সম্প্রতি ইউটিউবের একটি ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার হতে দেখা যাচ্ছে যেখানে ডোনাল্ড লু’র উদ্ধৃতি হিসেবে দাবি করা হচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ না করলে নির্বাচন হবেনা। ডোনাল্ড লু’কে সেখানে ইইউ প্রতিনিধি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে জানা যায়, ডোনাল্ড লু ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এর কোনো প্রতিনিধি নন, আসলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী। তাছাড়া, ইইউ এর কোনো প্রতিনিধি বা ডোনাল্ড লু শেখ হাসিনার পদত্যাগ সংক্রান্ত কোনো বক্তব্য দেননি। অন্যদিকে ফেসবুকে শেয়ার হওয়া ভিডিওটিতেও শেখ হাসিনার পদত্যাগ সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভিত্তিহীন পোস্টগুলোকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
বাংলাদেশের আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিদেশি কূটনীতিক এবং প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীসভার অন্যান্য সদস্য, নির্বাচন কমিশনসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছেন। তাদের প্রত্যাশা বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের।
গত ১৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে বৈঠক করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনান্ড লু। বৈঠক শেষে তারা জানান বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং অন্য মন্ত্রীদের কাছ থেকে তারা প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন। কিন্তু সেখানে শেখ হাসিনার পদত্যাগ সংক্রান্ত কোনো আলোচনার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আবার, গত ১৫ জুলাই আওয়ামীলীগের সাথে ইইউ প্রতিনিধিদের বৈঠক হয়। যদিও সেখানে শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেননা। সেই বৈঠকেও অবাধ, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ব্যাপারে আলোচনা হয়। কিন্তু সেখানেও শেখ হাসিনার পদত্যাগ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, ফেসবুকে শেয়ার হওয়া পোষ্টগুলোতে ডোনাল্ড লুকে ইইউ প্রতিনিধি হিসেবে সম্বোধন করে দাবি করা হচ্ছে “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ না করলে নির্বাচন হবেনা”। তাই এ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রাসঙ্গিক প্রাসঙ্গিক কিছু কি- ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে মূলধারার কোনো সংবাদমাধম কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো সোর্স থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, ডোনাল্ড লু ইইউর কোনো প্রতিনিধি নন বরং তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী।
আবার, ইউটিউবের যেই ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে তার ৫৩ সেকেন্ড থেকে ৮ মিনিট ৫ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশে বিএনপি দলীয় রাজনীতিবিদ রুমিন ফারহানা বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের অনিশ্চয়তা সম্পর্কে বলছিলেন। Rumeen’s Voice নামের একটি ফেসবুক পেইজে এই অংশটুকুর অনুরূপ একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
এরপর, ৮ মিনিট ৩১ সেকেন্ড থেকে ১৪ মিনিট ৪৪ সেকেন্ড অংশতে বিএনপি দলীয় আরেকজন রাজনীতিবিদ ড. ফয়জুল হকের বক্তব্য দেখানো হয়েছে। সেখানে তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈঠকের ব্যাপারে বলছিলেন। Dr. Fayzul Huq নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে এই অংশটুকুর অনুরূপ ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ইউটিউবের এই ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা ছিল নির্বাচনে পর্যবেক্ষক না পাঠাতে জামায়াতের অনুরোধ।
দেখা যাচ্ছে যে, ভিডিওর কোথাও শেখ হাসিনার পদত্যাগ সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই। সেখানে মূলত রুমিন ফারহানা এবং ড. ফয়জুল হকের আলাদা দুইটি ভিডিও যুক্ত প্রচার করা হয়েছে যা ভিডিওর শিরোনামের সাথে অপ্রসাঙ্গিক।
সবকিছু বিবেচনা করে ভিত্তিহীন পোস্টগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
সংশোধনী: ভুলক্রমে গত ২৭ জুলাই, ২০২৩ এ রিপোর্টটির খসড়া কপি প্রকাশিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে তা সম্পাদনা করে পুনরায় প্রকাশ করা হলো।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।