সম্প্রতি বিশ্বকাপে ভয়ংকর আগুন/গণ্ডগোল- শিরোনামে দুইটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, ভিডিওগুলো সাম্প্রতিক কিংবা পুরনো ফুটবল বিশ্বকাপের কোনো ঘটনা্র নয়। ভিডিও দুইটিই ভিন্ন ভিন্ন সময়ে জার্মানে অনুষ্ঠিত দুইটি খেলার ঘটনা। এর মধ্যে একটি ভিডিও ২০১২ এর মে মাসের এবং অপরটি ২০১৮ সালের মে মাসের। এছাড়া আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে চলমান কাতার বিশ্বকাপে এমন অপ্রীতিকর কোনো ঘটনার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ভাইরাল এসব ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, স্টেডিয়ামে অগ্নিকাণ্ডসহ পুলিশ এবং দর্শকদের মধ্যে এক ধরণের গোলযোগ হচ্ছে। এর ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছে, এটি বিশ্বকাপ খেলার মাঠের ঘটনা। যার কারণে অনেকেই ভাবছেন এটি সাম্প্রতিক কাতার বিশ্বকাপের কোনো ঘটনা।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান
প্রায় একই দাবিতে দুইটি আলাদা ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে। তবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ভিডিওগুলোর ঘটনা প্রায় একই। একটি ফুটবল ম্যাচের একপর্যায়ে গ্যালারিতে থাকা দর্শকেরা মাঠের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং এক ধরণের বিশৃঙ্খলার শুরু হয়। নিচে দুটি ভিডিওই আলাদাভাবে অনুসন্ধান করা হলোঃ
প্রথম ভিডিও
এই ভিডিওটির বিভিন্ন জায়গা থেকে নেয়া নিম্নোক্ত স্ক্রিনশটের মাধ্যমে দুইটি ফুটবল টিমের নাম খুঁজে পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে ‘ডাজেলডোর্ফ (Dusseldorf)’ এবং অন্যটি হার্থা বিএসসি(Hertha BSC)।
পরবর্তীতে উপরোক্ত দুইটি কি-ওয়ার্ডের সাহায্যে অনুসন্ধান করা হলে জানা যায় এগুলো জার্মানের দুইটি ফুটবল ক্লাবের নাম। অনুসন্ধানে ইউটিউবে ১৬ মে, ২০১২ এ প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। “Fortuna Düsseldorf VS. Hertha BSC – Fans stürmen Spielfeld” শিরোনামে প্রকাশিত এই ভিডিওর সাথে ভাইরাল ভিডিওর তুলনা করলে দেখা যায়, এটি একই ঘটনার ভিডিও এবং ভিডিওটিও প্রায় একই।
একই কি-ওয়ার্ডের মাধ্যমে পুনরায় অনুসন্ধানে উপরোক্ত ঘটনা সম্পর্কে ডয়চে ভেলের একটি প্রতিবেদন পাওয় যায়। “Fan behavior under fire” শিরোনামে প্রকাশিত এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৬ মে ২০১২ এ ফরচুনা ডাজেলডোর্ফ (Fortuna Dusseldorf) এবং হার্থা বার্লিনের (Hertha Berlin) মধ্যকার একটি খেলায় এই ঘটনাটি ঘটে।
অর্থ্যাৎ, পরিষ্কারভাবেই দেখা যাচ্ছে ভাইরাল এই ভিডিওর সাথে ফুটবল বিশ্বকাপের কোনো সম্পর্ক নেই।
এছাড়া উপরোক্ত খেলাটি নিয়ে স্কাইস্পোর্টসের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১২ মে ২০১৮ সালে জার্মানির হামবুর্গের একটি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফুটবল খেলায় ঘটনাটি ঘটে।
অর্থ্যাৎ, ভাইরাল এই ভিডিওটিও বিশ্বকাপের কোনো ঘটনা নয়।
এছাড়া আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমেও কাতার বিশ্বকাপে ম্যাচ চলাকালীন মাঠে এমন কোনো বিশৃঙ্খলার ঘটনার নজির পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ২৬ নভেম্বর ২০২২ এ কাতারের লুসাইল স্টেডিয়াম থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তবে সেটি কোনো স্টেডিয়ামের ভিতরে নয় এবং ভিডিওতে দেখানো দৃশ্যটিও এই ঘটনার নয়।
সুতরাং, পরিষ্কারভাবেই বুঝা যাচ্ছে “বিশ্বকাপে গণ্ডগোল” শিরোনামে যে ভিডিওগুলো ভাইরাল হচ্ছে সেগুলো মূলত বিশ্বকাপের কোনো ঘটনার নয়। বিভিন্ন সময়ে জার্মানির ঘরোয়া লিগে ঘটে যাওয়া পুরনো ঘটনার ভিডিও সেগুলো। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এমন ক্যাপশনসহ ফেসবুক পোস্টগুলোকে মিথ্যা চিহ্নিত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?