যা দাবি করা হচ্ছে: ইলেকট্রনিক স্পোর্টস ওয়ার্ল্ডকাপ চলাকালীন সৌদি আরবে সমকামীদের পতাকা (রংধনু পতাকা) উত্তোলন করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছে: সৌদি আরবের রিয়াদে ই-স্পোর্টস বিশ্বকাপের উদ্বোধনীর সময়ে মূল স্টেডিয়ামের বাইরে ৩ জন পারফর্মারের হাতে ইলেক্ট্রনিক পতাকা দেখা গিয়েছে। যে পতাকা নাড়ানোর সাথে সাথে একেক সময়ে একেক বর্ণ বিচ্ছুরিত হয়। এই রঙের বিন্যাস কখনো অনুভূমিক, কখনো সমান্তরাল আবার কখনো বাঁকানো ছিল এবং এর সাথে ‘রংধনু পতাকা’ হিসেবে পরিচিত পতাকার নকশার অনেক অমিল ছিল।
জনৈক আহমাদ আল হিন্দি ৩ সেকেন্ডের এই ক্লিপ আপলোড করে ক্যাপশনে লিখেছেন , ইলেকট্রনিকস্পোর্টসওয়ার্ল্ডকাপচলাকালীনসৌদিআরবেস°°ম°°ক|মী°°দে°°রপতাকাউত্তোলনকরাহয়েছে।
অন্য ফেসবুক ইউজাররাও একই ধরনের কথা লিখছেন। এসব ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেল, ৩ জন পারফর্মার একটি রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাদের হাতের ইলেক্ট্রনিক ব্যানার দোলাচ্ছেন, এবং দোলানোর সাথে সাথে দর্শকের সাথে পতাকার কৌণিক ভিন্নতার কারণে তাদের পতাকায় বিচিত্র বর্ণ দেখা যাচ্ছে। কখনো পতাকাকে পুরো সাদা দেখা যাচ্ছে, আবার কখনো পতাকায় লাল,নীল,হলুদ ইত্যাদি রঙের স্ট্রাইপ দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওটার বিভিন্ন সময়ে নেওয়া কয়েকটি স্ক্রিনশট এখানে যুক্ত করা হল। প্রতিটি স্ক্রিনশটেই পতাকার ভিন্ন রঙ বোঝা যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ৩রা জুলাই সৌদি আরবের রিয়াদ এ ভার্চুয়াল গেম এর আসর ইস্পোর্টস বিশ্বকাপ শুরু হয়েছে। এটা চলবে ২১শে আগিস্ট পর্যন্ত। ইস্পোর্টস ওয়ার্ল্ড কাপ এর ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রচারিত দেড় ঘন্টার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলোচিত পতাকার অংশটি দেখা যায়নি। তবে পতাকাধারীদের পেছনে একটি প্ল্যাকার্ডে Esports Worldcup লেখাটি দেখা যাচ্ছে। এছাড়া আশেপাশের দর্শকদের পোষাক দেখে অনুমান করা যায় যে এটি সৌদি আরবের কোনো এক অংশ এবং এই ইলেক্ট্রনিক পতাকার প্রদর্শনীটা ই-স্পোর্টস বিশ্বকাপের আনুষ্ঠানিকতারই অংশ।
অপরদিকে ,সমকামী অধিকারকর্মীদের আন্দোলনে বহুবর্ণবিশিষ্ট একটি পতাকা বা প্রতীক অনেক বেশি ব্যবহৃত হয়। এটা রংধনু পতাকা (Rainbow Flag) বা গর্বের পতাকা ( Pride Flag) বলা হয়। ১৯৭৮ সালে আমেরিকার সানফ্রান্সিসকোর শিল্পী গিলবার্ট বেকার এই পতাকা প্রস্তুত করেন। প্রাথমিক অবস্থায় তাঁর পতাকায় আটটি রঙ ছিল। বর্তমানে এখানে রঙের সংখ্যা কমিয়ে ৬ টি করা হয়েছে। এগুলো হল- লাল, কমলা, হলুদ, সবুজ, নীল ও বেগুনি। প্রতিটি রঙের আলাদা অর্থও আছে । যেমন –
লালঃজীবন
কমলা:আরোগ্য
হলুদ:সূর্যালোক
সবুজ:প্রকৃতি
নীল:শান্তভাব/একতা
বেগনি:উদ্দীপনা
ডোরাকাটা দাগগুলিকে ভূমির সাথে আনুভূমিক অবস্থায় রেখে, লাল রংকে উপরে এবং বেগুনিকে নিচেয় রেখে এই পতাকা ওড়ানো হয়, যেন সেটা আকাশের রংধনুর মত একই বিন্যাসে থাকে ।
অর্থাৎ, এই ৬ রঙের নির্দিষ্ট বিন্যাস না থাকলে, কিংবা সঠিকভাবে না ওড়ানো হলে তাকে রংধনু পতাকা বলা যাবে না । সেক্ষেত্রে, সৌদি আরবের রাস্তায় দেখা এই ইলেক্ট্রনিক পতাকাগুলোকে রংধনু পতাকা বলা সমীচীন হবেনা।
জর্ডান-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলবাওয়াবা থেকে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া দাবিটা ভুল , এবং আলোচিত এই পতাকার সাথে প্রাইড ফ্লাগ বা এলজিবিটিকিউ (সমকামী প্রকরণগুলোর নামের আদ্যক্ষর) এর কোনো সম্পর্ক নেই।
সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ এ সংক্রান্ত পোস্টগুলোকে ‘বিভ্রান্তিকর’ সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।