সম্প্রতি ১৫০ কেজি ওজনের গলদা চিংড়ি দাবিতে ফেসবুকে একটি ছবি ভাইরাল হতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে এই দাবির পক্ষে নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, ভাইরাল ছবিটিও বাস্তব নয়, এটি মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে তৈরি করা। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে “মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে।
১৫০ কেজি ওজনের গলদা চিংড়ির বাস্তবে ধরা পড়েছিল কি না এ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রাসঙ্গিক কিছু কি- ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে কোনো নির্ভরযোগ্য মাধ্যম থেকে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, ২০১২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রয়টার্সে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল “গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুযায়ী বিশ্বের সর্বোচ্চ ওজনের গলদা চিংড়ি হচ্ছে আমেরিকান বা উত্তর আটলান্টিক গলদা চিংড়ি (Homarus americanus)। যার ওজন ছিল ৪৪-পাউন্ড (২০-কেজি)। ১৯৭৭ সালে এটি ধরা পড়েছিল”। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের ওয়েবসাইটেও এই একই তথ্য পাওয়া যায়।
ছবি শেয়ারিং সাইট Shutterstock থেকে পাওয়া আমেরিকান বা উত্তর আটলান্টিক লবস্টারের একটি ছবি নিচে দেয়া হলঃ
তবে, ১৯৭৭ সালের পরে বিশ্বের সর্বোচ্চ ওজনের গলদা চিংড়ি হিসেবে আমেরিকান বা উত্তর আটলান্টিক লবস্টারের রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছিল কি না এ সম্পর্কে কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, ভাইরাল ছবিটির সাহায্যে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধান করা হলে Next Catch নামের একটি ইন্সটাগ্রাম আইডি থেকে ছবিটির অন্য একটি ভিডিও সংস্করণ খুঁজে পাওয়া যায়। সেই ভিডিওতে বৃষ্টি পড়তে দেখা যাচ্ছে এবং বাকি সবকিছু স্থির দেখাচ্ছে।
তাছাড়া, ছবিটি খেয়াল করে দেখলে আরও কিছু অসঙ্গতি খুঁজে পাওয়া যাবে। যেমন, জেলেদের আঙ্গুলগুলো অস্বাভাবিক, বাম দিকের ব্যক্তিটি পানির উপর দাঁড়িয়ে আছে এবং সমুদ্রের দিগন্তরেখাটি সমান্তরাল নয় বরং, বক্র দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া ভাইরাল হওয়া গলদা চিংড়ির আকৃতিও অনেকটা অস্বাভাবিক। যেমনঃ পিঠের মাঝামাঝি সোজা ও খাড়া দুইটি শুঁড় দেখা যাচ্ছে। ডানদিকের অঙ্গের সাথে বাম দিকের মিল নেই। বামদিকের কিছু অংশ ঝাপসা দেখা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ১৫০ কেজি ওজনের গলদা চিংড়ি দাবি করা এই ছবিটি নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশ করা কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে এবং এখানে।
যেহেতু ভাইরাল হওয়া গলদা চিংড়ির ছবিটি আসল নয় এবং ১৫০ কেজি ওজনের গলদা চিংড়ি ধরা পড়া সংক্রান্ত কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্যও খুঁজে পাওয়া যায়নি, সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে “মিথ্যা” সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।