“দেশের প্রথম নারী ও ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছেন” ।– এমন শিরোনামে একটি তথ্য ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এখনও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকারের পদে রয়েছেন। মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলোতে কেবল সম্ভাব্য রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীদের তালিকায় তার নাম খুঁজে পাওয়া যায়। অন্যদিকে সংবিধান অনুযায়ী ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ধরা হয়েছে আগামী ১৯ বা ২০ ফেব্রুয়ারি। তবে, এই নির্বাচনের তফসিল এখনও ঘোষণা করা হয়নি। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া তথ্যটিকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
বাংলাদেশের প্রথম নারী ও ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছেন কি না জানার জন্য প্রাসঙ্গিক কিছু কী ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করা হলেও এ সংক্রান্ত নিশ্চিত কোনো তথ্য মূলধারার সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়নি। তবে, এটা নিশ্চিত ভাবে জানা যায় যে, ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এখনও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার পদে রয়েছেন। তাকে সংসদের স্পিকার হিসেবেই বিভিন্ন স্থানে উপস্থিত হতে দেখা যায়। এ সংক্রান্ত কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে এবং এখানে।
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় মূলধারার সংবাদমাধ্যম ডেইলি স্টারে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে থেকে জানা যায়, আবদুল হামিদের পরে নতুন রাষ্ট্রপতি কে হতে যাচ্ছেন, এ ব্যাপারে সরকার বা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বস্থানীয় কারও কাছ থেকে কোনো ধরনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। আওামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা এখনও এ বিষয়টি নিয়ে তার সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেননি।
তবে, সম্ভাব্য রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে বেশ কয়েকজনের নাম আওামী লীগের নেতাকর্মীদের আলোচনায় রয়েছে যেমনঃ মসিউর রহমান, ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী, এ বি এম খায়রুল হক, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ওবায়দুল কাদের, আ ক ম মোজাম্মেল হক, মতিয়া চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমুসহ আরও অনেকে। এ সংক্রান্ত কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে এবং এখানে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ধরা হয়েছে আগামী ১৯ বা ২০ ফেব্রুয়ারি এবং তফসিল ঘোষণার সম্ভাব্য তারিখ হচ্ছে ৪ বা ৫ ফেব্রুয়ারি। রাষ্ট্রপতি হিসেবে আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৩ এপ্রিল। বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ থেকে ৬০ দিন পূর্বে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার বিধান রয়েছে। সংবিধানের ১২তম সংশোধনী অনুযায়ী এই সম্ভাব্য তারিখ ধরা হয়েছে।
আবার, ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া পোস্টে দাবি করা হচ্ছে ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। সংবিধান পরিবর্তন বা সংশোধন ছাড়া এমনটা সম্ভব নয়। কিন্তু সংবিধান সংক্রান্ত এমন কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এ ব্যাপারে বলেছেন, “নির্ধারিত সময়েই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন”।
১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট ১২ তম সংশোধনী পাশ হওয়ার পর সংবিধানে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সংক্রান্ত আর কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচনের বিধি আরও ২৫ বছর বহাল রাখার উদ্দেশ্যে সর্বশেষ ২০১৮ সালে বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন করা হয়েছিল। এর পরে সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত আর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৪ অনুচ্ছেদে বলা আছে:
“রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হইলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে ক্ষেত্রমত রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত কিংবা রাষ্ট্রপতি পুনরায় স্বীয় কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্পীকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করিবেন।”
কিন্তু সম্প্রতি আবদুল হামিদ বা শিরীন শারমিন চৌধুরীকে নিয়ে বাংলাদেশে এমন ধরণের কোনো ঘটনা ঘটতে দেখা যায়নি। শিরীন শারমিন চৌধুরীর পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হবার একটা গুঞ্জন থাকলেও এখন পর্যন্ত আবদুল হামিদই বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে বহাল আছেন।
সঙ্গত কারণে, ভিত্তিহীন এই দাবিটিকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” হিসেবে সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?