সম্প্রতি “অবশেষে বন্ধ হচ্ছে বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স” শিরোনামযুক্ত একটি খবর প্রকাশ করেছে বেশকিছু অনলাইন পোর্টাল। বাস্তবে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের একাংশ ব্যবহার করে সংবাদগুলো পরিবেশিত হচ্ছে। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী এও বলেছেন, “সব কলেজ যে একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে, তেমনটি নয়। বেশ কিছু ভালো কলেজ আছে যেখানে অনার্স-মাস্টার্সের উপযুক্ত ব্যবস্থা আছে, সেগুলো নিশ্চই চলতে পারে”। এ বক্তব্য আমলে নিলে ভাইরাল হয়ে যাওয়া খবরটি বিভ্রান্তিকর।
১২, ১৩ ও ১৫ আগস্ট ২০২১ তারিখে ফেসবুকে বিভিন্ন পেজে উক্ত শিরোনামযুক্ত খবরটি শেয়ার হয়েছে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে,এখানে,এখানে,এখানে এবং এখানে।
মূলত বৃত্তিমূলক শিক্ষা বাড়ানোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বেসরকারি কলেজ পর্যায়ে ধীরে ধীরে অনার্স-মাস্টার্স বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেন, “নানান ধরনের শর্ট কোর্স, ডিপ্লোমা কোর্সগুলো করানো হবে। যেগুলো অনেক বেশি কর্মমুখী, আত্মকর্মসংস্থানে, উদ্যোক্তা তৈরিতে যেগুলো উপযুক্ত হবে।”
উক্ত ভাইরাল খবরগুলোতে বলা হয়েছে, “আত্মকর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও উদ্যোক্তা তৈরিতে বেসরকারি কলেজগুলোতে শুরু হচ্ছে বিভিন্ন শর্টকোর্স ও কর্মমুখী ডিপ্লোমা। আর এতে বন্ধ হবে কলেজগুলোর অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষা”। অথচ উক্ত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এও বলেছেন, “সব কলেজ যে একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে, তেমনটিও নয়। আমাদের শতবর্ষী ১৩টি কলেজ আছে, এছাড়াও বেশ কিছু ভালো কলেজ আছে, যেখানে সকল ধরনের উপযুক্ত ব্যবস্থা আছে, সেগুলোতে অনার্স-মাস্টার্স চলতে পারে”। ভাইরাল হয়ে যাওয়া পোর্টালগুলোর শিরোনাম কিংবা সংবাদে এ তথ্যটির উল্লেখ নেই।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২৬ মে ২০২১ (বুধবার) শিক্ষাবিষয়ক একটি ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন নিয়ে খবর প্রকাশ করেছে দৈনিক ইত্তেফাক,যুগান্তর,বিডিনিউজটুয়েন্টিফোর সহ দেশের একাধিক মূলধারার দৈনিক পত্রিকা। উক্ত সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের সংবাদের শিরোনামে বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স বন্ধ হচ্ছে বললেও বিস্তারিত অংশে “উপযুক্ত ব্যবস্থা সমৃদ্ধ ভালো কলেজগুলোতে অনার্স-মার্স্টাস চলতে পারে” বিষয়ক শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যটি উদ্ধৃতি করেছে (দৈনিক ইত্তেফাক ছাড়া)। উক্ত সম্মেলনে তিনি বলেন, “এই কাজটি একদিনে হঠাৎ করে বন্ধ করে দিয়ে করা যাবে না। সেজন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে আমরা কাজ শুরু করেছি। ইতিমধ্যে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তারা পুরো বিষয়টি দেখছেন। আর বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এই সিদ্ধান্তগুলো নিতে হবে”।
বেসরকারি কলেজে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স বন্ধ করতে ২০১৯ সাল থেকে নতুন কলেজে এসব কোর্সের অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না৷ এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি কমিটি ৪ মে ২০২১ (মঙ্গলবার) প্রথম বৈঠক করেছে৷ বৈঠক শেষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক মশিউর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা একটি প্রক্রিয়া নির্ধারণের কাজ শুরু করেছি৷ এখনো নিশ্চিত নই যে, সব বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স কোর্স বন্ধ করা হবে কিনা৷’’
ডয়চে ভেলের এ বিষয়ক একটি সংবাদ সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি কলেজে ১৯৯৩ সাল থেকে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সের অনুমোদন দেয়া হয়৷ বাংলাদেশে এখন ৩১৫টি বেসরকারি কলেজে এই কোর্স চালু আছে৷ ২০০ কলেজ সরকারি হয়ে যাওয়ায় তারা আর এর আওতায় পড়ছে না৷
অন্যদিকে, ৬ জুন ২০২১ তারিখে “বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স বন্ধ হচ্ছে না” শিরোনামে বাংলা ট্রিবিউন একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটি বলছে, “দেশের বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স স্তর বন্ধ করা হচ্ছে না। তবে যেসব প্রতিষ্ঠানে বিষয় খোলা থাকলেও শিক্ষক নেই কিংবা শিক্ষার্থী নেই এমন কলেজে অনার্স-মাস্টার্স পড়ানো বন্ধ করে দেয়া হবে। আর কলেজগুলোতে ডিগ্রি ও অনার্স-মাস্টার্স পড়ানোর পেশাগত দক্ষতা তৈরির জন্য বিভিন্ন শর্ট কোর্স খোলা হবে।“
এবিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুর হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, “বেসরকারি অনার্স-মাস্টার্স বন্ধ করার কথা বলা হয়নি। আমাদের আলোচনা ছিল— দেশের বাস্তবতায়, যে শিল্প নির্ভর অর্থনীতি তৈরি হতে যাচ্ছে, সেখানে এতগুলো অনার্স গ্রাজুয়েটের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা কঠিন। তারা যদি কর্মসংস্থান উপযোগী দক্ষতা না পায় তাহলে শিক্ষিত বেকারে পরিণত হবে। তাই শিক্ষিত বেকার যাতে না হয়, উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি নানা ধরনের দক্ষতানির্ভর প্রফেশনাল কোয়ালিফিকেশন তৈরির দিকে জোর দেওয়ার কথা বলছি।“
উপরোক্ত তথ্য-প্রমাণাদি সাপেক্ষে বোঝা যাচ্ছে, সব বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স বন্ধ হচ্ছে না। শিক্ষার্থী থাকা সাপেক্ষে ভালো কলেজগুলোতে অনার্স-মাস্টার্স চলমান থাকবে। উক্ত খবরগুলোতে শিক্ষামন্ত্রীর উদ্ধৃতিটি আংশিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তাই সম্প্রতি “অবশেষে বন্ধ হচ্ছে বেসরকারি কলেজে অনার্স-মাস্টার্স” শিরোনামযুক্ত খবরটি ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভ্রান্তিকর।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?