সম্প্রতি থ্রেডসে একটি সাপের ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, এটি রাসেল’স ভাইপার সাপ। তবে, ফ্যাক্টওয়াচ টিম অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, উক্ত ছবিতে দৃশ্যমান সাপের সাথে রাসেল’স ভাইপার সাপের শারীরিক বৈশিষ্ট্যের কোন মিল নেই। বরং, সেটি রম্বিক নাইট অ্যাডার (Rhombic Night Adder) সাপ। এর শরীরে রম্বস (Rhombus) আকৃতির দাগ এবং মাথায় ত্রিভুজাকৃতি বা ‘V’ আকৃতির চিহ্ন দেখে এই সাপের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। উল্লেখ্য, রম্বিক নাইট অ্যাডার সাপটির বাস আফ্রিকা মহাদেশে এবং এই সাপ বাংলাদেশে পাওয়া যায় না। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ থ্রেডসে শেয়ারকৃত পোস্টের দাবিকে “বিভ্রান্তিকর” বলে সাব্যস্ত করছে।
অনুসন্ধান:
থ্রেডসে শেয়ারকৃত ছবিতে যে সাপটিকে রাসেল’স ভাইপার বলে দাবি করা হচ্ছে, সেটি আসলে আফ্রিকা মহাদেশের স্থানীয় সাপ রম্বিক নাইট অ্যাডার। আলোচিত ছবিটি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধান করে ‘Visionledge’ নামক এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেল থেকে প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া গেছে, যার সাথে থ্রেডসে শেয়ার হওয়া ছবিটির বেশ মিল রয়েছে। উক্ত ভিডিওর ক্যাপশন পড়ে জানা গেছে, এটি রম্বিক নাইট অ্যাডার সাপ। এর শরীর জুড়ে রম্বস বা সমবাহু অসমকোণী চতুর্ভুজাকৃতির চিহ্ন রয়েছে বলে এদের নাম দেয়া হয়েছে রম্বিক নাইট অ্যাডার। এর মাথায় ত্রিভুজাকৃতি বা ইংরেজি ‘V’ আকৃতির চিহ্ন দেখে এদের চিহ্নিত করা যায়। রম্বিক নাইট অ্যাডারের বিষ মানুষের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়। তবে, এই সাপ কামড়ালে চিকিৎসক এবং হাসপাতালের দ্বারস্থ হওয়ার রেকর্ড পাওয়া গেছে বলে রম্বিক নাইট অ্যাডারকে অবজ্ঞা করার কোন সুযোগ নেই। রম্বিক নাইট অ্যাডার ভাইপার পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হলেও এরা অন্যান্য ভাইপারের মতো সরাসরি বাচ্চা প্রসব না করে ডিম পাড়ে।
The defense mechanism of the Rhombic Night Adder (Causus rhombeatus)
অন্যদিকে, রাসেল’স ভাইপারের মাথা ত্রিকোণাকৃতি বা অনেকটা ইংরেজি বর্ণমালা ‘V’ এর মতো দেখতে হয়। এদের মাথা ঘাড় থেকে চওড়া হয়। রাসেল’স ভাইপার সাপকে অন্যান্য সাপ থেকে আলাদা করে চেনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর ফ্যাকাশে কমলা বাদামী রঙের পিঠের উপর লালচে বাদামী রঙের ডিম্বাকৃতি বা চাকতির মতো দেখতে কালো বর্ণের সীমানাযুক্ত বড় বড় বৃত্ত, যা মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত তিনটি সারিতে শেকলের মতো চলে গেছে। রাসেল’স ভাইপার সাপের শরীরে এই চাকতির মতো কালো রঙের সীমানাযুক্ত বৃ্ত্তগুলো কিছুটা চাঁদের মতো দেখতে হওয়ায় বাংলায় এই সাপকে বলা হয় চন্দ্রবোড়া। এর বাংলায় নামকরণ থেকে বুঝা যাচ্ছে, রাসেল’স ভাইপার বিদেশি কোন সাপ নয়। বরং, এই অঞ্চলের স্থানীয় সাপ। অপরদিকে, রম্বিক নাইট অ্যাডারের বসবাস আফ্রিকা মহাদেশে, বিশেষ করে সাব-সাহারান অঞ্চলে। এই সাপ বাংলাদেশে পাওয়া যায় না। রাসেল’স ভাইপার সাপ তার অনন্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত ত্বকের গঠনের কারণে এবং এর চামড়া দিয়ে শৌখিন জিনিস তৈরি হয় বলে শিকারীর শিকার হয়। বিপদের সম্মুখীন হলে রাসেল’স ভাইপার কুন্ডলী পাকিয়ে ‘ফোঁস ফোঁস’ শব্দ করে শত্রুকে লক্ষ্য করে সতর্কবার্তা পাঠাতে থাকে এবং ঘন ঘন নিঃশ্বাসের ফলে এর শরীর স্বাভাবিক আকারের চেয়ে বেশি ফেঁপে উঠে। রাসেল’স ভাইপার ডিম না পেড়ে সরাসরি বাচ্চা প্রসব করে।
অতএব, উপরে দুটো সাপের শারীরিক বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে, থ্রেডসে শেয়ারকৃত ছবিতে যে সাপটিকে রাসেল’স ভাইপার বলে দাবি করা হচ্ছে সেটি আসলে রম্বিক নাইট অ্যাডার সাপ।
এর আগেও ফেসবুক এবং থ্রেডসে ভিন্ন সাপের ছবি শেয়ার করে সেগুলোকে রাসেল’স ভাইপার বলা হয়েছিল। এই বিষয়ে ফ্যাক্টওয়াচের প্রতিবেদনগুলো পড়তে পারবেন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ থ্রেডসে শেয়ারকৃত ছবির দাবিটিকে বিভ্রান্তিকর বলে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।