যাদাবিকরাহচ্ছে: রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন পদত্যাগ করেছেন ।কিছু কিছু পোস্টে অন্যতম উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের বরাতে এই তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।
যাপাওয়াযাচ্ছে: মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন পদত্যাগ করেছেন এমন কোন তথ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল দেননি। তাছাড়া সংবিধান বিপুপ্ত হওয়ায় বর্তমানে দেশে কোনো স্পিকার নেই । সাধারনত রাষ্ট্রপতির অবর্তমানে সংসদের স্পিকার ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন, এবং সংবিধানের ৫০ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি স্পিকারের কাছে পদত্যাগ করতে পারেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি কার কাছে পদত্যাগ করছেন, বা তাঁর দায়িত্ব কে পালন করবেন, এসব তথ্য উক্ত ফেসবুক পোস্টগুলোতে নাই। তাই ফ্যাক্টওয়াচ রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ করার তথ্যটিকে মিথ্যা তথ্য হিসেবে চিহ্নিত করছে।
সম্প্রতি মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন পদত্যাগ করেছেন এমন একটা দাবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ফেসবুক পোস্টগুলো ভিডিও এবং টেক্সট দুই ফরম্যাটেই পাওয়া যাচ্ছে। ভিডিও ফরম্যাটের পোস্টে দেখা যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলছেন “ প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের জন্য একটা বিশেষ সংবাদ তাৎক্ষনিকভাবে শেয়ার করার প্রয়োজনিতা অনুভব করছি। কিছুক্ষণ আগে পদত্যাগ করেছেন, উনার পদত্যাগ পত্র আইন মন্ত্রাণালয়ে এসে পোঁছেছে। এটা উপযুক্ত প্রসেসিংয়ের জন্য আমরা কাল বিলম্ব না করে এটা খুব দ্রুত কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। ” তবে এখানে কে পদত্যাগ করেছেন তা ভিডিওতে বলা হয়নি।
১৫ই আগস্ট, ২০২৪ তারিখে আসিফ নজরুল তার অফিশিয়াল ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করে জানান তার নাম ব্যবহার করে অপপ্রচার হচ্ছে। রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করেছে বলে যে খবর ছড়ানো হচ্ছে তা ভুয়া।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমে আসিফ নজরুলের ফেসবুক পোস্টের কথা উল্লেখ করে খবর প্রচার করা হইছে রাষ্ট্রপতি পদত্যাগের খবর ভুয়া। এমন কিছু খবর দেখুন এখানে, এখানে, এখানে।
১০ই আগস্ট, ২০২৪ তারিখে প্রধান বিচারপতির অবসরের খবর জানাতে তিনি নিজে ৫০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও তার ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করেন। এই ভিডিওর সাথে ফেসবুকে পাওয়া ভিডিওর মিল পাওয়া যাচ্ছে। দুইটি ভিডিওতেই আসিফ নজরুলের কথা বলার ভঙ্গিমা,চেহারা, ব্যাকগ্রাউন্ড একই রকম। এই ভিডিওতে আসিফ নজরুল বলেন “প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের জন্য একটা বিশেষ সংবাদ তাৎক্ষনিকভাবে শেয়ার করার প্রয়োজন অনুভব করছি। আমাদের প্রধান বিচারপতি কিছুক্ষণ আগে পদত্যাগ করেছেন। উনার পদত্যাগপত্র ইতিমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ে এসে পৌঁছায়ছে। এটা উপযুক্ত প্রসেসিংয়ের জন্য আমরা কাল বিলম্ব না করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দিব। এবং আমি আশা করবো যে এটা খুব দ্রুত, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। আপনাদের জন্য আমি আরো জানাচ্ছি আমরা শুধু প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ পত্রই পেয়েছি। অন্যদের ব্যাপারে কোন আপডেট নেই।”
১০ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে “পদত্যাগ করলেন প্রধান বিচারপতিসহ ৬ বিচারপতি” শিরোনামে প্রকাশিত প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যাচ্ছে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এবং আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। ১০ই আগস্ট তাঁরা আইন মন্ত্রণালয়ে এই পদত্যাগপত্র জমা দেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা।প্রধান বিচারপতি ছাড়া অন্য পাঁচ বিচারপতি হলেন এম ইনায়েতুর রহিম, মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, জাহাঙ্গীর হোসেন, মো. শাহিনুর ইসলাম ও কাশেফা হোসেন।
অর্থ্যৎ আসিফ নজরুলের ভিডিও থেকে জানা যাচ্ছে তিনি প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ বিষয়ে জানাতে ভিডিওটি পোস্ট করেছিলেন। সেখানে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। তবে তার ভিডিওটি থেকে প্রধান বিচারপতি শব্দটি ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে কেঁটে ভুল ভাবে তথ্য দেওয়া হয়েছে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ল অফ বাংলাদেশ ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের সংবিধান পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে নির্বাহী বিভাগের চতুর্থ ভাগের ১ম পরিচ্ছদে রাষ্ট্রপ্রতি সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য দেওয়া আছে। সংবিধানের ৫০ নং অনুচ্ছেদের-
ধারা (১) এ বলা আছে “সংবিধানের বিধানাবলী সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ হইতে পাঁচ বৎসরের মেয়াদে তাঁহার পদে অধিষ্ঠিত থাকিবেন:
তবে শর্ত থাকে যে, রাষ্ট্রপতির পদের মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও তাঁহার উত্তরাধিকারী-কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন।”
ধারা (৩) এ বলা আছে “স্পীকারের উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে রাষ্ট্রপতি স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন।”
অতএব বাংলাদেশের সংবিধান থেকে জানা যাচ্ছে রাষ্ট্রপতি তার উত্তরসরী না পাওয়া পর্যন্ত তার স্বীয় পদে বহাল থাকবেন। রাষ্ট্রপতি যদি পদত্যাগ করতে চায় তবে তাকে স্পীকারের কাছে পদত্যাগ করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংসদ ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হয়না। এই ব্যবস্থায় স্পিকার থাকে না। এজন্য ,সংবিধান অনুযায়ী, বর্তমানে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করার মতো কেউ নেই।
সিধান্ত:
অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন পদত্যাগ করেছেন এমন কোন তথ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল দেননি । তাই মহামান্য রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ করার তথ্যটিকে ফ্যাক্টওয়াচ ‘মিথ্যা’ হিসেবে চিহ্নিত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।