ফেসবুকে যা ছড়াচ্ছেঃ বিএনপি দলীয় রাজনীতিবিদ এবং জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানার তিনটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে, এগুলো রুমিন ফারহানার নাচের ভিডিও।
আসল ঘটনাঃ ভিডিওগুলো বিকৃত। ফ্যাক্টওয়াচ উক্ত ভিডিওগুলো যাচাই করে বেশকিছু অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছে, যা থেকে বোঝা যাচ্ছে ভিডিওগুলো ডিপফেক প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি। বলিউড অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিত, বাংলাদেশি গায়িকা জেফার রহমান এবং প্রণমি নাফিসা নামে একজন টিকটক কনটেন্ট ক্রিয়েটরের আলাদা আলাদা তিনটি ভিডিওর সাথে ভাইরাল ভিডিওগুলো তুলনা করে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। মূলত এই তিন জনের মুখমণ্ডলের স্থানে রুমিন ফারহানার মুখ বসিয়ে দিয়ে ভিডিওগুলো বানানো হয়েছে।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন কিছু পোষ্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানঃ
‘ফেসসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলো রুমিন ফারহানার নাচের ভিডিও’ এই দাবিটির সত্যতা যাচাই করার জন্য শুরুতেই ভিডিগুলো ব্যবহার করে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানের পাশাপাশি কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে ভিডিওগুলো সম্পর্কে ফ্যাক্টওয়াচের গবেষণা থেকে নিম্নোক্ত তথ্য জানা গেছে:
ভিডিও ১. এই ভিডিওটির পূর্ব সংস্করণের একটি ভিডিও অনলাইন ড্যান্স একাডেমি ‘ডান্স উইথ মাধুরী ‘ এর অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটি ২৪ অক্টোবর ২০১৮- এ আপলোড করা হয়েছিল। সেখানে বলিউড অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিতকে ‘তাম্মা তাম্মা’ নামের একটি গানে নাচতে দেখা যায়। এই ভিডিওটি সম্পাদনা করে মাধুরী দীক্ষিতের মুখমণ্ডলের স্থানে রুমিন ফারহানার মুখ বসিয়ে দেয়া হয়েছে।
ভিডিও ২. এই ভিডিওটি হচ্ছে বাংলাদেশি গায়িকা জেফার রহমানের একটি গানের ভিডিওর সম্পাদিত রূপ। জেফার রহমানের ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ১৩ মে ২০২৪-এ প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়, যার সাথে ভাইরাল ভিডিওতে রুমিন ফারহানার মুখমণ্ডলের অংশটুকু ছাড়া বাকি সব কিছুর হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিও ৩. প্রণমি নাফিসা নামে একজন টিকটক কনটেন্ট ক্রিয়েটর তার টিকটক অ্যাকাউন্ট থেকে নিজের একটি ভিডিও শ্যুট করার দৃশ্য আপলোড করেছিলেন। তিনি তার ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকেও একই ভিডিও আপলোড করেছিলেন। এই ভিডিওটি সম্পাদনা করে নুসরাত প্রণমির মুখমণ্ডলের স্থানে রুমিন ফারহানার মুখ বসিয়ে দেয়া হয়েছে।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এই তিনটি ভিডিও এবং এগুলোর পুর্ব সংস্করণের ভিডিওগুলো তুলনা করে দেখলে মুখমণ্ডলের অংশটুকু ছাড়া বাকি কোনোকিছুর অমিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। রুমিন ফারহানার মুখমণ্ডলের ছবি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সহায়তায় এমনভাবে ভিন্ন ভিন্ন তিনজনের উপর প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, যা দেখে মনে হচ্ছে বাস্তবের রুমিন ফারহানাই নাচছেন। কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে অন্য একজন ব্যক্তির মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত করার এই পদ্ধতি ডিপফেক নামে পরিচিত।
উল্লেখ্য, ডিপফেক (Deepfake) হচ্ছে এক ধরণের সিন্থেটিক মিডিয়া, যা ডিপ লার্নিং এর মাধ্যমে একজন ব্যক্তির মুখাবয়ব বা কন্ঠ নিবিড়ভাবে অনুকরণ করে অন্য আরেকজন ব্যক্তিতে তার প্রতিস্থাপন করতে পারে। সিন্থেটিক মিডিয়া বলতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে তৈরি কৃত্রিম টেক্সট, ইমেজ, ভিডিও, সাউন্ডকে বুঝানো হয়। অন্যদিকে, নন-সিন্থেটিক মিডিয়া বলতে বাস্তব পরিবেশ এবং মানুষের সাহায্য নিয়ে তৈরি যেকোন মিডিয়াকে বুঝানো হয়। ডিপফেক, সিন্থেটিক মিডিয়া, মেশিন লার্নিং নিয়ে বিস্তারিত জানতে ফ্যাক্টওয়াচ এর “ডিপফেক ভিডিও বুঝবেন কি করে?” শিরোনামের ফ্যাক্ট-ফাইলটি পড়ুন এখানে।
অতএব, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে দৃশ্যমান অস্বাভাবিকতাগুলো বিবেচনায় এনে বোঝা যাচ্ছে উক্ত ভিডিওগুলো ডিপফেক প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি। তাছাড়া, নির্ভরযোগ্য কোনো মাধ্যম থেকে রুমিন ফারহানার এই ধরণের কোনো নাচের ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত ভিডিওটিকে “বিকৃত” বলে সাব্যস্ত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।