ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রামের প্রতিকৃতিসহ  মুদ্রা জারি করেছিল?

9
 ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রামের প্রতিকৃতিসহ  মুদ্রা জারি করেছিল?  ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রামের প্রতিকৃতিসহ  মুদ্রা জারি করেছিল?

Published on: [post_published]

যা দাবি করা হচ্ছেঃ এগুলো ভারতে ব্রিটিশ শাসনামলে প্রচলিত রামায়ণ থিমের এক আনা এবং দুই আনার মুদ্রার ছবি। 

অনুসন্ধানে যা পাওয়া যাচ্ছেঃ দাবিটি বিভ্রান্তিকর। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ভাইরাল মুদ্রাগুলোর মত কোনো মুদ্রা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, মুদ্রাগুলো কোনো লেনদেনের উদ্দেশ্যে নয় বরং বিক্রির জন্য তৈরি করা হয়েছিল। এগুলো বিভিন্ন ই-কমার্স ওয়েবসাইট থেকেও ক্রয় করা যায়। অন্যদিকে, নির্ভরযোগ্য মাধ্যম থেকে এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি যার মাধ্যমে এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ব্রিটিশ সরকার ভারতে তাদের শাসনামলে শ্রী রাম বা অন্য কোনো হিন্দু দেবতার প্রতিকৃতি সম্বলিত মুদ্রা জারি করেছিল।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে

ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান: 

ভারতে ব্রিটিশ শাসনামলে রামায়ণ থিমের এক আনা এবং দুই আনার মুদ্রার প্রচলন ছিল কি না এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য শুরুতেই ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান করে দেখে ফ্যাক্টওয়াচ টিম। সেখানে ব্রিটিশ-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জারি করা  মুদ্রার পাশাপাশি বিভিন্ন স্বাধীন ও অর্ধ-স্বাধীন রাজ্যের নিজস্ব টাকশাল ব্যবস্থার অধীনে স্বতন্ত্র মুদ্রাগুলো দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু কোথাও রামায়ণ থিমের এক আনা এবং দুই আনার মুদ্রাগুলো দেখতে পাওয়া যায়নি।

ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ব্রিটিশ ভারতের মুদ্রা সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ থেকে জানা যায়, ১৮৩৫ সালের আগে বাণিজ্যর উদ্দেশ্যে মুদ্রার স্থানীয় গ্রহণযোগ্যতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে  প্রাথমিক ব্রিটিশ মুদ্রাগুলো আলাদা আলাদা ছিল। সেগুলো মুঘল, দক্ষিণ ভারতীয়, মেট্রোলজি (প্যাগোডা)  এবং ইংরেজ প্যাটার্নে খোদাই করা ছিল। ১৮৩৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সমগ্র ভারতে নতুন নকশা করা অভিন্ন ডিজাইনের কিছু মুদ্রা জারি করেছিল। মুদ্রাগুলোর একপিঠে রাজা চতুর্থ উইলিয়ামের প্রতিকৃতি এবং বিপরীত পিঠে ইংরেজি ও ফার্সি ভাষায় মুদ্রার মূল্য খোদাই করা ছিল। পরবর্তীতে  ১৮৪০ সালের পরে জারি করা মুদ্রাগুলোতে রানী ভিক্টোরিয়ার প্রতিকৃতি ছিল। কিন্তু, ব্রিটিশ শাসনামলে লেনদেনের উদ্দেশ্যে রামায়ণ থিমের কোনো মুদ্রা ছিল কি না ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

আবার, আলোচিত এক আনা এবং দুই আনার মুদ্রাগুলোর গায়ে তারিখ হিসেবে পর্যায়ক্রমে ১৮৩৯ সাল এবং ১৮১৮ সাল  উল্লেখ করা হয়েছে। রাজা চতুর্থ উইলিয়ামের  শাসনামল ছিল ১৮৩০ সালের ২৬ জুন থেকে ১৮৩৭ সালের ২০ জুন পর্যন্ত এবং রাজা তৃতীয় জর্জের শাসনামল ছিল ১৭৬০ সালের ২৫  অক্টোবর থেকে ১৮২০ সালের ২৯ জানুয়ারী পর্যন্ত। সে হিসেবে দেখতে গেলে ভাইরাল হওয়া এক আনার মুদ্রাটি  রাজা চতুর্থ উইলিয়ামের এবং দুই আনার মুদ্রাটি রাজা তৃতীয় জর্জের  শাসনামলের। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে রাজা চতুর্থ উইলিয়ামের শাসনামলে ভারতে প্রচলিত ব্রিটিশ মুদ্রার ছবি দেখতে পাওয়া যায় যার সাথে ভাইরাল হওয়া এক আনার মুদ্রার কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে, রাজা তৃতীয় জর্জের শাসনামলের কোনো মুদ্রার উল্লেখ ব্যাংকটির ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়নি।

পরবর্তিতে প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করে ভারত সরকারের ‘আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’- এর  প্রকাশিত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আওতাধীন অঞ্চলগুলোর মুদ্রার বিশদ বিবরণী সংক্রান্ত একটি নথি খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে থাকা মুদ্রার  ছবিগুলোতেও রামায়ণ থিমের কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

তাই, মুদ্রাগুলোর ব্যাপারে আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভাইরাল ছবিগুলো ব্যবহার করে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধান করা হয়।  অনুসন্ধানে ভারতীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান flipkart-এর ওয়েবসাইটে ভাইরাল মুদ্রাগুলোর কিছু ছবি পাওয়া যায়। মুদ্রাগুলো এই ওয়েবসাইট থেকে ক্রয় করা যায়।


অন্যদিকে, ভাইরাল এই কয়েনগুলো সম্পর্কে ইন্ডিয়া টুডে একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে দিল্লি ন্যাশনাল মিউজিয়ামের মুখপাত্র সঞ্জীব সিং এর বরাত দিয়ে জানানো হয়, যে, সারা বিশ্বে, এখন পর্যন্ত হিন্দু দেবদেবীর প্রতিকৃতি সম্বলিত মুদ্রার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তাছাড়া, মুদ্রা বিষয়ক ওয়েবসাইট Coin Quest এ উল্লেখ আছে যে, হিন্দু দেবতাদের ছবিযুক্ত ভাইরাল মুদ্রাগুলো আসলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক জারি করা মুদ্রা নয়, বরং সাম্প্রতিককালে পর্যটকদের কাছে বিক্রি করার জন্য তৈরি করা “মন্দিরের টোকেন”।

অতএব, ভাইরাল ছবিগুলো যেহেতু ব্রিটিশ শাসনামলে জারি করা কোনো মুদ্রা নয়, সুতরাং ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.