সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে আসেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তাকে নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত শুক্রবার কক্সবাজারের উখিয়ায় শরণার্থীশিবিরে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে ইফতার করেন। এসব ঘটনার প্রেক্ষাপটে ফেসবুকে একটি ফটোকার্ড শেয়ার করে দৈনিক ইনকিলাবের সূত্রে একটি তথ্য শেয়ার করা হচ্ছে যে, জুনের মধ্যে বাংলাদেশি পাসপোর্ট পাচ্ছেন সৌদিতে থাকা ৬৯ হাজার রোহিঙ্গা। ফটোকার্ডটিতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদেরকে পাসপোর্ট দেওয়ার অধিকার ইউনুস সরকারকে কে দিয়েছে? ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ৬৯ হাজার রোহিঙ্গাকে পাসপোর্ট দেওয়ার এ সিদ্ধান্ত নতুন নয়। ২০২৪ সালের মে মাসে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই এ নিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। তার ভিত্তিতেই রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সংবাদমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, এ রোহিঙ্গা নাগরিকরা আগে থেকেই বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন।
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে ফটোকার্ডটিতে সূত্র হিসেবে উল্লিখিত দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিবেদনটি খুঁজে বের করে ফ্যাক্টওয়াচ। পত্রিকাটিতে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ‘জুনের মধ্যে বাংলাদেশি পাসপোর্ট পাচ্ছেন সউদীতে থাকা ৬৯ হাজার রোহিঙ্গা ‘ শিরোনামে প্রতিবেদনটি ছাপা হয়।
প্রতিবেদনে থাকা তথ্যানুযায়ী, ‘১৯৭৫ সালের পর থেকে কয়েক ধাপে সৌদি আরবে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেন। এই রোহিঙ্গাদের অনেকেই বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে সেখানে গেছেন। আবার অনেক রোহিঙ্গা সৌদিতে অবস্থানকালে বাংলাদেশের পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছেন। সৌদি সরকার বলেছে, এমন রোহিঙ্গার সংখ্যা ৬৯ হাজার। তাদের পাসপোর্টের মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে। নবায়ন করতে হবে। গত বছর মে মাসে বাংলাদেশ সরকার এসব রোহিঙ্গার পাসপোর্ট নবায়ন করে দিতে সম্মত হয়। এজন্য বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে সমঝোতা সই হয়। সে অনুযায়ী উভয়পক্ষ একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করে। বর্তমানে ওয়ার্কিং গ্রুপ রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট প্রদানে কাজ করছে।’
এ প্রতিবেদনের সূত্রে পুনরায় অনুসন্ধানে এ প্রসঙ্গে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের বাংলা সংস্করণে ২০২৪ সালের ১৩ মে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ওই সময়ই সৌদি আরবে অবস্থান করা ৬৯ হাজার রোহিঙ্গার পাসপোর্ট নবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সরকার। সে সময় ঢাকা সফরে আসেন সৌদি স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী ড. নাসের বিন আবদুল আজিজ আল-দাউদের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল। এই প্রতিনিধি দলটি তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দ্রুত নবায়নের জন্য চাপ দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে বাংলাদেশ সরকার তাদের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়।
সৌদি স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘বহু বছর আগে কিছু রোহিঙ্গা সৌদি আরব যায়। সঠিক সংখ্যাটি আমাদের অজানা। সৌদি পক্ষ আমাদের জানিয়েছে এই সংখ্যা ৬৯ হাজার। কিছু কম বেশি হতে পারে। সৌদি আরব প্রবাসী রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে না, তবে তাদের পাসপোর্ট নবায়ন করতে হবে৷ এই বিষয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।’
প্রতিবেদন দুটি থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, ৬৯ হাজার রোহিঙ্গাকে পাসপোর্ট দেওয়ার বিষয়টি এই সরকারের নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত নয়। এটি গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই নেওয়া হয়েছিল। সার্বিক বিবেচনায় ফ্যাক্টওয়াচ দাবিটিকে ‘বিভ্রান্তিকর’ হিসেবে চিহ্নিত করছে।
Claim: ফেসবুকে একটি ফটোকার্ড শেয়ার করে দৈনিক ইনকিলাবের সূত্রে একটি তথ্য শেয়ার করা হচ্ছে যে, জুনের মধ্যে বাংলাদেশি পাসপোর্ট পাচ্ছেন সৌদিতে থাকা ৬৯ হাজার রোহিঙ্গা। ফটোকার্ডটিতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদেরকে পাসপোর্ট দেওয়ার অধিকার ইউনুস সরকারকে কে দিয়েছে?
Claimed By: Facebook Users
Rating: Mostly false
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের
নীতি মেনে লেখা হয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে।
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।
কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকে ইমেইল করুনঃ contact@fact-watch.org অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh