সম্প্রতি “এবার কাগজপত্র ছাড়াই অল্প সুদে ২০ লক্ষ টাকা ঋণ দিচ্ছে ডাচ বাংলা ব্যাংক” শিরোনামযুক্ত একটি খবর প্রকাশ করেছে কয়েকটি অনলাইন পোর্টাল। মূলত খবরের শিরোনামটি মিথ্যা। এছাড়া খবরটির বিস্তারিত অংশেও বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে ঋণটির কথা খবরে বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া তা গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাই খবরটি মিথ্যা।
২৮ ও ২৯ আগস্ট ২০২১ তারিখে উক্ত ভাইরাল খবরটি বেশকিছু ফেসবুক পেজ এবং গ্রুপে শেয়ার হয়েছে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে,এখানে,এখানে,এখানে এবং এখানে।
“এবার কাগজপত্র ছাড়াই অল্প সুদে ২০ লক্ষ টাকা ঋণ দিচ্ছে ডাচ বাংলা ব্যাংক” শিরোনামযুক্ত খবরটির বিস্তারিত অংশে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কিছু ভুল তথ্য পরিবেশিত হয়েছে। খবরটি বলছে, “ব্যক্তিগত এই ঋণ প্যাকেজে মাত্র ১ শতাংশ সুদে ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন গ্রাহকরা।“ এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ডাচ বাংলা ব্যাংকের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, পার্সোনাল লোনের শর্তসমূহে উল্লেখ আছে, ৭.৫% হার সুদে এই লোন পাওয়া যাবে। অন্য যেকোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টেক ওভারের ক্ষেত্রে এই হার ৭%।
খবরটিতে আরও উল্লেখ রয়েছে, “এছাড়া মাসিক আয় কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা থাকতে হবে এই ঋণ নিতে হলে।“ অথচ ডাচ বাংলা ব্যাংকের ওয়েবসাইটে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে যে, এই আয়ের অংক পেশাজীবী ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। পার্সোনাল লোনের ক্ষেত্রে আবেদনকারী যদি পেশাদার কিংবা জমির মালিক হন তবে তার নূন্যতম মাসিক আয় হতে হবে ৩০,০০০ হাজার টাকা। ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে এই নূন্যতম মাসিক আয় ৫০,০০০ হাজার টাকা নির্ধারিত হয়েছে।
এছাড়াও যে তথ্যগুলো উল্লেখ করা হয়নি খবরগুলোতে, সেটি হচ্ছে আবেদনকারীর চাকরি/ব্যবসায়ের বয়স। বেতনভোগী চাকরিজীবীদের জন্য ১-২ বছর, সরকারি, আধা-সরকারী এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার জন্য ৬ মাস, ব্যবসায়ীদের জন্য ২ বছর এবং পেশাজীবীদের জন্য ৬ মাস।
খবরটির শিরোনামে কাগজপত্র ছাড়াই অল্প সুদে ২০ লক্ষ টাকা ঋণের কথা বলা হলেও, খবরটির শেষে উল্লেখ রয়েছে ডাচবাংলা ব্যাংকের এই ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন হবে তার বিবরণ। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকায় এই অংশে খবরটি বলছে, “ভোটার আইডি কার্ড/ড্রাইভিং লাইসেন্স এর কপি/লেটার অফ ইন্ট্রোডাকশন (চাকরীজিবীদের জন্য) বৈধ পাসপোর্ট, বেতন হিসাবের বিবরনী, বিজনেস কার্ড/অফিস আইডি, ট্যাক্স সার্টিফিকেট, সর্বশেষ ১ বছরের ব্যাংক হিসাব, টিএন্ডটি/মোবাইল ফোন/অন্যান্য ইউটিলিটি বিলের কপি এবং ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।“
অথচ বাকি যেসকল প্রয়োজনীয় নথির কথা উল্লেখ নেই খবরটিতে, সেগুলো হল, আবেদনকারীর সাক্ষরিত যথাযথভাবে সম্পন্ন আবেদনপত্র, বেতনভোগী ব্যক্তিদের জন্য বেতন বৃদ্ধির বিবরণী, নিয়োগপত্রের অনুলিপি, নিয়োগকর্তা কর্তৃক জারি করা অন্য কোন সনদ। ব্যবসায়ীদের জন্য ট্রেড লাইসেন্স কপি, স্মারকলিপির কপি এবং ব্যবসায়িক সমিতির নিবন্ধনের কাগজ, ইত্যাদি এবংজমির মালিকদের জন্য বাড়ি/সম্পত্তির ভাড়া বা চুক্তির দলিল।
উপরোক্ত তথ্যপ্রমাণ থেকে বিষয়টি স্পষ্ট যে, কাগজপত্র ছাড়া ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে ব্যক্তিগত ঋণ গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া ব্যক্তিগত ঋণ বাদে অন্যান্য ঋণের ক্ষেত্রেও কি কি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগবে তা ঋণের শর্তে উল্লেখ রয়েছে ডাচ বাংলা ব্যাংকের ওয়েবসাইটে। মিথ্যা শিরোনাম, অন্যান্য ভুল তথ্য এবং সঠিক তথ্যের অনুপস্থিতিজনিত কারণে ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খবরটি মিথ্যা।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?