সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে একটি পোস্ট শেয়ার করে সকলকে অবগত করা হচ্ছে যে, “যদি আপনার বাসায় অপরিচিত কেউ এসে বলে যে আমরা মেডিকেল কলেজ থেকে এসেছি। আপনার রক্তের গ্লুকোজ বা ডায়াবেটিস আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখব, কোন ফি লাগবে না। ভুলেও পরীক্ষাটা করতে দিবেন না। শীঘ্রই ৯৯৯ কল দিবেন কিংবা পুলিশকে অবহিত করবেন। কারণ তারা আই’এস জ’ঙ্গি। তারা আপনার রক্তে এইচ আ’ই’ভি এইডস ভাইরাস প্রবেশ করিয়ে দিবে। বন্ধু এবং আত্মীয়-স্বজনদের কাছে এটা শেয়ার করুন।” তবে, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওয়েবসাইট, অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ, এবং আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের ওয়েবসাইটে এধরণের কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। বেশকিছু বছর ধরে সামাজিক মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশ এবং বাংলাদেশ স্কাউটসের সৌজন্যেও আলোচিত পোস্টটির অনুরূপ পোস্ট শেয়ার হতে দেখা গেছে এবং পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইট কিংবা ফেসবুক পেজ ঘেঁটে এ জাতীয় কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। সঙ্গত ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টের ভিত্তিহীন দাবিটিকে “মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে।
সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টের দাবিটির যথাযথতা যাচাই করতে আমরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দাপ্তরিক ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ, এবং আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এর ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখি। তবে, আমাদের অনুসন্ধানে উক্ত ক্ষেত্রগুলো থেকে আলোচিত পোস্টে যে দাবিটি করা হচ্ছে তার অনুরূপ কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ ধরনের ক্ষেত্রে সাধারণত সেনাবাহিনী কিংবা আইএসপিআর এই ওয়েবসাইটে নির্দেশনাগুলো থাকে।
শুধু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নয়, এর আগে বাংলাদেশ পুলিশ এবং বাংলাদেশ স্কাউটসের সৌজন্যেও মেডিকেল ছাত্রের বেশে আইএস জঙ্গী রক্তের গ্লুকোজ এবং ডায়াবেটিস পরীক্ষা করতে গিয়ে আমাদের অগোচরে এইচআইভি এইডসের ভাইরাস ঢুকিয়ে দিবে – সংক্রান্ত দাবি শেয়ার করতে দেখা গেছে। ফলে আমরা বাংলাদেশ পুলিশের দাপ্তরিক ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ, এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের ফেসবুক পেজ ঘেঁটে দেখেছি যে তারা এ জাতীয় কোন তথ্য শেয়ার করেছে কিনা। তবে আমাদের অনুসন্ধানে উক্ত ক্ষেত্রগুলো হতে এ ধরণের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া, বাংলাদেশ স্কাউটসের পক্ষ থেকে এ জাতীয় কোন তথ্য শেয়ার করা হয়েছিলো কিনা তা যাচাই করতে গিয়ে আমরা ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা রিউমার স্ক্যানারের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পেয়েছি। সেখানে তারা স্কাউটসের জাতীয় সদর দফতরের পরিচালক (সমাজ উন্নয়ন ও স্বাস্থ্য) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফার সাথে কথা বলে জানিয়েছে, স্কাউটস এমন কোন রেড অ্যালার্ট দেয়নি এবং কে বা কারা এটি ছড়াচ্ছে সেটি তাঁর জানা নেই।
অতএব, উপরের আলোচনা থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, সামাজিক মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ পুলিশ, এবং বাংলাদেশ স্কাউটসের সৌজন্যে যে পোস্টটি ভাইরাল হয়েছে সেটির দাবি ভিত্তিহীন। উক্ত পোস্টগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট কোন প্রতিষ্ঠানই এ ধরণের রেড অ্যালার্ট দেয়নি।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টের ভিত্তিহীন দাবিটিকে মিথ্যা বলে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।