যা দাবি করা হচ্ছে: “প্রধানমন্ত্রীকে অবৈধ সরকার বললো রাষ্ট্রপতি”- এমন শিরোনামে একটি ভিডিও সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত: দাবিটি মিথ্যা। অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম কিংবা রাষ্ট্রপতির বরাতে এমন কোনো বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায় নি। ভাইরাল এই ভিডিওতে থাকা রাষ্ট্রপতির বক্তব্যটি মূলতচ্যানেল ২৪ এর একটি প্রতিবেদন থেকে নেওয়া হয়েছে। তবে মূল বক্তব্যে তিনি বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা এবং সংবিধানের বিভিন্ন সংশোধনী নিয়ে কথা বলেন। অর্থ্যাৎ, শিরোনামে রাষ্ট্রপতিকে উদ্ধৃত করে যে দাবিটি করা হয়েছে তার ভিডিওর কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় নি।
গুজবের উৎস: ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোর এমন কিছু ভিডিও দেখুন এখানে, এখানে, এবং এখানে।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:
ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিওতে দেখা যায়, বেসরকারি টেলিভিশন “চ্যানেল ২৪” এর লোগোসহ রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন’র এর একটি বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে।
প্রাথমিকভাবে অনুসন্ধান করার জন্য প্রথমে নির্দিষ্ট কিছু কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করে গুগলে অনুসন্ধান করা হয়। জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক মূলধারার গণমাধ্যমে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবৈধ সরকার বলেছেন এমন সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি।
পরবর্তীতে, ভাইরাল ভিডিওতে চ্যানেল ২৪ এর লোগোসহ যে অংশটি পাওয়া গিয়েছে সেটি নিয়ে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে, গত ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ এ “বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা আমাদের গর্ব: রাষ্ট্রপতি” শিরোনামে প্রকাশিত মূল প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়।
মূল ভিডিওটির সাথে ভাইরাল ভিডিওর একটি অংশের হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। মূল ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন গত ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ এ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সেখানে তিনি বলেন, “স্বৈরশাসকরা তাদের পতনের আগে সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী পাস করার জন্য সংসদকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে তাদের সব অপকর্মকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট তা অনুমোদন করেনি। সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেশের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্ট হচ্ছে সাধারণ মানুষের শেষ আশ্রয়। যেখানে তারা ন্যায় বিচার ও অধিকার রক্ষার জন্য মুখাপেক্ষ হন।”
উল্লেখ্য যে, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী জাতীয় সংসদে ১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিল জেনারেল জিয়াউর রহমান শাসনামলে করা হয় ও সপ্তম সংশোধনী ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদশাসনামলে করা হয়। এই দুইটি সংশোধনী ২০১০ সালে উচ্চ আদালতের এক রায়ে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এই দুই সংশোধনীর সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোন সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়া যায় নি। বিস্তারিত পড়ুন এখানে ও এখানে।
তাছাড়া, সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলেও উক্ত শিরোনামেও এই ভিডিওটি পাওয়া যায়। তবে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবৈধ সরকার বলেছেন এমন কোন তথ্য পাওয়া যায় নি। এছাড়া, রাষ্ট্রপতি বক্তব্যের যে অংশটুকু আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে সে অংশেও এমন কোনো মন্তব্য খুঁজে পাওয়া নি।
সুতরাং, সকল দিক বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।