ফেসবুকে একটি ভাইরাল পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, আমেরিকা এবং ইইউ প্রতিনিধিদের সাথে কয়েক দফা আলোচনার পর শর্তসাপেক্ষে পদত্যাগে রাজি হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই তথ্যের সূত্র হিসেবে বিবিসি বাংলার নাম নেয়া হয়েছে। কিন্তু, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে বিবিসি বাংলা বা অন্য কোনো মাধ্যম থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ করতে রাজি হওয়া সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে, ফেসবুকে পোষ্টগুলো ভাইরাল হওয়ার পরেও বিভিন্ন সমাবেশে বিএনপির তরফ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি জানানো হয়। শেখ হাসিনা যদি সত্যিই প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করতে রাজি হতেন এবং তার রাজি হওয়ার পড়েও বিএনপির পক্ষ থেকে তার পদত্যাগের দাবি জানানো নিতান্তই অযৌক্তিক। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
বিবিসি বাংলায় শেখ “আমেরিকা এবং ইইউ প্রতিনিধিদের সাথে কয়েক দফা আলোচনার পর শর্তসাপেক্ষে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করতে রাজি হয়েছেন” সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে কি না এ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে বিবিসি বাংলা কিংবা অন্য অন্য কোনো মাধ্যম থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, মূলধারার কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী আমেরিকার প্রতিনিধিদের সাথে শেখ হাসিনার বৈঠক হলেও, ইইউ প্রতিনিধিদের সাথে তা হয়নি। ইইউ প্রতিনিধিরা আওয়ামীলীগের সাথে বৈঠক করেছিলেন। দলটির পক্ষে সেখানে অংশ নিয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের, ফারুক খান, ড. হাছান মাহমুদ, শাম্মী আহমেদ, মোহাম্মদ এ আরাফাত, তারানা হালিম, মোহাম্মদ জমির, ড. সেলিম মাহমুদ ও ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
গত ১৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে বৈঠক করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনান্ড লু। বৈঠক শেষে উজরা জেয়া জানান, তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা, প্রতিশোধ বা ভয়ভীতি ছাড়াই সাংবাদিকদের রিপোর্ট করার ক্ষমতা, মানব পাচার প্রতিরোধে সহযোগিতা, মত প্রকাশ ও সংগঠনের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি সম্মান বৃদ্ধিতে সুশীল সমাজ যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। এবং তিনি বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অন্য মন্ত্রীদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন।
তাছাড়া, এই বৈঠক নিয়ে উজরা জেয়া একটি টুইট করেছিলেন। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি বাংলাদেশের উদারতার প্রশংসা করে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের জনগণের একটি সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা করে যুক্তরাষ্ট্র।
Engaging & productive convo with Prime Minister Sheikh Hasina on 50+ years of #USBDPartnership. 🇺🇸 appreciates 🇧🇩’s generosity towards Rohingya refugees & looks forward to free & fair elections anchoring a thriving democratic future for the Bangladeshi people. pic.twitter.com/awNk1p2QZu
— Under Secretary Uzra Zeya (@UnderSecStateJ) July 13, 2023
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ সংক্রান্ত কোনো ইঙ্গিত সেখানে পাওয়া যায়নি।
গত ১৫ জুলাই বনানীর শেরাটন হোটেলে আওয়ামীলীগের সাথে ইইউ প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়। বৈঠকে অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ব্যাপারে আলোচনা হয়। কিন্তু সেখানেও শেখ হাসিনার পদত্যাগ সংক্রান্ত কোনো আলোচনা হয়েছিল কি না এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ সংক্রান্ত কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে এবং এখানে।
অন্যদিকে ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলো কমপক্ষে ১৩ জুলাই থেকে ফেসবুকে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এর পরও বিভিন্ন সমাবেশে বিএনপির তরফ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি জানানো হয়। গত ১৭ জুলাই খুলনায় বিএনিপির এক সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন,
‘দফা এক-দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ। আর তা না হলে ফয়সালা হবে রাজপথে। রাজপথে ফয়সালা করে আমরা নতুন বাংলাদেশ গঠন করব।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যেহেতু শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি জানিয়েয়েছেন, এর মানে দাঁড়ায় শেখ হাসিনা এখনও পদত্যাগ করার কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিলে মির্জা ফখরুল সে ব্যাপারে অবগত থাকতেন।
উল্লেখ্য, পূর্বেও শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। ফ্যাক্টওয়াচের এ সংক্রান্ত একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন দেখুন এখানে।
অতএব, সবকিছু বিবেচনা করে ভিত্তিহীন এই দাবিকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” হিসেবে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।