একটি শিশুতোষ ছড়ার একটি আবৃত্তিকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে দাবি করছেন, বাংলাদেশের নতুন শিক্ষাক্রমের অধীনে শিক্ষক প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে এই শিশুতোষ ছড়াটির আবৃত্তি শিক্ষকদের শেখানো হচ্ছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, এটি বাংলাদেশ নয়, বরং ভারতের আসামের একটি স্কুলের দৃশ্য, যার সাথে বাংলাদেশের নতুন শিক্ষাক্রমের কোনো সম্পর্ক নেই। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ এই ভিডিওর দাবিকে বিভ্রান্তিকর সাব্যস্ত করছে।
এসব ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা হচ্ছে, বাহ বাহ কী চমৎকার 😜👉 নতুন কারিকুলাম প্রণয়ন এর মাধ্যমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে
১ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে দেখা যায়, মধ্যবয়স্ক এক শিক্ষক বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে হাত, শরীর ও ছাতার সাহায্যে ছাতাওয়ালা এক সাইকেল আরোহীর অভিনয় করছেন, সেই সাথে একটা ছড়া আবৃত্তি করছেন। ক্লাসে উপস্থিত অন্যরাও সেই কবিতা আবৃত্তি করছেন এবং অভিনয়ে যথাসাধ্য অনুকরণ করছেন।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান
১ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের উক্ত ভিডিওটি জনৈক রতন লাল সাহার ফেসবুক একাউন্টে গত ১৭ই নভেম্বর আপলোড করা হয়েছিল। এই ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা হয়েছিল, FLN Training on Poem Poster for oral Language Development। রতন লাল সাহার আইডি থেকে জানা যাচ্ছে, তিনি আসামের ধুবড়ি জেলায় বসবাসরত একজন শিক্ষক। এছাড়া ,আপলোডকৃত ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ক্লাসরুমের পেছনের ব্যানারে ‘শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচী, ধবড়ি, আসাম’ ইত্যাদি কথাগুলো রয়েছে।
অর্থাৎ, এটা পরিষ্কার যেভিডিওটি বাংলাদেশের কোনো ঘটনা নয় , বরং ভারতের আসাম রাজ্যের ঘটনা।
ধুবরি মিউনিসিপাল হাই স্কুলের শিক্ষক মুকুট শর্মার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভিডিওটি দেখে অনলাইন সংবাদমাধ্যম জাগোনিউজকে জানান, কবিতাটি আসামের বিভিন্ন স্কুলে পড়ানো হয়। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ কবিতাটি আসামে ‘ভঙ্গিমা গীতি’ হিসেবে পরিচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে স্কুলে এটি অভিনয় করে পড়ানো হয়। বিভিন্ন যানবাহন সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের পরিচিত করে তুলতে এটা প্রাইমারি লেভেলে শেখানো হয়। এছাড়া প্রশিক্ষণের যে ভিডিওটা ভাইরাল হয়েছে, সেটা অনেক পুরোনো।
ভাইরাল ভিডিওতে থাকা প্রশিক্ষক অর্থাৎ রতন লাল সাহা রিউমর স্ক্যানার কে জানান, আসামের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে জয়ফুল লার্নিং নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। শিক্ষার্থীদের পড়ানোর পাশাপাশি বর্তমানে শিক্ষকদেরও এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। আলোচ্য ভিডিওটি তেমনই একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির ভিডিও।
এছাড়া, ভিডিওর ছড়াটি বাংলা ভাষার নয়, বরং অহমিয়া ভাষায় রচিত। প্রশিক্ষকের কথাতেই সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাংলাদেশে আগামী বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের কয়েকটি শ্রেণিতে নতুন একটি কারিকুলাম বা শিক্ষাক্রম চালু করতে যাচ্ছে সরকার। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচি ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে, যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা আলোচনা-সমালোচনা হতে দেখা যাচ্ছে।
চলতি বছর প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আগামী বছর বাস্তবায়ন করা হবে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে। এরপর ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে, ২০২৬ সালে একাদশ শ্রেণিতে এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে ধাপে ধাপে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হওয়ার কথা রয়েছে।
তবে এই নতুন শিক্ষাক্রমের প্রশিক্ষণ এর সাথে আলোচ্য ভিডিওর কোনো সম্পর্ক নেই। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এমন দাবিযুক্ত পোস্টগুলোকে ‘বিভ্রান্তিকর’ সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।