ছাত্রদলের নতুন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানের বয়স নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। গত ৮ই আগস্ট বিএনপির পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে দাবি করছেন, তার বয়স ৪৭। ২০ সেকেন্ডের একটি ভাইরাল হওয়া ভিডিওতেও দেখা যায় , রাশেদ ইকবাল খান নিজের বয়স ৪৭ বছর দাবি করছেন। তবে অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে , এই ভিডিওটি প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা। রাশেদ ইকবাল খান নিজের বয়স ৪৭ বলে দাবি করেন নি, বরং তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তিনি ২০০৩ সালে এসএসসি এবং ২০০৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন ( সেই সুবাদে তার বর্তমান বয়স ৩৭ এর আশেপাশে হতে পারে )।
প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা ভিডিওতে যেহেতু তার দাবির উলটো বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে, তাই ফ্যাক্টওয়াচ এই পোস্টগুলোকে ‘বিকৃত’ সাব্যস্ত করছে।
এই ভিডিওতে রাশেদ ইকবালকে বলতে শোনা যায়, আমি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নতুন সভাপতি রাশেদ ইকবাল। আমার বয়স মাত্র ৪৭ বছর। আমার বড় ছেলে তাউহিদ, ওর বয়স ২৭ বছর। তাওহিদের আবার ৮ বছরের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। আমি জুবাইদা রহমানের ক্লাসমেট। প্রিয় ছাত্রসমাজ, সবাই আমাকে চাচাজী বা দাদা বলে ডাকবেন, এবং সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন ।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটার মূল উৎস রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে দেখা গেল , রাশেদ ইকবাল খান এর আনভেরিফাইড ফেসবুক একাউন্ট থেকে গত ২১শে ফেব্রুয়ারি আপলোড করা একটি ছবি থেকে এই ভিডিওটি বানানো হয়েছে।
ভিডিওর নিচে বাম পাশে D-ID নামক একটি প্রতিষ্ঠানের লোগো দেখা যাচ্ছে, এই D-ID হল ছবি থেকে ভিডিও তৈরি করার একটি ওয়েবসাইট। যেকোনো ছবি এবং লিখিত টেক্সট দিলেই এখান থেকে ভিডিও তৈরি করা সম্ভব।
আলোচ্য ২০ সেকেন্ডের ভিডিওগুলো এভাবেই D-ID থেকে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
বাংলাভিশনে গত ১০ই আগস্ট প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে রাশেদ ইকবাল খান দাবি করেছেন, আমি ২০০৩ সালে এস এস সি এবং ২০০৫ সালে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করে ২০০৬-০৭ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। ——এই আন্দোলন সংগ্রামকে ক্ষতিগ্রস্থ করতেই ,আমাদের ছাত্রদলকে, ছাত্রদলের নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই তারা একটি হাস্যকর অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে।
দি ডেইলি ক্যাম্পাস কে দেওয়া আরেক সাক্ষাৎকারে রাশেদ ইকবাল খান বলেন, “আমি ২০০৬-০৭ সেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলাম। এর আগে একবছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। পরে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছি। তার আগে ২০০৫ সালে এইচএসসি ও ২০০৩ সালে এসএসসি সম্পন্ন করেছি। তাহলে আমার বয়স ৪৭ হবে কিভাবে?”
এছাড়া দি ডেইলি ক্যাম্পাস এর এই প্রতিবেদনে রাশেদ ইকবাল খান এর জাতীয় পরিচয়পত্রের আংশিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এখান থেকে জানা যাচ্ছে, তার জন্ম ১৯৮৭ সালে ১লা ডিসেম্বর। এই তথ্য সত্য হয়ে থাকলে , আজ ২০শে আগস্ট তারিখে তার বয়স ৩৫ বছর ৮ মাস ১৯ দিন। (এজ ক্যালকুলেটর ডট নেট এর হিসাব অনুযায়ী )
তবে বাংলাদেশে অধিকাংশ বাচ্চার ক্ষেত্রে প্রকৃত জন্মতারিখ এর চেয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রে উল্লেখিত জন্মতারিখের ক্ষেত্রে ১ বা ২ বছরের ব্যবধান থাকে। এই ব্যবধান রেখেই বাচ্চাদের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের জন্য কাগজপত্র তৈরি করান। এই ব্যবধান কে আমলে নিলেও রাশেদ ইকবালের বয়স আসে ৩৬ বছর কিংবা ৩৭ বছর।
দি ডেইলি ক্যাম্পাস এর তথ্য অনুযায়ী, এই পরিচয়পত্রটি ইস্যু করা হয়েছিল ২০১০ সালের ৮ই মার্চ। সেক্ষেত্রে, এই পরিচয়পত্রের তথ্য সংগ্রহের সময় ,অর্থাৎ ২০১০ সালে বড় ধরনের কোনো ভুল হলেই , বা ইচ্ছাকৃতভাবে বড় ধরনের ভুল তথ্য সরবরাহ করা হলেই কেবলমাত্র রাশেদ ইকবালের বয়স ৪৭ হওয়া সম্ভব।
অন্যদিকে ,যেসকল পোস্টে রাশেদ ইকবাল খানের বয়স ৪৭ বছর দাবি করা হচ্ছে, সেসকল পোস্টেও এই ৪৭ বছরের দাবির সপক্ষে কোনো কাগজপত্র বা অন্য কোনো প্রমাণ দেখা যাচ্ছেনা।
সিদ্ধান্ত
রাশেদ ইকবাল খান সম্পর্কে যেসব তথ্য পাবলিক ডোমেইনে পাওয়া যাচ্ছে, এবং তিনি নিজে গণমাধ্যমে বলেছেন, তার বিপরীত কথা শোনা যাচ্ছে এই ডিপফেক ভিডিওতে। এছাড়া অন্যান্য আলামত থেকেও এটা স্পষ্ট যে এটা রাশেদ ইকবাল খানের নিজের বক্তব্য নয়, বরং যান্ত্রিক কৌশলে তার মুখে এই বক্তব্য জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এই পোস্টগুলোকে ‘বিকৃত’ সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।