রাজশাহীতে কোর্টের বাইরে হেনস্তার শিকার ব্যক্তিটি বিচারপতি নন  

42
রাজশাহীতে কোর্টের বাইরে হেনস্তার শিকার ব্যক্তিটি বিচারপতি নন  
রাজশাহীতে কোর্টের বাইরে হেনস্তার শিকার ব্যক্তিটি বিচারপতি নন  

সম্প্রতি ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে যে, ‘সমন্বয়ক মবের দল’ রাজশাহী জেলা কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে কর্তব্যরত অবস্থায় টেনে হিঁচড়ে বাইরে বের করে হেনস্তা করছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, যে ব্যক্তি হেনস্তার শিকার হয়েছেন তিনি বিচারপতি নন, একটি প্রতারণা মামলার আসামি। আদালতে ওই মামলার হাজিরা দিতে গেলে তাকে সেখান থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়।  

এ ধরনের মিথ্যা ক্যাপশনযুক্ত পোস্টগুলোর কয়েকটি এখানে, এখানে, এখানে, এখানে। 

ভিডিওটির ক্যাপশনে থাকা তথ্যগুলো থেকে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ’বর্তমান রাজশাহীর খবর’-এ একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ভিডিওর সঙ্গে থাকা ক্যাপশনে বলা হচ্ছে, ‘‘রাজশাহী কোর্ট চত্বর থেকে এভাবেই প্রকাশ্যে এক মামলার আসামীকে ধরে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। সন্ত্রাসী কায়দায় প্রকাশ্যে এক মামলার আসামী জিয়াউরকে ধরে নিয়ে যায় কিছু যুবক। তবে পরে জানা যায় সেই ব্যক্তি একজন প্রতারক। তিনি চাকুরি দেওয়ার নামে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় এবং তাকে নিয়ে যাওয়া সেই যুবকেরা কয়েকজন তার প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী। তবে যুবকেরা তাকে নিয়ে যেতে পারেনি, পুলিশ এসে সেই প্রতারক লোকটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।” 

একই ধরনের ক্যাপশনে আরও একটি পোস্ট পাওয়া যায় সংবাদ ২৪ ঘণ্টায় (Sangbad 24 Ghonta)। ২১ ফেব্রুয়ারি পোষ্টটি করা হয় হ্যাশট্যাগ ‘রাজশাহী খবর’ দিয়ে। 

রিভার্স ইমেজ সার্চে বরেন্দ্র টিভিতে একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। বরেন্দ্র টিভি রাজশাহী থেকে সম্প্রচারিত একটি ওয়েব কমিউনিটি টিভি। এই প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, জিয়ারুল নামের এক ব্যক্তি প্রতারণা ও চেকের মামলায় অভিযুক্ত হয়ে আদালতে হাজিরা দিতে এলে সন্ত্রাসীরা তাকে মারধর করে তুলে নিয়ে যায়। ঘটনাটি কোর্টের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। এ সময় কোর্টের সাধারণ সম্পাদক নিকটস্থ রাজপাড়া থানায় ফোন করেন। এর পরে সন্ত্রাসীরা তাকে ছেড়ে দেয়।

আরও অনুসন্ধানে যুগান্তরের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, মনিরুল নামের এক ব্যক্তিকে চাকরি দেয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছিলেন জিয়ারুল। গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর আদালত চত্বরে হঠাৎ জিয়ারুলের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় বাদীপক্ষের। তখন জিয়ারুল পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় মনিরুল ও তার সঙ্গে থাকা আত্মীয়রা তাকে ধরে ফেলেন এবং আদালত চত্বর থেকে বাইরে নিয়ে গিয়ে টাকা চান। টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল দাবি করেন যে, জিয়ারুল পরে থানায় গিয়ে উল্টো অপহরণের মামলা করে তাদের হয়রানি করছে। এই প্রতিবেদন সূত্রেই পুলিশের ভাষ্য পাওয়া যায়। রাজশাহীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, দুইপক্ষের মধ্যে টাকা-পয়সা নিয়ে বিরোধ আছে। এটা নিয়ে আদালতে মামলাও চলমান। জিয়ারুল থানায় মামলা করেছেন যে তাকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। এ মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। 

ফলে রাজশাহীর স্থানীয় এবং মূলধারার সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এটা স্পষ্ট যে, আদালত চত্বরে হেনস্তার শিকার ব্যক্তিটি বিচারপতি নন। সঙ্গত কারণে, এই তথ্যযুক্ত পোস্টগুলোকে মিথ্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হলো। 

Claim:
সম্প্রতি ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে যে, ‘সমন্বয়ক মবের দল’ রাজশাহী জেলা কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে কর্তব্যরত অবস্থায় টেনে হিঁচড়ে বাইরে বের করে হেনস্তা করছে।

Claimed By:
facebook users

Rating:
False

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে

এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে
ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh