সামাজিক মাধ্যমে প্রায়ই একটি পোস্ট শেয়ার হতে দেখা যায় যেখানে দাবি করা হচ্ছে যে, সাহার তাবার (Sahar Tabar) নামের একজন ইরানিয়ান তরুণী অ্যাঞ্জেলিনা জোলির মতো মুখাবয়ব পেতে ৫০ টি প্লাস্টিক সার্জারি করিয়েছিলেন। সামাজিক মাধ্যমে তার যে ‘বিকৃত’ ছবিগুলো দেখতে পাওয়া যায় সেগুলো যেমন-তেমন ভাবে করা (botched) প্লাস্টিক সার্জারির ফল। তবে, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে জানা গিয়েছে যে সাহার তাবার ৫০ টি প্লাস্টিক সার্জারি করেননি এবং সামাজিক মাধ্যমে তার যে ‘বিকৃত’ ছবিগুলো দেখতে পাওয়া যায় সেগুলো মেক-আপ এবং ফটোশপের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। সঙ্গত কারণে ফ্যাক্টওয়াচ সমাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টের দাবিকে “মিথ্যা” বলে সাব্যস্ত করছে।
সাহার তাবার অ্যাঞ্জেলিনা জোলি এর মতো মুখাবয়ব পেতে ৫০ টি প্লাস্টিক সার্জারি করিয়েছিলেন কিনা এবং তার পরিবর্তিত রূপের যে ছবিগুলো দেখতে পাওয়া যায় সেগুলো যেমন-তেমন প্লাস্টিক সার্জারির ফল কিনা – তা যাচাই করতে আমরা বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখি। আমাদের অনুসন্ধানে সাহার তাবারকে নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। উক্ত প্রতিবেদনগুলো পড়ে আমরা জানতে পেরেছি যে, সারাহ তাবারের আসল নাম হচ্ছে ফাতিমাহ খিশভন্দ (Fatemeh Khishvand) এবং ২০১৯ সালে ধর্মনিন্দা (blasphemy), সামাজিক মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের খারাপভাবে প্রভাবিত করা, এবং অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জনের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। সাহার তাবার এর গ্রেফতার এবং কারাদণ্ড পাওয়ার কিছু প্রতিবেদন পড়ুন এখানে, এখানে, এবং এখানে।
কারাগারে ১৪ মাস কাটানোর পর ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে সারাহ তাবার জামিনে মুক্তি পান এবং স্বীকার করেন যে তিনি ৫০ টি প্লাস্টিক সার্জারি করেননি বরং নাক ও ঠোঁট এর আকৃতি এবং শরীরের মেদ ঝরানোর জন্য ছোট ছোট কিছু সার্জারি করিয়েছিলেন। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, সামাজিক মাধ্যমে তার যে ‘বিকৃত’ ছবিগুলো দেখতে পাওয়া যায় সেগুলো বাজে প্লাস্টিক সার্জারির ফল নয় বরং মেকআপ এবং ফটোশপের মাধ্যমে ছবিগুলো তৈরি করা হয়েছিলো। যদিও বিভিন্ন জায়গায় দাবি করা হয়েছিলো যে সারাহ তাবার ৩০ থেকে ৪০ কেজি ওজন কমিয়েছিলেন, প্রকৃতপক্ষে তার সাত কেজি ওজন কমেছিলো। সারাহ তাবারের জামিনে মুক্তি পাওয়ার কিছু প্রতিবেদন পড়ুন এখানে, এখানে, এবং এখানে।
সারাহ তাবারের বিষয়টি অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমরা আরও কিছু প্রতিবেদনের খোঁজ পাই যেখানে ২০১৭ সালে রাশিয়ান সংবাদমাধ্যম স্পুটনিক-কে দেয়া সারাহ তাবারের একটি সাক্ষাৎকারকে সূত্র ধরে বলা হয়েছে যে ৫০ টি প্লাস্টিক সার্জারির দাবিটি ভুয়া এবং সামাজিক মাধ্যমে যে ছবিগুলো দেখতে পাওয়া যায় সেগুলো মেকআপ এবং ফটোশপ এর মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। কয়েকটি প্রতিবেদন পড়ুন এখানে, এখানে, এখানে, এবং এখানে।
স্পুটনিককে দেওয়া সারাহ তাবারের সাক্ষাৎকারটি আমরা খুঁজে বের করি এবং পড়ে দেখি। সাক্ষাৎকারকারী সারাহ তাবারকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন বাস্তব জীবনে আপনি দেখতে কেমন এবং ইন্সটাগ্রামে আপনার যে ছবিগুলো দেখা যায় সেগুলো কি আসল। উত্তরে তিনি জানান যে, ছবিগুলো মেকআপ এবং ফটোশপ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এবং তার ভক্তরাও জানেন যে ছবিগুলো তার আসল চেহারার নয়।
সাক্ষাৎকারকারী তাকে আরও জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, তিনি অ্যাঞ্জেলিনা জোলির মতো হতে চেয়েছিলেন কিনা। উত্তরে সারাহ তাবার জানান, তার কোন আগ্রহ ছিলো না অ্যাঞ্জেলিনা জোলির মতো হওয়ার এবং তিনি কারও মতো হতে চাননি।
কি ধরণের সার্জারি তিনি করিয়েছিলেন জানতে চাওয়া হলে উত্তরে সারাহ তাবার জানান, নাকের আকৃতি পরিবর্তনের জন্য রাইনোপ্লাস্টি (Rhinoplasty), ঠোঁটের আকৃতি পরিবর্তনের জন্য বোটক্স (Botox), এবং মেদ ঝরানোর জন্য লিপোসাকশন (Liposuction) করিয়েছিলেন।
তিনি ৪৯ কেজি ওজন কমাতে চেয়েছিলেন – এই দাবিটি সত্য কিনা জানতে চাওয়া হলে সারাহ তাবার জানান, তিনি ওজন কমাতে চেয়েছিলেন এটা সত্য এবং তিনি মাত্র পাঁচ থেকে সাত কেজি ওজন কমিয়েছিলেন।
মানুষ তাকে রাস্তায় দেখলে কিরকম প্রতিক্রিয়া জানাতো তা জানতে চাওয়া হলে সারাহ তাবার বলেন, তারা স্বাভাবিকভাবেই প্রতিক্রিয়া জানাতো, আমার নাম ধরে ডাকতো, আমার সাথে কথা বলতো, এবং আলিঙ্গন করতো।
স্পুটনিককে দেওয়া সারাহ তাবারের পুরো সাক্ষাৎকারটি পড়ুন এখানে।
অতএব, এই বিষয়টি স্পষ্ট যে সামাজিক মাধ্যমে আমরা যে পোস্টগুলো দেখতে পাই যেখানে দাবি করা হচ্ছে সারাহ তাবার অ্যাঞ্জেলিনা জোলির মতো মুখাবয়ব পেতে ৫০ টি প্লাস্টিক সার্জারি করিয়েছিলেন এবং ভুল সার্জারির কারণে তার চেহারা দেখতে ‘বিকৃত’ হয়ে গিয়েছে – এগুলো সঠিক নয়। বরং, সারাহ তাবার একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন তিনি ৫০ টি প্লাস্টিক সার্জারি করেননি এবং তার ‘বিকৃত’ ছবিগুলো মেকআপ এবং ফটোশপের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।
সুতরাং, সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারকৃত পোস্টের দাবিকে “মিথ্যা” সাব্যস্ত করছে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?