সম্প্রতি “বাংলাদেশী তরূণীকে বিয়ে করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন ইতালীয় পুলিশ” এমন শিরোনামে একটি সংবাদ ফেসবুকে ভাইরাল হয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে ইতালিতে বিয়েটি অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় বিয়েটি আন্তসম্প্রদায়িক অর্থাৎ ভিন্ন দুইটি সম্প্রদায়ের মধ্যকার ছিলো। এছাড়া মূলধারার গণমাধ্যমে উক্ত ব্যক্তির ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কিত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। পুরনো খবর নতুন করে প্রচার করায় এবং ধর্মান্তর হওয়ার পক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ না থাকায় ফ্যাক্টওয়াচ এই দাবিকে বিভ্রান্তিকর সাব্যস্ত করছে।
ভিন্ন ডোমেইনে আরাবিয়ান বাংলা নামক একটি ওয়েবপোর্টাল থেকে খবরটি ফেসবুকে ভাইরাল হচ্ছে। এমন কিছু ওয়েবপোর্টালের আর্কাইভ ভার্সন দেখুন এখানে এবং এখানে।
ভাইরাল এই সংবাদে দাবি করা হয়, বাংলাদেশী মেয়ে সুমাইয়াকে দমিনি নামে এক ইতালীয় পুলিশ কর্মকর্তা বিয়ের প্রস্তাব দিলে তিনি ফিরিয়ে দেন এবং তাকে মুসলমান হতে নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে বিয়ের ৬ মাস আগে দমিনিকো তার ধর্ম পরিবর্তন করে ইসলাম গ্রহণ করে।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান
ভাইরাল পোস্টে পাওয়া ছবির সাহায্যে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে প্রথম আলো প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। “ইতালির বর, বাংলাদেশি কনে” শিরোনামে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ এ প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশি তরুণী সুমাইয়া এবং ইতালির মিলিটারি পুলিশ কর্মকর্তা দুমেনিকো টাম্বুর্রিনু ১৪ সেপ্টেম্বর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
অর্থাৎ, বিয়ের ঘটনাটি প্রায় দুইবছর আগের। একই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইতালির কাপানিয়া অঞ্চলের সালের্নু বিভাগের মাইয়োরি শহরে বিয়ের অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম আলোতে বিয়েটিকে “আন্তঃসম্প্রদায় বিয়ে”হিসেবে উল্লেখ করা হয়। অর্থাৎ দুইটি ভিন্ন সম্প্রদায়ের ছেলে এবং মেয়ের মধ্যকার বিয়ে এটি।
কিন্তু বর্তমানে ভাইরাল সংবাদগুলোতে দাবি করা হচ্ছে, বিয়ের ৬ মাস আগে ইতালির সেই পুলিশ কর্মকর্তা বিয়ের জন্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন।
বিয়ের খবরটি বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও ইসলাম ধর্ম গ্রহণের বিষয়ে মূলধারার সংবাদমাধ্যমে কোনো তথ্য পাওয়া যায় নি। অর্থাৎ ভাইরাল দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে দৈনিক যুগান্তরের একটি প্রতিবেদনট পড়ুন এখানে। এখানেও ধর্মান্তর হওয়া নিয়ে কোনো তথ্য নেই।
উল্লেখ্য গত বছরও এই গুজবটি ভাইরাল হয়েছিল। তখনতথ্যযাচাই সংস্থা বুম বিডি এটিকে পুরনো খবর ও বিভ্রান্তিকর বলে অভিহিত করে।বুম-বিডির প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
অতএব, বিষয়টি পরিষ্কার যে ইতালির পুলিশ কর্মকর্তার সাথে বাংলাদেশি নারীর বিয়ে হয়েছে ঠিকই কিন্তু বিয়ের কারণে কারো ধর্মান্তরিত হওয়ার খবর খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া ঘটনাটি প্রায় দুই বছর আগের। পুরনো খবর নতুন করে প্রচার করায় এবং ধর্মান্তরিত হওয়ার ঘটনার কোনো সূত্র না থাকায় ফ্যাক্টওয়াচ এই দাবিকে “বিভ্রান্তিকর” চিহ্নিত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?