৪ জুলাই, ২০২১ তারিখে “পুলিশের গালে চড় লাগিয়ে দিল? কে এই সাহসী চাচা। লকডাউনের বিরুদ্ধে আন্দোলন ক্ষেপে উঠেছে জনগণ” এমন শিরোনামে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে একটি ভিডিও তুমুলভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ভিন্ন ভিন্ন সময় ও প্রেক্ষাপটের দুটি ভিডিও একত্র করে বিভিন্ন ফেসবুক পেজ থেকে এই ভিডিওটি শেয়ার করা হয়। ভিডিওদুটির একটিতে দেখা যায় মিছিলের এক পর্যায়ে শ্রমিক এবং পুলিশের মধ্যে বাকবিতণ্ডা; এবং অন্যটিতে পুলিশের ব্যারিকেডের মুখে রিকশা-শ্রমিকদের মিছিল। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, পুরো ভিডিওটির কোথাও পুলিশের গালে চড় দেয়ার মত কোনো ঘটনা ঘটেনি এবং এর মধ্যে একটি ভিডিও চলমান লকডাউনের সাথে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়। ফ্যাক্টওয়াচের বিবেচনায় এই ভিডিও বিভ্রান্তিকর এবং অসত্য।
“সত্যের সন্ধানে” নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে আজ ৪ জুলাই, ২০২১ “পুলিশের গালে চড় লাগিয়ে দিল? কে এই সাহসী চাচা। লকডাউনের বিরুদ্ধে আন্দোলন ক্ষেপে উঠেছে জনগণ।” এমন শিরোনামে একটি ভিডিওটি প্রকাশ হয়। যে ভিডিওটি ১৫ লাখেরও বেশি মানুষ দেখে এবং প্রায় দশ হাজার মানুষ শেয়ার করে। এছাড়াও ‘Durba Tv’, ‘Daily’ এবং “Daily Live 24” এমন অনেক ফেসবুক পেজ এবং অনেকগুলো ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে এই একই ভিডিও প্রকাশ করা হয়।
“সত্যের সন্ধানে” পেজ থেকে প্রকাশিত ১২ মিনিট ৪১ সেকেন্ডের ভাইরাল ভিডিওটিতে মূলত আলাদা দুটি ভিডিও এডিট করে বসানো হয়েছে। ভিডিওটির প্রথম অংশে দেখা যায় শ্রমিকদের একটি মিছিলের সাথে পুলিশের কথোপকথন। পুলিশ মিছিলটিকে সামনে এগোতে না দিলে বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এরপর দেখতে পাওয়া যায় শ্রমিকদের পক্ষের কয়েকজন পুলিশের সাথে কথা বলে সবাইকে পিছনে সরে যেতে বলে। এর মধ্যে একজন বয়ষ্ক মানুষকে দেখা যায়। মূলত এই বয়ষ্ক লোকটিই শিরোনামে উল্লেখিত ‘সাহসী চাচা’। এছাড়াও এই ভিডিওর সাথে অন্য একটি ভিডিও জুড়ে দেয়া হয়। পরের ভিডিওটি আরো কিছুদিন আগের। রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের একটি প্রতিবাদ মিছিল যা পরবর্তীতে পুলিশের ব্যারিকেডের সামনে এসে বাধাপ্রাপ্ত হয় – দ্বিতীয় অংশটি সেখান থেকে নেয়া।
ফ্যাক্টচেক
১২ মিনিটেরও বেশি দীর্ঘ এবং এডিট করে বানানো এই ভিডিওটির কোথাও পুলিশকে চড় দেয়ার মত কোনো ঘটনা নেই। শিরোনামে ‘সাহসী চাচা’ হিসেবে যে লোকটিকে সম্বোধন করা হয় এবং দাবি করা হয় যে এই লোকটি পুলিশকে চড় দিয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। বয়ষ্ক ওই লোকটিকে পুরো ভিডিওর কোথাও পুলিশের গায়ে হাত তুলতে দেখা যায়নি। বরং দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করেছিলেন তিনি।
দ্বিতীয়ত, এই ভিডিওটির আরেকটি বড় অসংগতি হচ্ছে এইখানে দুইটি পৃথক ভিডিওকে এডিট করে যুক্ত করা হয়েছে। শিরোনামে দাবি করা হচ্ছে পুরো ভিডিওটি লকডাউনের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের বিক্ষোভের। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায় অন্য ভিডিওটি মূলত কিছুদিন আগের অন্য একটি আন্দোলনের যার বিষয়বস্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন। ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের সরকারি নির্দেশের প্রতিবাদ জানিয়ে রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন মিছিলটি বের হয়। গত ২৭ জুন ২০২১ তারিখে ‘Humayun Kabir’ নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারীর নিজস্ব অ্যাকাউন্টে ভিডিওটি দেখতে পাওয়া যায়। বিস্তারিত জানতে প্রথম আলোর প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে। অর্থাৎ, বিষয়টি স্পষ্ট যে ভিডিওতে প্রকাশিত ঘটনা দুইটি ভিন্ন এবং আলাদা সময়ে সংঘটিত হয়েছে।
জনসাধারণের বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নমুনা:
প্রকাশিত ভিডিওর শিরোনামের সাথে ভিডিওর কনটেন্ট অসামঞ্জস্যপূর্ণ। মানুষের প্রতিক্রিয়া এবং ভিডিওর জনপ্রিয়তা দেখে বুঝা যাচ্ছে যে শিরোনাম থেকেই মানুষের মধ্যে যথেষ্ট বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। ফলে, ফ্যাক্টওয়াচ ভিডিওটিকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে চিহ্নিত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?