিয়ে ২০-৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে নারীদের বিক্রি করে দিচ্ছে ভারতীয় সিন্ডিকেটের কাছে। সেখানে আবার নানা হাত ঘুরে অনেকেরই ঠিকানা হচ্ছে যৌন পল্লী৷

ছেলে শিশুদের পাচারের ক্ষেত্রে মূল উদ্দেশ্য ছিল, মধ্যপ্রাচ্যে শিশুদেরকে উটের দৌড় প্রতিযোগিতায় জকি হিসেবে ব্যবহার করা। একটা সময় মধ্যপ্রাচ্যে এই কু-প্রথা প্রচলিত ছিল। তবে বর্তমানে আরব আমিরাত সহ অনেক দেশ এভাবে শিশুদেরকে জকি হিসেবে ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। উটের জকি হিসেবে কাজ করা বাংলাদেশী শিশুদেরকে ২০০৯ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল। এছাড়া, মানব শিশুর বদলে রোবট কে জকি হিসেবে বর্তমানে ব্যবহার ক্রছেন কেউ কেউ।

বিভিন্ন সময়ে অনেক নারী পাচারকারী চক্র আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছে। এবং শিশু এবং কিশোরীদের পাচারের উদ্দেশ্য ও গন্তব্য সম্পর্কে তাদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া যায়। তবে কখনোই অলাদচক্র বা কোনো বিশেষ গুপ্ত সংঘের কাছে এদেরকে বিক্রি করার কথা শোনা যায়নি।

অর্থাৎ, আলোচিত পোস্টে যে সকল দাবি করা হয়েছে, তার কোনোটিরই কোনো সত্যতা নেই।

Pari নামক চলচ্চিত্র

২০১৮ সালে প্রসিত রায় এর পরিচালনায় ,আনুষ্কা শর্মা এবং পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় এর অভিনয়ে পারি নামক চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়। ১৩৪ মিনিটের ভৌতিক ঘরানার এই ছবিটি বেশ ব্যবসাসফল হয়েছিল । ছবিটির কাহিনী বিশ্লেষণে আলোচ্য ভাইরাল ফেসবুক পোস্ট এর মিল পাওয়া যাচ্ছে।

এমনকি , অনেকে ফেসবুকে ইফরিত এর কাহিনীর সাথে জানিয়ে দিচ্ছেন যে এটা প্রকৃতপক্ষে পারি সিনেমার কাহিনী। এমন কয়েকটা পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে

তবে অনেকে আবার চলচ্চিত্রের কথা উল্লেখ না করে কেবলমাত্র চলচ্চিত্রের কাহিনীটাই ফেসবুকে পোস্ট করছেন, যার ফলে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।

পাঠকদের বিভ্রান্তির কয়েকটি নমুনা এখানে তুলে ধরা হল।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নাটক বা চলচ্চিত্রের কাহিনীকে বাস্তব ঘটনা মনে করে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে ফেসবুকে গুজব ছড়াতে দেখা গিয়েছে । যেমন দেখুন ফ্যাক্টওয়াচের এই দু’টি পুরনো প্রতিবেদন –

“ইউক্রেনের সেনা কর্তৃক বসনিয়ার মুসলমান হত্যা” শিরোনামে ভাইরাল ভিডিওটি চলচ্চিত্রের অংশ

পিস্তল উঁচিয়ে চাচাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা: মূলত একটি শর্টফিল্ম থেকে নেয়া

সার্বিক বিবেচনায়, যে সকল পোস্টে Pari সিনেমার প্রসঙ্গ এড়িয়ে আলোচ্য গল্পটিকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে, সে সকল পোস্টকে ফ্যাক্টওয়াচ ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।

 

আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন?
কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন?
নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?

এসবের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে জানান।
আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.