সম্প্রতি বাংলাদেশি একটি এতিম শিশুর চিকিৎসার জন্য ১০-১২ লাখ টাকার একটি তহবিল সংগ্রহের আবেদন ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যায়, শিশুটির নাম সানবার খান এবং সে একজন ভারতীয়। Ketto নামক একটি ভারতীয় তহবিল সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। এ কারণে ফ্যাক্টওয়াচ ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোকে “মিথ্যা” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ এবং পেজ থেকে শেয়ার হওয়া অসুস্থ শিশুটির ছবি সংবলিত কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান:
ভাইরাল হওয়া এই ফেসবুক পোস্টগুলোতে দাবি করা হয়, “এতিম শিশুটির ফুসফুসে ক্যান্সার হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ইন্ডিয়ার হায়দ্রাবাদ নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন, এর জন্য ১০-১২ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। সে সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুরের জামতলির বাসিন্দা” । ফেসবুক পোস্টে ব্যবহৃত বিকাশ এবং নগদ একাউন্টের একটি নাম্বারে ফ্যাক্টওয়াচ যোগাযোগ করলেও কোনো সাড়া মেলেনি এবং পোস্ট গুলোতে বাচ্চাটির নাম উল্লেখ করা হয়নি।
ভাইরাল এই পোস্টগুলোতে ব্যবহৃত ছবিগুলো দিয়ে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে, আর্থিক সহায়তার জন্য তহবিল সংগ্রহকারী একটি প্রতিষ্ঠান “Ketto” এর ওয়েবসাইটে একটি আবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। “After His Father- I’m At Risk of Losing My Son Too! Please Help Save Him!” শিরোনামের এই আবেদনে ব্যবহৃত শিশুর ছবির সাথে বর্তমানে ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোতে ব্যবহৃত শিশুর ছবির হুবহু মিল পাওয়া যায়। আবেদনটি থেকে জানা যায়, শিশুটির নাম “সানবার খান”, বয়স ১২ বছর । তার মায়ের নাম সাজদা বেগম এবং বাবার নাম আফজাল খান যিনি এখন বেঁচে নেই। তারা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় অবস্থিত ভাঙ্গাদাহ গ্রামের বাসিন্দা।
আবেদনটিতে যুক্ত করা বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা পত্র এবং সাজদা বেগমের বিবৃতি থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ২০২১ সালের ২২ নভেম্বর সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সানবারের পাচনতন্ত্র এবং কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চিকিৎসকরা শিশুটির সফল অস্ত্রোপচার করতে পেরেছিলেন । দুই সপ্তাহ হাসপাতালে থাকার পর ৭ই ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। এর এক সপ্তাহের মধ্যে, তার স্বাস্থ্য আবার খারাপ হতে শুরু করে যার কারণে তাকে আবার পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ায় অবস্থিত নারায়ণ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার তার চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখতে ১২ লাখ রুপি প্রয়োজন ছিল।
সানবার সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে Ketto এর, ফেসবুক পেজ এবং টুইটার অ্যাকাউন্ট দেখুন এখানে এবং এখানে।
“I have lost my husband, and now my 12-yo son met with an accident. I barely earn enough to put food on the table. Allah, from where can I arrange for lakhs of rupees to afford my son’s treatment and save his life?”
উল্লেখ্য, “Ketto” এর ওয়েবসাইটে সানবার খানের চিকিৎসার জন্য তহবিল সংগ্রহের আবেদনটিতে গত মাসে সাজদা বেগম তার ছেলের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বক্তব্য দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি জানান, সানবার কিছু শারিরীক সমস্যায় ভুগছে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার গ্রহণ করতে না পারায় খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে। সে ডাঃ শুভদীপের তত্ত্বাবধানে এনএইচ নারায়ণ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার জন্য তার চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
অর্থাৎ, বর্তমানে ফেসবুকে ভাইরাল এই শিশুটির পরিচয় ভুলভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। শিশুটি বাংলাদেশের কোনো এতিম শিশু নয় এবং তার মায়ের নাম হামিদাও নয়। পাশাপাশি শিশুটির ফুসফুসেও ক্যান্সার হয়নি। শিশুটির ভুল নাম এবং অসুস্থতা ব্যবহার করে আর্থিক সাহায্যের আবেদন করা হচ্ছে। ইতিপূর্বে ফ্যাক্টওয়াচ থেকে এমন কিছু আর্থিক সাহায্যের নামে প্রতারণামূলক ফেসবুক পোস্ট নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। প্রতিবেদনগুলো দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সঙ্গত কারণে, ভিত্তিহীন এই পোস্টগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ “মিথ্যা” হিসেবে সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?