ফেসবুকে যা ছড়াচ্ছেঃ দুইটি জুতার ছবি কোলাজ করে দাবি করা ছচ্ছে এগুলো হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জুতা।
আসল ঘটনাঃ দাবিটি মিথ্যা। জুতাগুলো হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জুতা নয়। এগুলোর মধ্যে একটি জুতা যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগনের রক কেভ থেকে খুঁজে পাওয়া যায় যার বয়স প্রায় ১০,০০০ বছর। অন্যটি স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলের আন্দালুসিয়া অঞ্চলের গ্রানাডা শহরের দ্য ব্যাট কেভ (The Bat Cave) থেকে খুঁজে পাওয়া যায়। এই জুতাজোড়ার বয়স ৬২০০ বছরের বেশি। অন্যদিকে, মুহাম্মদ (সা.) জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৪৫৪ বছর আগে, কিন্তু জুতাগুলোর বয়স তার থেকে অনেক বেশি। তাছাড়া, নির্ভরযোগ্য কোনো মাধ্যম থেকে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে, আলোচিত জুতাগুলো মুহাম্মদ (সা.) ব্যবহার করতেন।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলো সত্যিই হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জুতার কি না এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য শুরুতেই ছবিগুলো ব্যবহার করে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে ভাইরাল ছবিগুলো সম্পর্কে ফ্যাক্টওয়াচের গবেষণা থেকে নিম্নোক্ত তথ্য জানা গেছে:
ছবি ১
এই ছবিটির অনুরূপ একজোড়া জুতার ছবি NBC 6 এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটির তথ্য অনুযায়ী এই জুতা জোড়া স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলের আন্দালুসিয়া অঞ্চলের গ্রানাডা শহরের দ্য ব্যাট কেভে খুঁজে পাওয়া গেছিল। বিজ্ঞানীদের ধারণা অনুযায়ী ঘাস দিয়ে তৈরি এই জুতা জোড়া নিওলিথিক যুগের এবং ৬,২০০ বছর পুরানো।
Archaeology & Art নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ৫ এপ্রিল ২০২৪ এ আপলোড করা এক জোড়া জুতার ছবির সাথে এই ছবিটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ছবির ক্যাপশনে উল্লেখ আছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগনের ফোর্ট রক গুহা থেকে জুতো জোড়া খুঁজে পাওয়া গেছে যার বয়স ১০,০০০ বছর। এই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করে নর্থ আমেরিকান রেসিপ্রোকাল মিউজিয়াম (এনএআরএম) অ্যাসোসিয়েশন এর ওয়েবসাইটে ভাইরাল এই ছবিটির অনুরূপ একটি ছবি পাওয়া যায়। সেখানেও উল্লেখ করা হয় যে জুতা জোড়ার বয়স ১০,০০০ বছর।
হযরত মুহাম্মদ (সা.) আনুমানিক ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। সেই হিসেবে দেখতে গেলে তিনি আজ থেকে ১৪৫৪ বছর আগে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু ভাইরাল হওয়া জুতাগুলোর বয়স তার থেকে অনেক হাজার বছর বেশি। অন্যদিকে, হযরত মুহাম্মদ (সা.) তার জীবদ্দশায় যুক্তরাষ্ট্র বা স্পেন গেছিলেন কি না এ সম্পর্কিত প্রমাণ নির্ভরযোগ্য কোনো মাধ্যম থেকে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, ‘আলোচিত জুতাগুলো মুহাম্মদ (সা.) ব্যবহার করতেন’ এই দাবিটির সমর্থনেও নির্ভরযোগ্য কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।