সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একটি সাপের ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, এটি রাসেল’স ভাইপার। তবে, ফ্যাক্টওয়াচ টিম অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, উক্ত সাপটি রাসেল’স ভাইপার নয়। বরং, সেটি আফ্রিকার স্থানীয় নির্বিষ রম্বিক এগ-ইটার (Rhombic Egg-eater) সাপ। রাসেল’স ভাইপার এবং রম্বিক এগ-ইটারের শারীরিক বৈশিষ্ট্যের মাঝে অমিল দেখে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টের দাবিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:
সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ছবিতে যে সাপটিকে রাসেল’স ভাইপার বলে দাবি করা হচ্ছে সেটি আসলে রম্বিক এগ-ইটার সাপ। উক্ত ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধান করে “EasYOfLagos” নামক এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেল থেকে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া গেছে, যার সাথে আমাদের আলোচিত ছবিতে দৃশ্যমান সাপটির বেশ মিল রয়েছে। উক্ত ভিডিওর ক্যাপশন পড়ে জানা গেছে, এটি নির্বিষ রম্বিক এগ-ইটার সাপ। রম্বিক এগ-ইটার আফ্রিকার একটি স্থানীয় সাপ। পাখির ছোট ছোট ডিম এদের প্রধান খাদ্য বলে এই সাপের নাম ‘এগ-ইটার’ দেয়া হয়েছে। আফ্রিকার আরেক স্থানীয় সাপ ‘রম্বিক নাইট অ্যাডারের’ মতো এদের শরীরে রম্বস আকৃতির চিহ্ন রয়েছে বলে একে রম্বিক এগ-ইটার বলা হয়। মাথায় ‘V’ আকৃতির মতো চিহ্ন দেখে এদের চিহ্নিত করা যায়। দেখতে একরম হওয়ায় অনেক সময় রম্বিক নাইট অ্যাডারের সাথে রম্বিক এগ-ইটার সাপকে মিলিয়ে ফেলা হয়। তবে, রম্বিক এগ-ইটার একটি নির্বিষ সাপ। এরা হুমকির সম্মুখীন হলে কুন্ডলী পাকিয়ে এবং পাক খুলে আক্রমণ করতে এগিয়ে আসে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, রম্বিক এগ-ইটার সাপের কোন দাঁত নেই। ফলে তারা কামড়াতে পারে না। পাখির ছোট ডিম এদের প্রধান খাদ্য বলে সেই ডিম গিলে ফেলার জন্য তাদের মুখের চোয়াল ‘হাঁ’ করলে অনেক বড় হয়। রম্বিক এগ-ইটার সাপ ডিম পেড়ে বাচ্চা জন্ম দেয়।
অন্যদিকে, রাসেল’স ভাইপারের মাথা ত্রিকোণাকৃতি বা অনেকটা ইংরেজি বর্ণমালা ‘V’ এর মতো দেখতে হয়। এদের মাথা ঘাড় থেকে চওড়া হয়। রাসেল’স ভাইপার সাপকে অন্যান্য সাপ থেকে আলাদা করে চেনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর ফ্যাকাশে কমলা বাদামী রঙের পিঠের উপর লালচে বাদামী রঙের ডিম্বাকৃতি বা চাকতির মতো দেখতে কালো বর্ণের সীমানাযুক্ত বড় বড় বৃত্ত, যা মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত তিনটি সারিতে শেকলের মতো চলে গেছে। রাসেল’স ভাইপার সাপের শরীরে এই চাকতির মতো কালো রঙের সীমানাযুক্ত বৃ্ত্তগুলো কিছুটা চাঁদের মতো দেখতে হওয়ায় বাংলায় এই সাপকে বলা হয় চন্দ্রবোড়া। এর বাংলায় নামকরণ থেকে বুঝা যাচ্ছে, রাসেল’স ভাইপার বিদেশি কোন সাপ নয়। বরং, এই অঞ্চলের স্থানীয় সাপ। অপরদিকে, রম্বিক নাইট অ্যাডারের বসবাস আফ্রিকা মহাদেশে, বিশেষ করে সাব-সাহারান অঞ্চলে। এই সাপ বাংলাদেশে পাওয়া যায় না। রাসেল’স ভাইপার সাপ তার অনন্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত ত্বকের গঠনের কারণে এবং এর চামড়া দিয়ে শৌখিন জিনিস তৈরি হয় বলে শিকারীর শিকার হয়। বিপদের সম্মুখীন হলে রাসেল’স ভাইপার কুন্ডলী পাকিয়ে ‘ফোঁস ফোঁস’ শব্দ করে শত্রুকে লক্ষ্য করে সতর্কবার্তা পাঠাতে থাকে এবং ঘন ঘন নিঃশ্বাসের ফলে এর শরীর স্বাভাবিক আকারের চেয়ে বেশি ফেঁপে উঠে। রাসেল’স ভাইপার ডিম না পেড়ে সরাসরি বাচ্চা প্রসব করে।
অতএব, উপরে দুটো সাপের শারীরিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করে বুঝা যাচ্ছে যে, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টে যে সাপটিকে রাসেল’স ভাইপার বলে দাবি করা হচ্ছে সেটি আসলে নির্বিষ রম্বিক এগ-ইটার সাপ।
ভিন্ন সাপের ছবিকে রাসেল’স ভাইপার দাবি করে বেশকিছু পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছিল। সেইসব পোস্টগুলো নিয়ে ফ্যাক্টওয়াচের প্রতিবেদনগুলো পড়ুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে।
রাসেল’স ভাইপার দাবিতে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি পোস্টের নমুনা দেখবেন এখানে এবং এখানে।
সবকিছু বিবেচনা সাপেক্ষে ফ্যাক্টওয়াচ সাহাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টের দাবিকে বিভ্রান্তিকর বলে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।