বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত পুলিশের সংখ্যা নিয়ে অপপ্রচার  

53
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত পুলিশের সংখ্যা নিয়ে অপপ্রচার  
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত পুলিশের সংখ্যা নিয়ে অপপ্রচার  

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে এই মর্মে একটি তথ্য প্রচার হয়েছে যে, ছাত্র আন্দোলনের সময় ৩ হাজার ২০৪ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। যদিও দাবিটি স্বপক্ষে কোনো তথ্য-প্রমাণ প্রকাশ করা হয়নি। অপরদিকে বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে পুলিশের মোট ৪৪ জন সদস্য নিহত হয়েছেন। তাছাড়া নিহত পুলিশ সদস্যদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকায় নিহতদের নাম, পদের নাম, মৃত্যুর তারিখ, সংযুক্ত ইউনিটের নাম ও ঘটনাস্থল উল্লেখ করা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে এবং নিহতদের তালিকা [৪৪ জন] প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, গণঅভ্যুত্থানে নিহত পুলিশ সদস্যদের সংখ্যা সম্পর্কে মিথ্যা এবং ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। পুলিশ বিভাগ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে যে সকল অফিসার বা কনস্টেবল প্রতিবাদ বা সহিংসতার ঘটনায় আহত বা নিহত হয় তাদের তালিকা রক্ষণাবেক্ষণ করে। অর্থাৎ পুলিশ বিভাগ থেকে সরকারের কাছে তথ্য-প্রমাণসহ ৪৪ জন সদস্য নিহত হবার তালিকা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং আন্দোলন চলাকালে ৩ হাজার ২০৪ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে এমন দাবি ভিত্তিহীন।

কিছু পোস্ট দেখুন এখানে এখানে, এখানে এবং এখানে

বিস্তারিত:

১৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে প্রথম আলো থেকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, জুলাই-আগস্টে   ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে পুলিশের মোট ৪৪ জন সদস্য নিহত হবার কথা তখনই পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়। প্রতিবেদনটির শিরোনাম হলো “আন্দোলনের সময় সংঘাতে ৪৪ পুলিশ সদস্য নিহত”। আর বিস্তারিত তথ্য এই যে, পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০ জুলাই থেকে ১৪ আগস্টের মধ্যে এসব পুলিশ সদস্য মারা গেছেন। সবচেয়ে বেশি ২৫ পুলিশ সদস্য মারা গেছেন ৫ আগস্ট। আগের দিন ৪ আগস্ট মারা গেছেন ১৫ জন। এ ছাড়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ জুলাই দুজন, ২১ জুলাই এক ও ১৪ আগস্ট এক পুলিশ সদস্য মারা গেছেন। মূলত পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখা থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর নিহত পুলিশ সদস্যদের সংখ্যার পাশাপাশি সে সময়ে একটি তালিকাও প্রকাশ করেছে। তালিকাটি প্রথম আলোর  প্রতিবেদনের সাথে প্রকাশিত হয়েছে।

তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি ২১ জন মারা গেছেন কনস্টেবল পদমর্যাদার সদস্য। ১১ জন উপপরিদর্শক, ৮ জন সহকারী উপপরিদর্শক, ৩ জন পরিদর্শক ও একজন নায়েক রয়েছেন। একক থানা হিসেবে সবচেয়ে বেশি ১৫ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায়।

বলাই বাহুল্য, ১৫/ ১৬ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে ৩ হাজার পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে এমন দাবির কিছু ফেসবুকে পোস্ট পাওয়া যায়। আবার এমন দাবির বিপরীতে ২৫ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। বিবৃতিটি হলো, “আমরা লক্ষ্য করেছি যে কিছু নিউজ আউটলেট এবং কিছু ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে হওয়া গণঅভ্যুত্থানে নিহত পুলিশ সদস্যদের সংখ্যা সম্পর্কে মিথ্যা এবং ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানে নিহত পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রকৃত তালিকা এখানে দেওয়া হলো। পুলিশ সদর দপ্তর এই তালিকা প্রকাশ করেছে। পুলিশ বিভাগ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে যেসকল অফিসার বা কনস্টেবল প্রতিবাদ বা সহিংসতার ঘটনায় আহত বা নিহত হয় তাদের তালিকা রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। যদি কেউ দাবি করেন, গণঅভ্যুত্থানে এই তালিকার বাইরেও পুলিশ নিহতের ঘটনা ঘটেছে সেক্ষেত্রে প্রমাণ সরবরাহের জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে”। উল্লেখ্য যে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে প্রকাশিত তালিকাটি বিশ্লেষণ করেছে ফ্যাক্টওয়াচ।   

এখানে লক্ষণীয় যে, ২৫ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে প্রকাশিত তালিকা আর ১৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে দৈনিক প্রথম আলো-তে প্রকাশিত তালিকা হুবহু এক। অর্থাৎ আন্দোলন চলাকালে নিহত পুলিশ সদস্যদের সংখ্যা এবং তালিকা আগস্ট মাসেই গণমাধ্যমের কাছে প্রকাশ করেছে পুলিশ বিভাগ। নিহত পুলিশ সদস্যদের সংখ্যার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসাতে সরকারের পক্ষ থেকে তা এ পর্যায়ে আবারও পরিষ্কার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন ৪৪ জন পুলিশ সদস্য এই আন্দোলনে শহিদ হয়েছেন। বিস্তারিত দেখুন এখানে

উল্লেখ্য, একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে এমন দাবিও করা হয়েছে, “যুক্তরাষ্ট্রের টাইম ম্যাগাজিনের দাবি ‘ছাত্র আন্দোলনের সময় ৩ হাজার ২০৪ জন পুলিশকে হত্যা করা হয়েছে”। তবে অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ৩ হাজার ২শত ৪ জন পুলিশ নিহত হয়েছে এমন কোনো প্রতিবেদন বা তথ্য প্রকাশ করেনি যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিন। টাইম ম্যাগাজিনের ওয়েবসাইটে এ জাতীয় কোনো ধরণের তথ্য নেই। এমনকি আন্তর্জাতিক অন্য কোনো গণমাধ্যমেও এবিষয়ে প্রকাশিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

সুতরাং সকল তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এটি প্রতীয়মান হয়েছে যে, আন্দোলন চলাকালে পুলিশের মোট ৪৪ জন সদস্য নিহত হয়েছে তার সপক্ষে পুলিশের সুস্পষ্ট বক্তব্য এবং তালিকা আছে। অথচ ৩ হাজার ২০৪ জন পুলিশ নিহত হয়েছে এমন দাবির সপক্ষে কোনো প্রকার তথ্য-প্রমাণ হাজির নেই।

তাই এমন দাবিকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” সাব্যস্ত করেছে।

ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে

এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh