সম্প্রতি “এই মেসিকে নিয়ে ট্রল করা খুব সহজ!!কিন্তু মেসির মত মানুষ পাওয়া খুব কঠিন!!” শীর্ষক একটি ফেসবুক পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে। এসব পোস্টে দাবি করা হয় রোনালদিনহোকে জেল থেকে ছাড়াতে ৪ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছেন মেসি। বাস্তবে দাবিটি অসত্য। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে, সাবেক ব্রাজিল তারকা রোনালদিনহোকে জেল থেকে ছাড়াতে আইনি লড়াই কিংবা জামিনের জন্য অর্থনৈতিক কোনো সাহায্য করেন নি আর্জেন্টিনা ফুটবল তারকা লিওনেল মেসি। সুতরাং রোনালদিনহোকে কারামুক্ত করতে মেসি ৪ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছেন — এমন দাবিগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গত ১৬ জুলাই থেকে ফেসবুকে আর্জেন্টিনা ফুটবল তারকা লিওনেল মেসিকে নিয়ে একটি তথ্য ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায় যেখানে দাবি করা হয়েছে রোনালদিনহোকে কারামুক্ত করতে মেসি ৪ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে। যমুনা টিভি -এর “রোনালদিনহোকে মুক্ত করতে আইনজীবী নিয়োগ মেসির” শীর্ষক ভিডিও প্রতিবেদনর একটি ক্লিপ এবং কিছু স্ক্রিনশট ব্যবহার করে পোস্টগুলো করা হয়েছে। ফেসবুক পোস্টগুলো দেখুন এখানেএখানেএখানেএখানেএখানেএখানেএখানে ও এখানে
সম্পূর্ণ ফেসবুক পোস্টঃ
এই মেসিকে নিয়ে ট্রল করা খুব সহজ!!কিন্তু মেসির মত মানুষ পাওয়া খুব কঠিন!! ব্রাজিলের একসময়কার সেরা ফুটবলার রোনালদিনহো কোন অভিযোগের কারনে প্রায় অনেকদিন যাবত কারাগারে রয়েছেন। তাকে ছাড়াতে তার নিজ দেশ ব্রাজিলের কোন খেলোয়াড় পর্যন্ত এগিয়ে আসেনি। কিংবা তাকে ছাড়াতে বর্তমান কোন খেলোয়াড়ও আদালতে কোন অনুরোধও করেনি! আর সেখানে আর্জেন্টিনায়িন খেলোয়াড় লিওনেল মেসি এগিয়ে এলেন তার বন্ধু ও এক সময়ের বার্সেলোনার অধিনায়ক রোনালদিনহোকে ছাড়াতে!! শুধু তাই নয়! খরচ করলেন ৪ মিলিয়ন ইউরো! যা বাংলাদেশ হিসেবে ৩৪০/৭০ কোটি টাকা। জ্বি এটাই ব্যাক্তি মেসি! আপনি এই ব্যাক্তিকে নিয়ে ট্রল করতে পারেন কিন্তু মনে রাখবেন! আগামী ৪০/৫০ বছরে বিশ্ব এমন মেসিকে পাবে কিনা সন্দেহ!! আমরা হারলেও মেসির পাশে! জিতলেও মেসির পাশে!! আমাদের ৫ বার ট্রফির দরকার নাই! মেসিই আমাদের একটা বড় পাওয়া। নিউজটা ১৬ জুলাই ২০২১ এর।
ফ্যাক্টচেক
ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান চালিয়ে দেখে, যমুনা টিভি ১৬ জুলাই ২০২১ তারিখে “রোনালদিনহোকে মুক্ত করতে আইনজীবী নিয়োগ মেসির” শিরোনামে কোন ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করে নি বরং খবরটি গত বছরের মার্চ মাসে প্রকাশিত। ১৪ মার্চ ২০২০ তারিখের উক্ত প্রতিবেদনটি যমুনা টিভির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেলে দেখুন এখানে ও এখানে।
তবে ১৪ মার্চ ২০২০ তারিখে ‘Jamuna.tv’ ছাড়াও শীর্ষস্থানীয় একাধিক পত্রিকা একই খবর ছেপেছিল। জাগো নিউজ শিরোনামে লিখেছে “রোনালদিনহোকে নিজ খরচে জেল থেকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করছেন মেসি”। যুগান্তর বলছে “রোনালদিনহোকে কারামুক্ত করতে ৩৩ কোটি টাকা খরচ মেসির!”
মূলত, জাল পাসপোর্ট নিয়ে প্যারাগুয়েতে ঢোকার দায়ে রোনালদিনহোকে ৬ মার্চ আটক করেছিল সে দেশের পুলিশ। তার কিছু দিন পরই তাঁকে জেল থেকে ছাড়াতে মেসির ৪ মিলিয়ন ইউরো খরচের সংবাদটি প্রচার করা হয়েছিল। তবে ২০২১ সালের কোপা আমেরিকা টুর্নামেন্টে আর্জেন্টিনার হয়ে লিওনেল মেসি শিরোপা জেতার পর উক্ত খবরটি পুনরায় প্রচার করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে। কিন্তু বাস্তবে, মেসি রোনালদিনহোকে কারামুক্ত করতে আইনজীবী নিয়োগ কিংবা অর্থনৈতিক কোন সাহায্য তিনি করেন নি। প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম স্পোর্ত মেসির এক ঘনিষ্ঠের উদ্ধৃতি প্রকাশ করে রোনালদোর জামিন ফি হিসেবে মেসির ৪ মিলিয়ন ইউরো খরচ করার দাবিটি খারিজ করে দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে “ব্রাজিলের সাবেক ফুটবলারকে জেল থেকে ছাড়িয়ে আনতে মেসির কোনো আইনি কিংবা অর্থনৈতিক সাহায্যের পরিকল্পনা নেই। এ মামলায় সে নিজের আইনজীবীকে নিয়োগ করেনি কিংবা জামিন ফি হিসেবে ৪ মিলিয়ন ইউরোও দিচ্ছে না।” বিস্তারিত পড়ুন “রোনালদিনহোকে জেল থেকে ছাড়াতে টাকাপয়সা দিচ্ছেন না মেসি” শীর্ষক প্রতিবেদনে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্ট লিখেছে, “The 32-year-old (Messi), who also rubbished speculation he had paid Ronaldinho’s bail money in Paraguay after his former teammate was arrested for entering the country with a fake passport…” অর্থাৎ, জাল পাসপোর্ট নিয়ে প্যারাগুয়েতে ঢোকার দায়ে আটক রোনালদিনহোর জামিন ফি হিসেবে তার টাকা খরচের খবরটি গুজব বলে জানিয়েছেন মেসি নিজেই।
অন্যদিকে, ৬ মার্চ আটক হবার পর টানা ৩২ দিন জেলে খেটে বাকি সাজা হিসেবে প্যারাগুয়ের রাজধানী আসুনসিওনের একটি হোটেলে গৃহবন্দী ছিলেন ব্রাজিলের সাবেক ফুটবল তারকা রোনালদিনহো। প্রায় পাঁচ মাস বন্দী থাকার পর সোমবার ২৪ আগস্ট ২০২০ তারিখে আদালতের আদেশে মুক্তি মেলে তার। সাজা শিথিল করতে প্রথমে বড় অঙ্কের মুচলেকা প্রায় ১৪ কোটি টাকায় (১৬ লাখ ডলার) গুণতে হয়েছিল তাঁকে। পরবর্তীতে, প্রায় ৭৬ লাখ টাকা (৯০ হাজার ডলার) জরিমানা দিয়ে মুক্তি পেয়ে যান তিনি। তবে তার সাজা শিথিল করতে কিংবা শেষ জরিমানার টাকা মেসি দিয়েছিল এমন তথ্য জানা যায় নি। “মুক্তি পেলেন রোনালদিনহো” শিরোনামে প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে।
গত বছরের ২৪ আগস্ট তারিখে মুক্তি পেলেও রোনালদিনহোর জামিন বাবদ ৪ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে মেসি এমন গুজব ফেসবুকে ভাইরাল হচ্ছে গত দুদিন ধরে। ভুয়া পোস্টগুলোতে এমনকি দাবি করা হয়েছে “খবরটি ১৬ জুলাই ২০২১ এর” যা অসম্ভব। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে এটা পরিষ্কার যে, রোনালদিনহোকে জেল থেকে ছাড়াতে আইনি লড়াই কিংবা জামিনের জন্য অর্থনৈতিক কোনো সাহায্য করেন নি মেসি। মেসি, রোনালদিনহো কিংবা তাদের কোনো প্রতিনিধি এ বিষয়ে ইতিবাচক কোনো বার্তা কোনো সংবাদমাধ্যমকে আজ পর্যন্ত দেন নি। ফলে, ফ্যাক্টওয়াচ মনে করে, সামাজিকমাধ্যমে মেসির ৪ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে রোনালদিনহোকে মুক্ত করার দাবিটি একটি পুরনো গুজব।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?