সম্প্রতি “পরি মনি কে নিয়ে লাইভ টকশোতে মারামারি!!” শিরোনামে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে শিরোনামে করা দাবিটি অপ্রাসঙ্গিক ও অসত্য। উক্ত ভিডিওটি ৫টি ভিন্ন ভিন্ন টক শোর উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় এবং হাতাহাতির দৃশ্য জোড়া দিয়ে বানানো হয়েছে। তবে কোনটাতেই চিত্রনায়িকা পরীমনি আলোচ্য বিষয় ছিল না। ফলে এই ভিডিওটির সাথে ০৪ আগস্ট ২০২১ তারিখে পরীমনির আটক হবার ঘটনার কোন সম্পৃক্ততা নেই।
২০ আগস্ট ২০২১ তারিখে ‘Mst Sumaiya Akter’ নামের একটি পেজ থেকে “পরি মনি কে নিয়ে লাইভ টকশোতে মারামারি!!” ক্যাপশনে একটি রেকর্ডেড ভিডিও ফেসবুকে লাইভ করা হয়। ভিডিটিতে দেখা যাচ্ছে ৫টি ভিন্ন ভিন্ন টক শোর উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় এবং এক পর্যায়ে হাতাহাতির দৃশ্য এডিট করে যুক্ত করা হয়েছে।
ফ্যাক্টওয়াচ টিম এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ভিডিও ক্লিপগুলোর সাহায্যে মূল ৫টি টকশো সনাক্ত করে।
১. প্রথম ভিডিও ক্লিপ
১৭ জুলাই ২০১৮ সালে তিন তালাকের ওপর আয়োজিত ভারতের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ‘Zee Hindustan’-এর এক লাইভ টক শোতে অতিথিদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাটি ঘটে। তিন তালাকের বিরুদ্ধে সোচ্চার দেশটির নারী আইনজীবী ফারাহ ফায়াজের সঙ্গে টক শোতে এজাজ আরশাদ কাজমি নামের এক মাওলানার প্রথমে তর্কাতর্কি এবং এক পর্যায়ে হাতাহাতি হয়। ‘Zee Hindustan’ ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিওটি দেখুন এখানে।
২. দ্বিতীয় ভিডিও ক্লিপ
১২ আগস্ট ২০১৪ তারিখে একাত্তর টেলিভিশনের ‘একাত্তর সংযোগ’ টক শোতে মুখোমুখি হয়ে উত্তপ্ত বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাংসদ শামীম ওসমান ও মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী৷ টক শোর আলোচ্য বিষয় ছিল “নারায়ণগঞ্জের ৭ খুন: কে জড়িত – কে নয়?” সম্পূর্ণ টক শোটি দেখুন এখানে।
৩. তৃতীয় ভিডিও ক্লিপ
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে বেসরকারি টেলিভিশন গাজী টিভির ‘বাংলাদেশ সংলাপ’ নামের টক শোতে বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষক মোহাম্মদ এ আরাফাত এবং সাবেক সাংসদ মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) আক্তারুজ্জামানকে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। টক শোতে দেখা যায়, আরাফাত বলেন, “জয় বাংলাকে যারা আলিঙ্গন করতে পারে না, তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা বলতে কষ্ট হয়”। এতে ক্ষেপে যান আক্তারুজ্জামান এবং উত্তপ্ত বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন দুজন। ভিডিওটি দেখুন এখানে।
৪ চতুর্থ ভিডিও ক্লিপ
চ্যানেল আই -এর জনপ্রিয় টক শো ‘তৃতীয় মাত্রা’র এক এপিসোডে উপস্থিত ২জন অতিথি উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ে জড়িয়ে পড়েন। মূল টক শোটি চ্যানেল আই -এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে পাওয়া যায়নি তাই প্রকাশের সময়টিও নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে ২০১১ সাল থেকে উক্ত টক শোটির একটি সাড়ে ছয় মিনিটের ক্লিপ “Javed Alam” নামের ইউটিউব চ্যানেলে রয়েছে। বস্তুত, সেখানেও চিত্রনায়িকা পরীমনি বিষয়ে কোন আলোচনা হয় নি।
৫ পঞ্চম ভিডিও ক্লিপ
২০১৫ সালে একুশে টেলিভিশনের টক শো ‘একুশের রাত’-এ দুই আলোচক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামান এবং অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আবদুর রশীদ তর্কাতর্কি এবং এক পর্যায়ে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। মূল টক শোটি আমরা ইউটিউবে খুঁজে পাইনি। তবে ৫মে ২০১৫ তারিখে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন জাগো নিউজ২৪ লিখেছে,
৬৫ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, আব্দুর রশিদ স্ট্র্যাটিজিক ইন্টিলিজেন্স নিয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে তার দিকে আঙুল তুলে প্রশ্ন করতে শুরু করেন শাহীদুজ্জামান। একই ভঙ্গিতে বারবার তিনি ‘ইউ আর টকিং এবাউট মি?’ বলতে থাকেন। এ সময় আবদুর রশিদ তাকে কয়েকবার বলেন, ‘ডোন্ট শো ইওর ফিংগার’। তাতে শাহীদুজ্জামান সাড়া না দিলে তিনি নিজের হাত দিয়ে শাহীদুজ্জামানের হাতটি নামিয়ে দেন। তখন শাহীদুজ্জামানও পাল্টা হাত তোলেন।
সিদ্ধান্ত
উল্লিখিত ৫ টি টক শোর কোথাও পরীমনি নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি। পক্ষান্তরে, র্যাবের অভিযানে পরীমনি ‘আটক’ একটি সাম্প্রতিক ঘটনা। তাই পূর্বের কোন টক শোতে (মূলত রাজনৈতিক) তাকে নিয়ে আলোচনা কিংবা মারামারির দাবিটি অলীক। সুতরাং, সামাজিক মাধ্যমে সম্পাদিত ভিডিওটির শিরোনামে করা “পরি মনি কে নিয়ে লাইভ টকশোতে মারামারি!!” -এমন দাবিটি ‘মিথ্যা’।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?