আমেরিকায় একটি হোটেলে বক্তব্যের সময় জনগণের “টোপর” [তোপের] মুখে পড়েছেন শেখ হাসিনা। যে কারণে বক্তব্য না দিয়েই চলে চলে গেছেন তিনি – এমন দাবিতে ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটিতে যে ধরণের শ্লোগানের শব্দ শোনা গেছে, তা শুনেও মনে হয়েছে যে, সেখানে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ হাসিনার বিরূদ্ধে বলা হয়েছে। যদিও ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান করে দেখেছে, ভাইরাল ভিডিওটির মধ্যে সেসব শ্লোগান শোনা যাচ্ছে তা মূলত সম্পাদনা করে বসানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফলভাবে বক্তব্য দিয়েছিলেন এবং সেখানে যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি তার প্রমাণ মিলেছে। যে কারণে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া উক্ত দাবির ভিডিওগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ ‘বিকৃত’ সাব্যস্ত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফেসবুকে যেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে তা মনোযোগ দিয়ে দেখা হয়। ৩৫ সেকেন্ডের ভিডিওটির শুরুতে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, “উনিশতম ভাষণ দিচ্ছি, বিশতম ভাষণ দিতে আসছি খোদা হাফেজ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু” এ বলে শেখ হাসিনা হাসিমুখে মঞ্চ ত্যাগ করেন। এ সময়ে ভিডিওটি থেকে ভুয়া –ভুয়া, ভোট চোর-ভোট চোর এ জাতীয় শ্লোগান ভেসে আসতে থাকে। খুব খেয়াল করে দেখা যায়, ৩৫ সেকেন্ডের ভিডিওতে যা দেখা যাচ্ছে তার সাথে এসব শ্লোগানের কোনো মিল নেই। অর্থাৎ ভিডিওটির মাঝে শ্লোগানগুলো পরবর্তীতে সম্পাদনা করে বসানো হয়েছে।
এ পর্যায়ে মূল ঘটনা জানতে বিভিন্ন কী-ওয়ার্ডের সাহায্যে সার্চ করা হয়। সেখানে পাওয়া যায়, ২২ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) বিকেল ৫টায় নিউইয়র্কের ম্যারিয়ট মার্কি হোটেল বলরুমে প্রবাসী নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে বক্তব্য প্রদান করেন। বিস্তারিত দেখুন এখানে। নিউইয়র্কের ম্যারিয়ট মার্কি হোটেল বলরুমে শেখ হাসিনা যেই বক্তব্যটি দিয়েছিলেন তাও পাওয়া যায় ইউটিউবে। “নিউ ইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নাগরিক সংবর্ধনা” শিরোনামে TBN24 নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলে ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছে। ভিডিওটি দেখুন এখানে।
উল্লেখ্য, এই ভিডিওটি থেকে ভাইরাল ৩৫ সেকেন্ডের ভিডিওটি বানানো হয়েছে। এখানে লক্ষণীয় যে, ১ ঘণ্টা ৯ মিনিট ৫২ সেকেন্ড অংশে প্রধানমন্ত্রী বলছেন, “উনিশতম ভাষণ দিচ্ছি, বিশতম ভাষণ দিতে আসছি খোদা হাফেজ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু”। এ সময়ে নেতাকর্মীরা দলীয় প্রধানের উদ্দেশ্যে তুমুল করতালি ও বিভিন্ন শ্লোগান দিচ্ছেন। অর্থাৎ, মূল ভিডিওর ৩৫ সেকেন্ড অংশ ঠিক এখান থেকে নেয়া হয়েছে। যার মধ্যে পরবর্তীতে সম্পাদনা করে ভিন্ন শ্লোগান বসানো হয়েছে। সেটিই পরে “আমেরিকায় একটি হোটেলে বক্তব্যের সময় জনগণের তোপের মুখে পড়েছেন শেখ হাসিনা” শিরোনামে ভাইরাল করা হয়েছে।
সুতরাং, যথাসম্ভব তথ্য-প্রমাণের আলোকে ভাইরাল হওয়া দাবিগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ “বিকৃত” বলে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।