বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ফটোকার্ডগুলোকে সম্পাদনা করে সেখানে নিজের মন মতো লেখা বসিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রচার করার প্রবণতা নতুন নয়। সংবাদ পরিবেশনে নতুন মাত্রা যোগ করতে সংবাদমাধ্যমগুলো ফটোকার্ডের ব্যবহার শুরু করেছিল, যা পরবর্তীতে তাদের জন্য বুমেরাং হয়ে উঠে! মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে গুজব ছড়ানেওয়ালারা এইসব ফটোকার্ডগুলোকে মিথ্যা তথ্য প্রচারের মেশিন হিসেবে বেছে নিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার আরটিভির ফটোকার্ডের আদলে তৈরি বেশ কয়েকটি ফটোকার্ড সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। আরটিভি তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ থেকে জানিয়েছে, তাদের নামে ছড়ানো ফটোকার্ডগুলো নকল, তাদের তৈরি নয়। মূলত আরটিভির আসল ফটোকার্ডগুলোকে সম্পাদনা করে এইসকল ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ উক্ত ছবিগুলোকে “বিকৃত” বলে সাব্যস্ত করছে।
অনুসন্ধান:
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডগুলো আসলেই আরটিভি প্রকাশ করেছিল কিনা তা যাচাই করতে আমরা তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ এবং ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখি। আমাদের অনুসন্ধানে আরটিভির ফেসবুক পেইজ থেকে গত ১১ জুন ২০২৪ এ প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া গেছে, যেখানে লেখা রয়েছে: “অসম্পূর্ণ শাকিবের ‘তুফান’ পড়েছে জটিলতায়!” অন্যদিকে, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডের অনুরূপ আরেকটি ফটোকার্ডে লেখা রয়েছে: “মুক্তির চার দিন আগে ব্লকবাস্টার তুফান।” প্রসঙ্গত যে, এমন লেখা সংবলিত কোন ফটোকার্ড কিংবা সংবাদ আরটিভির ফেসবুক পেইজ বা ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, উক্ত ফটোকার্ডের তারিখের ঘরে ঘষামাজা’র নমুনা পাওয়া গেছে। অর্থাৎ, আরটিভির মূল ফটোকার্ডটির তারিখের ঘরে ‘১১ জুন’ মুছে সেটিকে ‘১২ জুন’ বানানো হয়েছে, যা স্পষ্টভাবে দৃষ্টিগোচর হয়।
আরটিভির ফটোকার্ডের আদলে তৈরি আরেকটি ফটোকার্ড সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে লেখা রয়েছে: “কোন হল মালিক মাগনা দিলেও নিবে না বুবলীর রিভেঞ্জ।” একটা জিনিস লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, ফটোকার্ডটির লেখায় আন্ডারলাইন করা হয়েছে! সংবাদমাধ্যমগুলোর ফটোকার্ডে আন্ডারলাইনের ব্যবহার সচরাচর দেখা যায় না। যা-ই হোক, এবারও আরটিভির ফেসবুক পেজ বা ওয়েবসাইট ঘেঁটে এমন লেখা সংবলিত কোন ফটোকার্ড পাওয়া যায়নি। বরং, Rtv Entertainment | বিনোদন নামক এই অফিসিয়াল পেইজ থেকে গত ০৯ জুন ২০২৪ এ প্রকাশিত “শাকিবের ‘তুফান’ – কে চোখ রাঙাচ্ছে বুবলীর রিভেঞ্জ” – লেখা সংবলিত একটি ফটোকার্ড পাওয়া গেছে। ধারণা করা যাচ্ছে, এই ফটোকার্ডটিকে সম্পাদনা করে ভাইরাল হওয়া ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে। তবে, এবার তারিখের ঘরে কোন ঘষামাজা করা হয়নি। ফলে সেটি মূল ফটোকার্ডে যেমন ছিল, তেমনই আছে।
পরবর্তীতে আমরা আরটিভি’র ফেসবুক পেজ থেকে গত ১৩ জুন ২০২৪ এ প্রকাশিত একটি ফটোকার্ড পাই। উক্ত ফটোকার্ডটিতে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ফটোকার্ডগুলোর ছবি ব্যবহার করে বলা হয়েছে, “আরটিভির নামে ছড়ানো এই ছবিগুলো নকল, আমাদের তৈরি নয়। বিভ্রান্তি এড়াতে আমাদের ফেসবুক পেজ ও অনলাইনের সঙ্গে থাকুন।” এ থেকে বুঝা যাচ্ছে, সামাজিক মাধ্যমে আরটিভির ফটোকার্ডের আদলে যে ছবিগুলো ছড়িয়েছিল সেগুলো আসল নয়।
গণমাধ্যমের ফটোকার্ডকে ব্যবহার করে গুজব ছড়ানোর প্রবণতা যখন তুঙ্গে, সেই সময় এই প্রবণতাটিকে পর্যালোচনা করে দেখিয়েছিলেন ফ্যাক্টওয়াচে’র একজন ফ্যাক্ট-চেকার। দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত ঐ কলামটি পড়তে পারবেন এখানে।
অতএব, উপরের আলোচনা থেকে বিষয়টি এখন স্পষ্ট যে, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া আরটিভির লোগো সংবলিত ফটোকার্ডগুলো আরটিভি তৈরি করেনি।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সংবাদমাধ্যমের ফটোকার্ডের আদলে বানানো ভুয়া ফটোকার্ডগুলোকে “বিকৃত” বলে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।