সম্প্রতি এই মর্মে একটি সংবাদ ভাইরাল হয়েছে যে প্রবাসীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিটিং বয়কট করেছেন। উক্ত দাবিটির স্বপক্ষে ১ মিনিট ৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভিডিওটি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের আয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে একটি নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান থেকে নেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, গণমাধ্যমে নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটির ১ ঘণ্টা ৭ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের লাইভ সম্প্রচার করা হয়। লাইভ সম্প্রচারটিতে এমন কিছু দেখা যায়নি, যা দেখে মনে হতে পারে নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান থেকে কেউ চলে গেছেন বা বয়কট করছেন। বরং সুস্পষ্টভাবে দেখা গেছে, সেখানে উপস্থিত নেতাকর্মীরা নিজ দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কাছে পেয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে শ্লোগান দিচ্ছেন।
১ মিনিট ৫ সেকেন্ডের ভাইরাল ভিডিওটি একাধিকবার দেখা হয়। তবে সেটি দেখে এমন কিছু বোঝার উপায় নেই যে, সেখানে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটেছে কিনা। মঞ্চে উপস্থিত অতিথিদের একজন বলতে শোনা গেছে, আপনারা বসুন আপনাদের সহযোগিতায় আজকের অনুষ্ঠানটি সফল হবে। কিছুক্ষণ পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন আপনারা দয়া করে বসেন। এসময় তাঁর মুখে হাসি দেখা গেছে। উল্লেখ্য, ভাইরাল ভিডিওটি যে সময়ের, তার ঠিক আগ মুহূর্তের একটি ভিডিও অনুসন্ধান করে পাওয়া গেছে। সেখানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন তাঁর জন্য নিধারিত মঞ্চের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন উচ্ছ্বসিত নেতাকর্মীরা তাঁর নামে তুমুল বেগে শ্লোগান দিচ্ছেন। ভিডিওটি দেখুন এখানে।
অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী যখন বক্তব্য রাখবেন তখনও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা তাঁকে উদ্দেশ্য করে শ্লোগান দিতে থাকেন। যে কারণে প্রধানমন্ত্রী হাসি মুখে নিজ নেতাকর্মীদের বলছেন এবার আপনারা বসুন। ভাইরাল ভিডিওতে এই অংশটুকুই দেখা গেছে।
এই ভিডিওটি দেখিয়েই ভাইরাল পোস্টটিতে দাবি করা হয়েছে, প্রবাসীরা প্রধানমন্ত্রীর মিটিং বয়কট করেছেন। কিন্তু আসল ঘটনা হল, যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে নাগরিক সংবর্ধনাটির আয়োজন করেছিল। অথচ নাগরিক সংবর্ধনার পরিবর্তে বলা হয়েছে, প্রবাসীরা প্রধানমন্ত্রীর মিটিং বর্জন করেছেন! নিশ্চিতভাবেই দাবিটি ভিত্তিহীন। প্রধানমন্ত্রীর সেদিনের বক্তব্যটি বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। বক্তব্যটি দেখুন এখানে।
গণমাধ্যমের তথ্যমতে, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটিকে ঘিরে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো ব্যস্ত সময় পার করেছে এবং সফলভাবে সংবর্ধনাটি আয়োজিত হয়েছে। এ বিষয়ে কালের কণ্ঠ পত্রিকার একটি প্রতিবেদন দেখুন এখানে।
অনুসন্ধানে পাওয়া ভিডিও ও গণমাধ্যমের লাইভ সম্প্রচার থেকে বিষয়টি প্রমাণ করে নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি বয়কটের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাছাড়া এমন দাবিকৃত পোস্টগুলো থেকে মিটিং বয়কটের বিষয়টির সপক্ষে নূন্যতম কোনো প্রমাণ দেয়া হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লন্ডন সফরকে কেন্দ্র করে অতীতে যুক্তরাজ্য বিএনপি ও যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। যার বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ সামাজিক মাধ্যমে পাওয়া যায়। তবে বর্তমান প্রেক্ষিতে এরকম কিছু ঘটেনি। মিটিং বর্জনের স্বপক্ষে যথাযোগ্য কোনো প্রমাণ কোথাও প্রকাশিত হতে দেখা যায়নি।
সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ প্রধানমন্ত্রীর মিটিং বয়কটের দাবিগুলোকে “মিথ্যা” সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?