দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে “র্যাগ ডে” বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)- এমন একটি সংবাদ ভাইরাল হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, ইউজিসি কেবলমাত্র র্যাগ ডে’র নির্দিষ্ট কিছু কর্মকান্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সম্পূর্ণ র্যাগ ডে’র উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়নি।
গুজবের উৎস
গত ৩ রা জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (University Grant Commission বা UGC) এই বিজ্ঞপ্তি প্রদান করে। অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম ইউজিসি’র এই বিজ্ঞপ্তি সঠিকভাবে উদ্ধৃত করলেও, কিছু সংবাদমাধ্যম সঠিক তথ্য জানাতে ব্যর্থ হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
অনেক সংবাদমাধ্যম খবরের বিস্তারিত অংশে পূর্ণাঙ্গরুপে সঠিক সংবাদ পরিবেশন করলেও সিরোনামে এসে ‘র্যাগ ডে নিষিদ্ধ’ এর কথা লিখছেন। যেমন ঢাকা পোস্ট , এবিসি নিউজ , আমাদের সময় , সময়ের কণ্ঠস্বর ইত্যাদি ।
ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান
বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারনত শেষ ক্লাস এর দিনটাতে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপন করা হয়। এই সকল অনুষ্ঠানমালা একত্রে র্যাগ ডে (Rag Day) নামে পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে এসব অনুষ্ঠানমালার মধ্যে দেখা যায় প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের নিয়ে কনসার্ট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মঞ্চ নাটক,চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, র্যালি, রঙ খেলা, ফ্ল্যাশ মব , ডিজে শো ইত্যাদি । বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়িয়ে বিভিন্ন কলেজে এবং স্কুলেও ক্লাসের শেষ দিনটাতে শিক্ষার্থীদের এই ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করতে দেখা যায়।
গত ৭ এপ্রিল দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র্যাগ ডে’র নামে ডিজে পার্টি, বুলিং, অশ্লীলতা ও নগ্নতা বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ কামরুল হাসান। এর প্রতিক্রিয়ায় গত ১৭ এপ্রিল বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র্যাগ ডে’র নামে বুলিং, নগ্নতা ও অপসংস্কৃতি বন্ধের নির্দেশ দেন।
আদালতের এই আদেশের সাথে সঙ্গতি রেখে ইউজিসি গত ৩রা জুলাই এক বিজ্ঞপ্তির র্যাগ ডে’র বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধতা আরোপ করে এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নং-৪৫১৫/২০২২ এর একটি আদেশে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘র্যাগ ডে’ উদযাপনের নামে অশ্লীলতা, নগ্নতা, ডিজে পার্টি, অশোভন আচরণ, নিষ্ঠুর ও নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ড এবং বুলিং অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
তবে সামগ্রিকভাবে র্যাগ ডে নিষিদ্ধ করার কোনো কথা বলা হয়নি এই বিজ্ঞপ্তিতে।
এ বিষয়ে ইউজিসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্টভাবে বলেন যে ইউজিসি র্যাগ ডে উদযাপন নিষিদ্ধ করছে না।তিনি বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী আমরা র্যাগ ডে উদযাপনে বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
অশ্লীল, অশোভন আচরণ ও নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ড কী হবে জানতে চাইলে অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম বলেন, ‘এগুলো সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে।’
‘তবে সমাজের চোখে যা অশোভন, তাকে অশোভন বলা উচিত,’ যোগ করেন তিনি।
বিধিনিষেধ এর পরে কেমন হতে পারে র্যাগ ডে’র উদযাপন ?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বছর তাদের র্যাগ ডে’র কর্মসূচীতে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে । এক দিনের এ অনুষ্ঠানটির নামকরণ হবে ‘শিক্ষা সমাপনী উৎসব’।
শিক্ষা সমাপনী উৎসব এর নিয়ম কানুন সম্পর্কে অধ্যাপক হুমায়ূন কবীর জানান, সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় চেয়ারম্যান বা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও ছাত্র উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সভা করে অনুষ্ঠানসূচি চূড়ান্ত করবে। নিজ নিজ বিভাগ বা ইনস্টিটিউটের ভবন চত্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করা যাবে। টিএসসিতে সমবেত হয়ে পথচারীদের চলাচল স্বাভাবিক রেখে র্যালি করা যাবে। ক্লাস চলাকালীন উচ্চস্বরে বাদ্য-বাজনা পরিহার করতে হবে।
এ ছাড়াও বিভাগ বা ইনস্টিটিউটের সংশ্লিষ্টতায় দুপুরে অথবা রাতে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা যাবে। শিক্ষা সমাপনী উৎসবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রাত ১০টার মধ্যে শেষ করতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
সারমর্ম
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন সম্পূর্ণভাবে র্যাগ ডে কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেনি, বরং র্যাগ ডে (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শেষ দিন) উদযাপনে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এবং ফেসবুকে বিষয়টি ভুলভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে। অসম্পূর্ণ খবর এবং শিরোনামগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ ‘আংশিক মিথ্যা’ সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?