একটি ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হয়েছে যে “আল হুতাইব” নামক জায়গায় কখনোই বৃষ্টি হয়নি কারণ জায়গাটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩২০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত এবং সাধারণত বৃষ্টির মেঘ জমে ভূমি থেকে ২০০০ মিটার এর মধ্যে। উক্ত পোস্টে উত্থাপিত দুটো দাবির সত্যতা যাচাই করে দেখেছে ফ্যাক্টওয়াচ। ওয়েদার-আটলাস নামক একটি ওয়েবসাইট থেকে জানা যায় যে, হুতাইব (Hutayb) শহরে বৃষ্টিপাত হয়। অন্যদিকে, বিভিন্ন নিবন্ধ থেকে জানা গেছে যে ভূপৃষ্ঠ থেকে বিভিন্ন উচ্চতায় অবস্থিত মেঘের বেশ কয়েকটি স্তরের মধ্যে কিউমুলোনিমবাস (Cumulonimbus) নামক মেঘটি ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি উচ্চতা (low altitudes) থেকে শুরু হয়ে ১৮০০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত অবস্থান করে। এই মেঘটি ভারি বৃষ্টিপাত, শিলাবৃষ্টি, এবং বজ্রপাত তৈরি করতে পারে। অর্থাৎ, ২০০০ মিটার উচ্চতাতেই কেবল মেঘ জমে বৃষ্টি হয় – এই দাবিটি সঠিক নয়। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ উক্ত ফেসবুক পোস্টের প্রথম দাবিটির অগ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে একে “মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে।
অনুসন্ধানের প্রথমেই আমরা যাচাই করে দেখেছি যে ফেসবুক পোস্টটিতে ব্যবহৃত ছবিটি আল-হুতাইব নামক জায়গাটির কিনা এবং জানতে পেরেছি যে ছবির জায়গাটি ইয়েমেন (Yemen) এর রাজধানী সানা’র (Sanaa) পশ্চিমে মানাখাহ (Manakhah) এর পাহাড়ী অঞ্চলে অবস্থিত আল-হুতাইব শহর। আল-হুতাইবে কখনো বৃষ্টিপাত হয়েছে কিনা তা যাচাই করতে আমরা জায়গাটির আবহাওয়া সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি এবং ওয়েদার-আটলাস নামক একটি ওয়েবসাইট খুঁজে পেয়েছি। উক্ত ওয়েবসাইট থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে ইয়েমেন এর হুতাইবে সবচেয়ে বর্ষণমুখর মাস হচ্ছে আগস্ট, যখন সেখানে ১১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় এবং সবচেয়ে শুষ্ক মাস হচ্ছে অক্টোবর এবং ডিসেম্বর, যখন সেখানে পাঁচ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। তাছাড়া, ঐ ওয়েবসাইটের Frequently Asked Questions (FAQ) সেকশন থেকে আরও জানা গেছে যে হুতাইবে সারা বছর জুড়ে ১৫১.৯ দিন বৃষ্টিপাত এবং ঐ বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫২৬ মিলিমিটার। অর্থাৎ, আল-হুতাইবে কখনোই বৃষ্টিপাত না হওয়ার দাবিটি সঠিক নয়।
মেহলুম সদ্রিওয়ালা নামক একজন পর্যটক ২০১৫ সালে ইয়েমেন ঘুরে এসে DAWN পত্রিকায় “On the brutally beautiful streets of Yemen” শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন এবং সেখানে একটি বাক্যে আল-হুতাইব এর সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন যে, “পাহাড় ঘেরা দরগা এবং মসজিদ ও স্বপ্নের মতো মনোরম বাগান সমৃদ্ধ হুতাইব ছিলো স্বর্গ থেকে আসা পোস্টকার্ডের মতো। সেখানে প্রতিদিনই বৃষ্টি হতো।”
ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০০০ মিটার এর উপরে কি কখনো বৃষ্টিপাত হয় না?
ফেসবুক পোস্টটিতে দ্বিতীয় যে দাবিটি করা হয় তা হল, আল-হুতাইব শহরটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩২০০ মিটার উপরে হওয়ায় সেখানে বৃষ্টিপাত হতে পারে না, কারণ সাধারণত মেঘ জমে বৃষ্টি হয় ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০০০ মিটারের মধ্যে। আমরা উক্ত দাবিটির যথাযথতা যাচাই করে দেখার চেষ্টা করেছি। তার আগে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অবস্থিত বিভিন্ন মেঘের স্তর সম্পর্কেজেনে নেয়া যাক।
সিরো (Cirro) উপসর্গ যুক্ত মেঘগুলো, যেমন: সিরোকিউমুলাস (Cirrocumulus) ও সিরোস্ট্রাটিউস (Cirrostratus), ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬০০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থান করে। এই স্তরের মেঘগুলো সাধারণত পরিষ্কার এবং ভালো আবহাওয়ার বার্তা দেয়।
আল্টো (Alto) উপসর্গ যুক্ত মেঘগুলো, যেমন: আল্টোকিউমুলাস (Altocumulus) ও আল্টোস্ট্রাটিউস (Altostratus), ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০০০ এবং ৬০০০ মিটারের মধ্যে অবস্থান করে। যাকে সাধারণত মধ্য-স্তরের মেঘ বলেও গণ্য করা হয়।
নিমবো (Nimbo) উপসর্গ যুক্ত মেঘগুলো, যেমন: নিমবোস্ট্রাটিউস (Nimbostratus) ও কিউমুলোনিমবাস (Cumulonimbus – Nimbus বৃষ্টির লাতিন শব্দ থেকে এসেছে) স্তরের মেঘগুলো বৃ্ষ্টি এবং তুষার তৈরি করে।কিউমুলোনিমবাস (Cumulonimbus) কে মেঘেদের রাজা বলা হয় এবং এটি ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি উচ্চতা থেকে ১৮০০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত অবস্থান করতে পারে। কিউমুলোনিমবাস হচ্ছে একমাত্র মেঘ যা বৃষ্টিপাত, শিলাবৃষ্টি, এবং বজ্রপাত তৈরি করতে পারে। অতএব, কিউমুলোনিমবাসের পক্ষে ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০০০ মিটার এর উপরথেকেও বৃষ্টিপাত ঘটানো সম্ভব।
মেঘের বিভিন্ন স্তর এবং তাদের বৈশিষ্ট্য জানতে বিস্তারিত পড়ুন এখানে।
উল্লেখ্য, পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্কতম জায়গাগুলোর দুটো তালিকাইন্টারনেটে পাওয়া যায়। এই দুই তালিকার কোনোটাতেই ইয়েমেনের আল-হুতাইব এর নাম পাওয়া যায়নি। তালিকা দুটো দেখুন এখানেএবং এখানে।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ উক্ত পোস্টটিকে “মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?