ফরিদপুরে পুলিশের গুলিতে বিক্ষোভকারী নিহতের দাবিটি ভিত্তিহীন

23
ফরিদপুরে পুলিশের গুলিতে বিক্ষোভকারী নিহতের দাবিটি ভিত্তিহীন
ফরিদপুরে পুলিশের গুলিতে বিক্ষোভকারী নিহতের দাবিটি ভিত্তিহীন

Published on: [post_published]

যা দাবি করা হচ্ছে: ফরিদপুরের মধুখালীতে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যারপ্রতিবাদে সংঘটিত সমাবেশে, পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে অসংখ্য। কিছু কিছু পোস্টে নিহতের সংখ্যা একের অধিক বলেও দাবি করা হচ্ছে।

ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত: পুলিশের গুলিতে কোনো বিক্ষোভকারীর নিহত হওয়ার  প্রমাণ পাওয়া যায় নি।। সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশের পক্ষ থেকেও এই ধরণের তথ্যকে সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট দাবি করা হয়েছে। এছাড়া মূলধারার গণমাধ্যমেও এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি। এছাড়া এসব ক্যাপশনের সাথে যে ভিডিওটি রয়েছে সেখানেও এমন কোনো ঘটনার প্রমাণ মেলেনি। তাই এমন তথ্যসম্বলিত পোস্টের ক্যাপশনটিকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” হিসেবে শনাক্ত করছে।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

 

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানঃ

সম্প্রতি ফরিদপুরের একটি মন্দিরের প্রতিমায় আগুন এবং এরপর সন্দেহের জেরে দুজন শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে।  এমন হত্যার প্রতিবাদে ফরিদপুরে মানববন্ধন এবং পরবর্তীতে মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। ভাইরাল এসব পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, এসব সমাবেশের সময় পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হয়েছে এবং আহতের সংখ্যা অসংখ্য। তবে কিছু কিছু পোস্টে একের অধিক নিহত হওয়ার দাবিও করা হচ্ছে।

ফরিদপুর জেলা পুলিশের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ জেলা পুলিশ, ফরিদপুর থেকে ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ তারিখ দুপুর ১২ঃ০৪ মিনিটে একটি ফটোকার্ড প্রকাশ করা হয়। ফটোকার্ডে দেওয়া তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, গত ২৩ এপ্রিল মধুখালী থানায় মানববন্ধন এবং মহাসড়ক অবরোধের  ঘটনাটি জেলা পুলিশ “অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে” মোকাবেলা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় কোথাও কেউ নিহত হয়নি বলে জানানো হয়। ফরিদপুর পুলিশ বলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো নিহত হওয়ার ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট।

২৪ এপ্রিল, ২০২৪ তারিখে ঢাকা মেইলে ‘ফরিদপুরে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় গ্রেফতার ১২’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রচার করা হয়। উক্ত সংবাদে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলমের বক্তব্য প্রচার করা হয়। তাকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়,”পুলিশের গুলিতে একজন নিহতের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হয়েছে। এ ঘটনায় কারো মৃত্যু হয় নি। একজন ভ্যানচালক ওই বিক্ষোভের মধ্যে পড়লে তিনি আহত হন। এ সময় হয়তো পুলিশের ছোঁড়া গুলি তার গায়ে লাগতে পারে। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে তিনি সুস্থ আছেন।”

জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মোর্শেদ আলমের বক্তব্য সংবাদ মাধ্যম আজকের পত্রিকাতেও প্রকাশিত হয়েছে।

২৪ এপ্রিল, ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশ জার্নাল থেকে প্রকাশিত সংবাদে জানা যাচ্ছে, ফরিদপুরের মধুখালীর উক্ত ঘটনায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ফাঁকা গুলি এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ সময় বিক্ষোভকারীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় ১৫ জনেরও বেশি আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

পনেরজনের আহত হওয়ার খবরটি দৈনিক ইত্তেফাকের সংবাদেও পাওয়া যাচ্ছে। তবে কোথাও কারো নিহত হওয়ার কোনো সংবাদ পাওয়া যায় নি।

উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয় যে,”এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার সকাল থেকে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে কয়েক হাজার মানুষ। একপর্যায়ে পরিস্থিতি অস্বাভাবিকে রূপ নেয়, নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খায় প্রশাসন। রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। পরে দীর্ঘ সাত ঘণ্টা পর বিকেল ৪টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। এ সময় পুলিশের ছোড়া গুলি ও টিয়ারশেলে কমপক্ষে ১৫ জন বিক্ষোভকারী আহত হন।”

এছাড়া একই ঘটনা নিয়ে প্রথম আলো প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়,”বিক্ষোভকারীরা বলছেন, পুলিশের হামলায় তাঁদের চারজন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। একজনকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।”

উল্লেখ্য, গত ১৮ এপ্রিল রাতে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামে একটি কালিমন্দিরে আগুনের ঘটনা ঘটে। এতে মন্দির সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টয়লেট নির্মাণকাজের নির্মাণ শ্রমিকদের সন্দেহ করে এলাকাবাসী। পরে উত্তেজিত এলাকাবাসী নির্মাণ শ্রমিকদের মারধর শুরু করে। এ ঘটনায় সহোদর দুই ভাই আরশাদুল ও আশরাফুল নিহত হন। তবে পুলিশ জানিয়েছে, মন্দিরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় শ্রমিকদের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় নি। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১২ জনকে আটক করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, উক্ত ঘটনাটি তদন্তাধীন থাকায় নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না যে সেদিন কি ঘটেছিলো। তবে দৈনিক মানবজমিন প্রকাশিত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দাবি করা হচ্ছে, শ্রমিকেদের প্রথম মার শুরু করেছিলেন চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান এবং তার সাথে যুক্ত হয়েছিলেন মেম্বার অজিৎ কুমার। পরবর্তীতে এলাকাবাসী উত্তেজিত হয়ে আক্রমণ শুরু করে।

অর্থ্যাৎ, মূলধারার সংবাদমাধ্যম এবং প্রশাসনের তথ্য বিশ্লেষণ করে এটি নিশ্চিত জানা যায় যে, উক্ত ঘটনায় অনেকেই সেদিন আহত হয়েছেন। তবে পুলিশের গুলিতে কারোও নিহত হওয়ার কোনো তথ্য নির্ভরযোগ্য কোনো মাধ্যম থেকে খুঁজে পাওয়া যায় নি।

তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ফরিদপুরের মধুখালীতে পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার তথ্যটিকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

 

No Factcheck schema data available.