‘’হাতে আছে অল্প কিছুদিন, ধেয়ে আসছে মহাপ্লাবন ,ধ্বংসের মুখে পৃথিবী, দাবি গবেষকদের’’ –শিরোনামে একটি খবর ভাইরাল হয়েছে। এই খবরে বলা হচ্ছে , Phaeton 3200 নামের একটি গ্রহাণু নাকি শীঘ্রই পৃথিবীকে আঘাত করতে যাচ্ছে । তবে ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে এসব দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে, এই Phaeton 3200 গ্রহাণু পৃথিবীকে অতিক্রম করে গিয়েছে ২০১৭ সালে। তখন সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। সেই পুরনো খবরই এখন ছড়িয়ে পড়ছে সাম্প্রতিক খবর হিসেবে।
এসব খবরে বলা হয় , জ্যোতিষীরা নয় জ্যোতির্বিজ্ঞানীরাই আশঙ্কা করছেন। পৃথিবী কি এবার ধ্বংসের মুখে। তার কারণ পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে বিশালাকার পাথরখণ্ড। আজ পৃথিবীর সবথেকে কাছে ফাইথন ৩২০০। এই গ্রহাণুটি ৫ কিমি চওড়া। পৃথিবী থেকে ১ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে এই গ্রহাণু। এই গ্রহাণু ধেয়ে এলে পৃথিবী ধ্বংস হবে কি না, তা নিয়েই গবেষণায় ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সের গবেষকরা। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরে জ্যোর্তিবিজ্ঞানী ও স্কাই ওয়াচাররা টেলিস্কোপ নিয়ে
প্রস্তুত। আলোক দূষণ থেকে বেরিয়ে অপেক্ষাকৃত কম আলোর জায়গায় বেশি ভাল দেখা যাবে ফাইথন। তাই সেরকম জায়গাতেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন জ্যোর্তিবিজ্ঞানী ও স্কাই ওয়াচাররা। আজ সরাসরি পৃথিবীর কক্ষপথে চলে আসবে ‘ফাইথন-৩২০০ ৷ ঘণ্টায় একশোটিরও বেশি পাথর পড়বে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ইতিমধ্যেই ফাইটনকে সম্ভাব্য বিপজ্জনক গ্রহাণু বলে চিহ্নিত করেছে নাসা।
ফাইথন ৩২০০ – পৃথিবীর ১৬ ভাগের ১ ভাগ মাপের এই পাথর- ব্যস প্রায় ৫ কিলোমিটার- পৃথিবী ও চাঁদের দূরত্বের ২৫ গুণ দূরে রয়েছে ফাইথন প্রায় ২৩ বছর আগে বৃহস্পতির উপর আছড়ে পড়ে একটি গ্রহাণু। পৃথিবীর সঙ্গে সেই ধরনের ঘটনা হলে তা খুবই ভয়ানক হবে বলে আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের।
পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের টানে ফাইথন-৩২০০-র কক্ষপথ পরিবর্তন হচ্ছে। ইতিমধ্যেই কয়েক হাজার কোটি কিলোমিটার এগিয়ে এসেছে গ্রহাণুটি। এ যাত্রায় বাঁচলেও বিপজ্জনক এই গ্রহাণুটি ফের ৭৫ বছর পর পৃথিবীর কাছাকাছি আসবে। তাই আশঙ্কা শুধু বর্তমানের নয়, ভবিষ্যতের জন্যও তোলা রইল।
দেখা যাচ্ছে, এই খবরে মহাপ্লাবণ সম্পর্কে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। কেবলমাত্র শিরোনামেই ‘ধেয়ে আসছে মহাপ্লাবন’ কথাটি বলা হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক
অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, Phaeton 3200 নামের একটি গ্রহাণু আমাদের সৌরজগতে রয়েছে। গ্রহাণুটি 1983 TB নামেও পরিচিত । এটি ২০০৭, ২০১০ এবং ২০১৭ সালে এটি পৃথিবী থেকে পর্যবেক্ষনযোগ্য দূরত্বে চলে এসেছিল। ২০১৭ সালের ১৬ই ডিসেম্বর এটি পৃথিবী থেকে ২৬ লুনার ডিসটান্স দূর দিয়ে ( ১ কোটি কিলোমিটার ) অতিক্রম করেছিল। ২০৫০ সালে এটি যখন আবার পৃথিবীর নিকটবর্তী হবে, তখন এর দূরত্ব হবে ৩২ লুনার ডিসটান্স (১ কোটি ২৩ লক্ষ কিলোমিটার)
অর্থাৎ, কক্ষপথ পরিবর্তন না করে থাকলে এটি পৃথিবীর জন্য বিপজ্জনক নয়। এমনকি নাসার সেন্টার ফর নেয়ার আর্থ অবজেক্ট স্টাডিজ এই ‘1983 TB’ গ্রহাণুকে ঝুকিপূর্ণ তালিকায় রাখেনি।
২০১৭ সালে Phaeton 3200 পৃথিবীর কাছ দিয়ে অতিক্রমনের সময়েও সংবাদমাধ্যমে অতিরঞ্জিত খবর প্রকাশিত হয়েছিল। তবে পৃথিবীর কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
Phaeton 3200 নামের কোনো বিপজ্জনক গ্রহাণু পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে না। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের পুরনো একটি খবর বিভ্রান্তিকরভাবে এখন ছড়িয়ে পরছে, যা থেকে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে। সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ এই খবরকে ‘মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?