সম্প্রতি ফেসবুকে একটি ভিডিও ভাইরাল হতে দেখা যাচ্ছে, যার ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছে এটি ফ্রান্সে এক মুসলিম তরুণকে ট্রাফিক পুলিশের গুলি করে হত্যর প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও সহিংসতার ভিডিও। কিন্তু ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভিডিওটি ফ্রান্সের কোনো ভিডিও নয় বরং, ইতালির সান সেভেরো শহরের ঐতিহ্যবাহী ফেস্টা দেল সকোর্সো উৎসবের ভিডিও। উৎসবটি চলাকালীন সময়ে কিছু আতশবাজি সঠিক স্থানে বিস্ফোরিত না হয়ে অংশগ্রহণকারী মানুষের মধ্যে বিস্ফোরিত হতে শুরু হলে এক অরাজক অবস্থার উদ্ভব হয়। প্যারিসে পুলিশের গুলিতে আলজেরিয় বংশোদ্ভূত নাহেল নামের ১৭ বছরের এক তরুণের নিহত হওয়া এবং এর জের ধরে শহর জুড়ে সহিংসতা চলার ঘটনা সত্য হলেও এর সাথে ভাইরাল ভিডিওটির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে সাব্যস্ত করেছ।
গত ২৭ জুন প্যারিসের শহরতলি নঁতেরে এলাকায়একটি ট্রাফিক স্টপেজেনাহেল মারজুক (Nahel Merzouk) নামের ১৭ বছর বয়সী আলজেরিয় বংশোদ্ভূত এক কিশোরকে গাড়ি চালিয়ে যাবার সময় ট্রাফিক পুলিশ তাকে থামতে বলে। সে না থামলে পুলিশ খুব কাছে থেকে তাকে গুলি করে। পরবর্তিতে, গুলিবিদ্ধ নাহেলকে জরুরি চিকিৎসা দেয়া হলেও বাঁচানো যায়নি। নাহেল নিহত হবার পর প্যারিস জুড়ে বিক্ষোভ এবং সহিংসতা শুরু হয়।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি এই বিক্ষোভ এবং সহিংসতার ভিডিও দাবিতেই প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু ভিডিওটির বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধান করে তুর্কি সংবাদ সংস্থাইহলাস নিউজ এজেন্সি (İhlas News Agency) থেকে গত ২২ মে প্রকাশ করা একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। মূলত সেটা ছিল ইতালির সান সেভেরো শহরে ঐতিহ্যবাহী ফেস্টা দেল সকোর্সো (Festa del Soccorso) উৎসবের ভিডিও।উৎসবটি চলাকালীন সময়ে কিছু আতশবাজি ভুলবশত আকাশে বিস্ফোরিত না হয়ে অংশগ্রহণকারী মানুষের ভিড়ের মধ্যে বিস্ফোরিত হয়েছিল।
এই ভিডিওটির সাথে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
এছাড়াও, ভাইরাল ভিডিওটির ১৩ সেকেন্ডের সময় ইতালীয় একটি ফুটবল ক্লাব San Severo এর পতাকা দেখতে পাওয়া যায়। San Severo ইতালির একটি শহরেরও নাম। সুতরাং, ফ্রান্সে আন্দোলন এবং সহিংসতা চলার সময় অন্য দেশের কোনো ফুটবল ক্লাবের পতাকা থাকাটা নিতান্তই অবাস্তব।
দেখা যাচ্ছে যে, সম্পুর্ণ ভিন্ন স্থানের ভিন্ন এক ঘটনার ভিডিওকে ফ্রান্সে বিক্ষোভ ও সহিংসতার ভিডিও বলে দাবি করা হচ্ছে। তাই সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।