যা দাবি করা হচ্ছেঃগাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ব্রিটিশ প্যান্থার্স ব্যাটালিয়নের কমান্ডার জেনারেল হ্যামব্রিক থমাসকে হত্যা করা হয়েছে। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে একজন সেনা সদস্যের ছবিও আপলোড করা হয়েছে, যাকে কমান্ডার জেনারেল হ্যামব্রিক থমাস দাবি করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছেঃ ছবিটি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর চিফ অফ জেনারেল স্টাফ জেনারেল স্যার প্যাট্রিক সান্ডারসের। তবে তিনি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে সরাসরি অংশ নেননি। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর চিফ অফ জেনারেল স্টাফ পদে কর্মরত আছেন। তাছাড়া ব্রিটিশ প্যান্থার্স ব্যাটালিয়নের কমান্ডার জেনারেল হ্যামব্রিক থমাস নামে কেউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে ব্রিটিশ প্যান্থার্স ব্যাটালিয়ন নামে কোন মিলিটারি গ্রুপ থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া বর্তমানে চলমান ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে কোন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সদস্যের মৃত্যু হয়নি। এসব কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোকে ‘মিথ্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করছে।
ফ্যাক্টওয়াচেরঅনুসন্ধানঃ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবিটি গুগল ইমেজ সার্চে অনুসন্ধান শুরু করলে ৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সালে ডেইলি মেইল ইউকে প্রকাশিত একটি সংবাদে একই ধরণের ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। সেখান থেকে জানা যাচ্ছে ছবিতে থাকা ব্যক্তির নাম জেনারেল স্যার প্যাট্রিক সান্ডারস (General Sir Patrick Sanders)। উক্ত সংবাদ থেকে জানা যাচ্ছে তিনি পরবর্তী চিফ অফ দ্য ডিফেন্স স্টাফ। তবে কমান্ডার জেনারেল হ্যামব্রিক থমাস নামে কোন ব্রিটিশ সেনা সদস্যের ব্যাপারে কোন তথ্য নির্ভরযোগ্য কোন সূত্র থেকে পাওয়া যায়নি।
ইউকে (যুক্তরাজ্য) সরকারি ওয়েবসাইট GOV.UK তে জেনারেল স্যার প্যাট্রিক সান্ডারসের জীবনী পাওয়া যাচ্ছে। সেখান থেকে জানা যাচ্ছে তিনি নর্দান আয়ারল্যান্ড, কসোভো, বসনিয়া, ইরাক এবং আফগানিস্তানে অভিযান পরিচালনা করেছেন। সেখানে তার ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধে অংশ নেয়ার কোনো তথ্য নেই। তিনি ২০২২ সালের জুন মাসে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (Chief of the General Staff ) পদে নিয়োগ পান এবং বর্তমানে এই পদে বহাল আছেন। ২০২৪ সালের জুন মাসে তার এই পদের দায়িত্ব পালন শেষ হবে। তখন এই পদে দায়িত্ব পালন করবেন জেনারেল স্যার ররি ওয়ালকার (General Sir Roly Walker)। উল্লেখ্য, চিফ অফ জেনারেল স্টাফ পদটি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর পেশাদার প্রধান (professional head)। তবে তিনি ব্রিটিশ প্যান্থার্স ব্যাটালিয়নের কমান্ডার জেনারেল ছিলেন এমন তথ্য কোথাও পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া ব্রিটিশ সেনাবাহিনিতে ব্রিটিশ প্যান্থার্স ব্যাটেলিয়ান আর্মি থাকার কোন প্রমাণ কোথাও পাওয়া যায়নি। তবে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে কিছু প্রতিরক্ষা যান আছে যেগুলোকে PANTHER COMMAND AND LIAISON VEHICLE (সংক্ষেপে PANTHER CLV) বলে ডাকা হয়।
কোন ব্রিটিশ আর্মি ইসরায়েল ফিলিস্তিন যুদ্ধে মারা গেছে কিনা জানতে অনুসন্ধান করলে দুইজন ব্রিটিশ-ইসরায়েলি নাগরিকত্ব থাকা সেনা মারা যাবার খবর পাওয়া যায়। ৭ ই অক্টোবর হামাসের আকস্মিক আক্রমণে ইউসেফ গুয়েদালিয়া (Yosef Guedalia) নামক একজন ২২ বছর বয়সী সেনা সদস্য মারা যায়। এবং ৩রা ডিসেম্বর বেনইয়ামিন নিদহাম (Binyamin Needham) নামে ১৯ বছর বয়সী সেনা সদস্য মারা যায়। তিনি গাজার নর্থ টেরিটোরিতে অপারেশন পরিচালনার সময় মারা যান। তারা দুইজনই ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফের) সেনা সদস্য ছিলো। তবে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর কোন সেনা সদস্য ইসরায়েল হামাস যুদ্ধে মারা গেছে, এমন কোন খবর কোন নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া যায়নি।
The Times of Isreal থেকে ২৭ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি খবরে জানা যাচ্ছে আইডিএফ গত বুধবার হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে তিনজন ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। তারা হলেন লে. ইয়ারন এলিজার চিটিজ, ২৩, রা’নানা থেকে গিভাটি ব্রিগেডের শেকড ব্যাটালিয়নের একজন ডেপুটি কোম্পানি কমান্ডার; পেটাহ টিকভা থেকে স্টাফ সার্জেন্ট ইতাই বুটন, ২০, গিভাটি ব্রিগেডের শেকড ব্যাটালিয়ন; নেভ ড্যানিয়েল থেকে স্টাফ সার্জেন্ট এফ্রেইম জ্যাকম্যান, ২১, গিভাটি ব্রিগেডের শেকড ব্যাটালিয়ন।
তবে এদের ভিতর কেউ ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অংশ ছিলেন না।
এ কারণে সার্বিক দিক বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোকে ‘মিথ্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।