আন্দোলনরত শিক্ষার্থীর প্ল্যাকার্ডের ছবি বিকৃত করে প্রচার

74
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীর প্ল্যাকার্ডের ছবি বিকৃত করে প্রচার
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীর প্ল্যাকার্ডের ছবি বিকৃত করে প্রচার

Published on: [post_published]

ফেসবুকে যা ছড়াচ্ছেঃ  ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার’ লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে একজন  নারী শিক্ষার্থীর সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছবির সাথে স্টেডিয়ামের গ্যালারীতে থাকা একজন নারী ভক্তের শহীদ আফ্রিদিকে নিয়ে একটি প্ল্যাকার্ডের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। ক্যাপশনে এই দুই ছবিকে মিলিয়ে একটি ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে যে, কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থী নিজেকে “রাজাকার” বলছে।

আসল ঘটনাঃ ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার’ লেখা প্ল্যাকার্ডের ছবিটি বিকৃত। মূল প্লাকার্ডে লেখা ছিল একে তো প্রশ্নফাঁস তার উপরে কোটার বাঁশ’। কমপক্ষে ১০ জুলাই থেকে ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়।  আর  “তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার …”  স্লোগানটি ১৪ জুলাই  গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দিতে দেখা গেছে সামাজিক মাধ্যমে।  অর্থাৎ স্লোগানটির সূত্রপাত হওয়ার আগের ছবি এটা।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোষ্ট দেখুন এখানে এবং এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানঃ 

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীর ছবিটি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য শুরুতেই এটা ব্যবহার করে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে কালের কণ্ঠ-এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ১০ জুলাই, ২০২৪ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আলোচিত ছবিটির পূর্ব সংস্করণের একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল “একে তো প্রশ্নফাঁস তার উপরে কোটার বাঁশ”। এই ছবিটি ধারণ করেছিলেন  মঞ্জুরুল করিম।

২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশ সরকার সে বছর ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করেছিল। এই পরিপত্রটি ৫ জুন ২০২৪ এ বাংলাদেশের হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করে। এই ঘোষণার প্রেক্ষিতে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনে নামে। পরিপত্রটি বাতিল হওয়ার কিছুদিন আগেই বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) প্রশ্ন ফাঁসের তথ্য সামনে আসে।  ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন ছিলেন এই আলোচিত শিক্ষার্থী।

অন্যদিকে, ১৪ জুলাই ২০২৪ এ গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেছিলেন যে, কোটার বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন আছে। সংবিধান অনুযায়ী এ ব্যাপারে তাঁর কিছু করার নেই। পাশাপাশি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রতি যে বিরোধিতা করেছিলো তার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেছিলেন “মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা (কোটা) পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা (কোটা) পাবে?” এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার’ স্লোগানটির সূত্রপাত। কিন্তু আলোচিত ছবিটির পূর্ব সংস্করণের ছবিটি কমপক্ষে ১১ জুলাই ২০২৪ থেকে মূলধারার সংবাদমাধ্যম দেখতে পাওয়া যায়।

যেহেতু আন্দোলনরত এই শিক্ষার্থীর হাতে থাকা  প্ল্যাকার্ডে ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার’ লেখা ছিল না, তাই ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায় আলোচিত ছবিটি বিকৃত।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.