রিজভীকে নয়, খালেদা জিয়া মেরুদণ্ডহীন বলেছিলেন তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে

36
রিজভীকে নয়, খালেদা জিয়া মেরুদণ্ডহীন বলেছিলেন তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে
রিজভীকে নয়, খালেদা জিয়া মেরুদণ্ডহীন বলেছিলেন তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে

সম্প্রতি ফেসবুকে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার একটি বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে। যেখানে তাকে বলতে শোনা যাচ্ছে, 'আমাদের রিজভী আহমেদ মেরুদণ্ডহীন, অপদার্থ একটা লোক।' কিন্তু ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, রিজভীকে নিয়ে খালেদা জিয়ার বক্তব্য দাবিতে ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিওটি এডিট করা হয়েছে। মূলত খালেদা জিয়ার ২০১৫ সালে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে দেওয়া দীর্ঘ বক্তব্য কাটছাঁট করে ভাইরাল ভিডিওটি প্রস্তুত করা হয়েছে। 

ভাইরাল ভিডিওটিতে খালেদা জিয়াকে বলতে শোনা যায়, ‘ডিসিপ্লিনড হতে হবে। যদি আমরা ডিসিপ্লিনড না হই তাহলে কোনোকিছু করা সম্ভব নয়। সেজন্য শৃঙ্খলাটা অত্যন্ত বেশি প্রয়োজন। আমাদের রিজভী আহমেদ, আপনারা জানেন, মেরুদণ্ডহীন, অপদার্থ একটা লোক।আমি সবসময় বলেছি, মানে বিএনপিকে শেষ করে দেওয়ার প্ল্যান।’ 

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চে চট্টগ্রামের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সি প্লাস টিভির ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ২০১৭ সালের ২০ জুলাই ভিডিওটি চ্যানেলটিতে পোস্ট করা হয়। এর ক্যাপশন থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, লন্ডনে খালেদা জিয়া জনসভায় ভাষণ দিচ্ছেন।

১ ঘণ্টা ১২ মিনিটের ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটির ৪মিনিট ১৫ সেকেন্ডে খালেদা জিয়া বলেন, ‘ডিসিপ্লিনড হতে হবে। যদি আমরা ডিসিপ্লিনড না হই তাহলে কোনোকিছু করা সম্ভব নয়। সেজন্য শৃঙ্খলাটা অত্যন্ত বেশি প্রয়োজন। কিন্ত, বাংলাদেশে শৃঙ্খলার সবচেয়ে বড় অভাব, ঐক্যের অভাব, আরও অনেক কিছুর সমস্যায় বাংলাদেশ জর্জরিত।’ 

বক্তব্যের এই অংশে খালেদা জিয়া রিজভীকে নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে শোনা যায়নি। 

পরে ভিডিওটির ২৮ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডে নির্বাচন কমিশনারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনার, এই ভদ্রলোক একসময়ে আমারও সেক্রেটারি ছিল এখন যে রকিবুদ্দিন…মেরুদণ্ডহীন, অপদার্থ একটা লোক। অপদার্থ একটা লোক। আমি সবসময়ই বলেছি…যেখানে ফোর পার্সেন্টও ভোট পড়ে নাই, সেখানে বলে ৪৪ পার্সেন্ট ভোট পড়েছে।’

এরপর তিনি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করেন। বক্তব্যের এই অংশেও রিজভীকে নিয়ে খালেদা জিয়ার কোনো মন্তব্য করতে শোনা যায়নি। 

প্রসঙ্গত, কাজী রকিবুদ্দিন আহমদ ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। 

ভিডিওটি আরও পর্যবেক্ষণ করে ৩৬ মিনিট ১০ সেকেন্ডে রিজভীকে নিয়ে মন্তব্য করতে শোনা যায়। এর আগে তিনি বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে করা মামলার সমালোচনা করে বক্তব্য দিচ্ছিলেন।

ভিডিওটির এই অংশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমাদের রিজভী আহমেদ, আপনারা জানেন, অত্যন্ত সিনসিয়ার একটা ভালো ছেলে, ভদ্র ছেলে, সৎ ছেলে। রিজভী আহমেদ বেচারা চলতে পারে না। এরশাদ বিরোধী আন্দলোনে গিয়ে গুলি খেয়ে পঙ্গু হয়েছে। তার অনেক সমস্যা। আইনজীবীরা কত চেষ্টা করেও তাকে ছাড়াতে পারিনি। একটা মামলা থেকে বের করলে আরেকটা মামলা দিয়ে দিচ্ছে।’

পুরো ভিডিওটি বিশ্লেষণ করলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয় যে, খালেদা জিয়ার দীর্ঘ ভাষণ থেকে খণ্ডিত অংশ জোড়া দিয়ে ভাইরাল ভিডিওটি প্রস্তুত করা হয়েছে।

তারপরও অধিকতর সত্যতা যাচাইয়ে বিএনপির ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলে খালেদা জিয়ার বক্তব্যটি পাওয়া যায়। ২০১৫ সালের ৪ নভেম্বর চ্যানেল খালেদা জিয়ার বক্তব্যটি দুই খণ্ডে চ্যানেলটিতে পোস্ট করা হয়। ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ভাষণ দুটি ২০১৫ সালের ১ নভেম্বর লন্ডনে ধারণ করা। ভাষণের খণ্ড দুটি যাচাই করে উপরিউক্ত অনুসন্ধানে প্রাপ্ত ফলাফলের সত্যতা পাওয়া যায়।

অর্থাৎ, খালেদা জিয়ার দীর্ঘ ভাষণ থেকে খণ্ডিত অংশ জোড়া দিয়েই ভাইরাল ভিডিওটি প্রস্তুত করা হয়েছে। তিনি মূলত তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবুদ্দিন আহমদের সমালোচনা করে তাকে মেরুদণ্ডহীন, অপদার্থ বলেছিলেন। তার বক্তব্যের এই অংশটুকুর সঙ্গে পরে আলোচনা প্রসঙ্গে আসা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভীকে নিয়ে করা মন্তব্য এডিট করে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ রিজভী আহমেদকে নিয়ে খালেদা জিয়ার মন্তব্য দাবিতে ভাইরাল ভিডিওটিকে ‘বিকৃত’ হিসেবে সাব্যস্ত করছে।

ফেসবুকে প্রচারিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে

Claim:
সম্প্রতি ফেসবুকে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার একটি বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে। যেখানে তাকে বলতে শোনা যাচ্ছে, 'আমাদের রিজভী আহমেদ মেরুদণ্ডহীন, অপদার্থ একটা লোক।'

Claimed By:
Facebook Users

Rating:
False

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে

এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে
ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh