সম্প্রতি বাংলাদেশের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান এর নামে “ভেঙ্গে ভেঙ্গে জরিমানা না দিয়ে একসাথে জরিমানা দিতে চেয়েছেন” এমন শিরোনামে কিছু ফেসবুক পোস্ট ভাইরাল হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, সাকিব আল হাসান কিংবা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অফিসিয়াল কোনো মাধ্যম থেকেই এমন দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এমনকি দেশের মূলধারার গণমাধ্যমেও এমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি। যে ফেসবুক পেজ থেকে খবরটি ছড়িয়েছে সেটি “স্যাটায়ার পেজ” হিসেবে তালিকাবদ্ধ। কিন্তু পোস্টের ভাবভঙ্গি থেকে সেটা পাঠকের পক্ষে বোঝা মুশকিল হয়ে যায়। ফলে এই পোস্ট নিয়ে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মধ্যে এক ধরণের বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। তাই ফ্যাক্টওয়াচ এমন ফেসবুক পোস্টগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” সাব্যস্ত করছে।
গুজবের উৎস, ধারণা করা যায়, Bangladesh cricket center নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে সর্বপ্রথম পোস্টটি করা হয়। পোস্টটি দেখুন, এখানে দাবি করা হচ্ছে, “ভেঙ্গে ভেঙ্গে জরিমানা না দিয়ে, উভয় পক্ষের সময় বাচাতে, বিসিবিকে ২০২২ সালের জন্য আগাম ৭৫ লক্ষ টাকা জরিমানা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে সাকিব, বছর শেষে এরচেয়ে কম জরিমানা উঠলেও টাকা ফেরত নিবেন না এবং বিসিবি কর্মকর্তাদের উন্নয়ন ফান্ডের জন্য দিয়ে দিবেন এই শর্তে যে বারে বারে কোন নিয়ম ভঙ্গের নামে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ বা বিরক্ত করা যাবে না, আগাম প্রেরিত অর্থ থেকে কেটে রাখতে হবে, কোন প্রশ্ন থাকলে সাকিবে আল হাসানের অফিস পিয়নের সাথে যোগাযোগ করবে বিসিবি।প্রস্তাবের ব্যাপারে এখনও সিধান্ত জানায় নাই বিসিবি, ধারনা করা হচ্ছে আফগান ওয়ানডে সিরিজ শেষে বোর্ড মিটিং করে জানাবে, মিটিংএ সাকিবের হয়ে উপস্থিত থাকবেন সাকিবের ম্যানেজার এবং এজেন্ট”।
ফ্যাক্ট-ওয়াচের অনুসন্ধান
উক্ত পোস্ট থেকে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড নিয়ে গুগলে সার্চ করা হলে, তেমন আশানুরূপ কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে, Bangladesh Cricket center নামের যে পেজটি থেকে এমন পোস্টটি প্রকাশিত হয়েছে তার সম্পর্কে অনুসন্ধান করে জানা যায় এটি একটি “ব্যঙ্গাত্বক (Satire/Parody)” পেজ। তারা তাদের পেজেও এটি উল্লেখ করেছেন। তবে তাদের করা পোস্টের ধরণ দেখে বোঝার উপায় নেই এটি একটি স্যাটায়ার। পেজটি এই পোস্টটির শুরুতে এবং শেষে স্যাটায়ারের কোনো ইঙ্গিতও দিয়ে রাখেনি। যার কারণে পোস্টটি ঘিরে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে। এই অলরাউন্ডারের ভ্যারিফাইড টুইটার ও ফেসবুক পেজ অনুসন্ধান করেও এমন কোনো বিবৃতি ফ্যাক্টওয়াচ খুজে পায়নি। এছাড়াও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত কোনো সংবাদ ফ্যাক্টওয়াচ পায়নি। বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যমেও এমন কোনো নিউজ দেখা যায়নি। দৈনিক প্রথম আলো ১৮-২-২০২২ তারিখে “ সাকিবের বিজ্ঞাপন শুটিংয়ে যাওয়ার ঘটনায় বরিশালকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে বিসিবি” শিরোনামে নিউজ করেছে — যা মূলত নিয়ম ভঙ্গ করে ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে সাকিব আল হাসানের বিজ্ঞাপনের শুটিং করতে যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। নানা ইস্যুতে আলোচিত সাকিব আল হাসান অসংখ্যবার জরিমানার মুখে পড়লেও, “ভেঙে ভেঙে জরিমানা না দিয়ে, উভয় পক্ষের সময় বাচাতে, বিসিবিকে ২০২২ সালের জন্য আগাম ৭৫ লক্ষ টাকা জরিমানা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে সাকিব” সম্প্রতি কিংবা অতীতেও সাকিবের এমন কোনো বক্তব্য ফ্যাক্টওয়াচ খুঁজে পায়নি।
বিভ্রান্তির নমুনা
মূহুর্তেই এই পোস্টটি ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মাঝে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এই পেজের পোস্টটি ধরে অসংখ্য পেজ, ও ব্যক্তিগত একাউন্ট থেকে পোস্টটি শেয়ার হতে শুরু করে। “pearl/ মুক্তা” নামের অন্য একটি পেজে পোস্টটি শেয়ার হলে, সেখানে Foisal নামের একজন মন্তব্য করেছেন “ আম্পায়ার এর উপর অত্যাচার ও বিসিবির বিরুদ্ধে শক্ত পোক্ত জবাব দেওয়ার পথ পরিস্কার করছেন বস”। জালাল উদ্দিন নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী উক্ত পোস্টটি শেয়ার করে, নিজে মন্তব্যে লিখেছেন, বেয়াদবির প্রিপেইড ভার্সন। পোস্টটি দেখুন ।
তারই শেয়ার করা এই পোস্টে আরও একজন মন্তব্য করেছেন “আমি বাংলাদেশের খেলা দেখা কেনো ছেড়ে দিয়েছিলাম মনে আছে”? একই পোস্টে রাসেল সিকদার নামের একজন মন্তব্য করেছেন “ওর চেয়ে আদববিহীন ও ঘাড়ত্যাড়া এবং অহংকারী ক্রীড়াবিদ পৃথিবীতে আর দেখিনি”। এছাড়াও Aminur Rahman Raihan নামের একজন পোস্টটি শেয়ার করে লিখেছেন, “ ভাইরে ভাই সাকিব বলে কথা”।
যুক্তিসঙ্গত কারণেই, এই দাবিটিকে ফ্যাক্ট-ওয়াচ বিভ্রান্তিকর হিসেবে চিহ্নিত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?