‘ব্রেকিং নিউজ… আগামী ২০-০১-২২ তারিখ হতে অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।‘–এমন একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে । প্রকৃতপক্ষে এটি কোনো খবর কিংবা ব্রেকিং নিউজ নয় , বরং এটি একটি মশকরামূলক স্ট্যাটাস, যা স্ট্যাটাসের শেষ লাইনে ইঙ্গিত করা হয়েছে। তবে অনেকে পুরো স্ট্যাটাস না পড়ার কারণে বিভ্রান্ত হচ্ছেন । শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার কোনো সরকারি ঘোষণা এখনো পাওয়া যায়নি।
গুজবের উৎস
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মনিটরিং এর একটি শীর্ষস্থানীয় সফটওয়ার থেকে দেখা যাচ্ছে, গত ৪৮ ঘন্টায় কমপক্ষে ১৩৩ টি ভিন্ন পেজ,গ্রুপ বা প্রফাইল থেকে এই একই স্ট্যাটাস পোস্ট করা হয়েছে। এসব পোস্ট শেয়ার করা হয়েছে আরো কয়েক হাজার । এমন কয়েকটা পোস্ট দেখুন এখানে , এখানে , এখানে , এখানে , এখানে ।
উদাহরনস্বরুপ- ১৩ই জানুয়ারি রাত ১১টা ২৯ মিনিটে ‘সসচ ২০২০ এর পর যা যা করব’ গ্রুপ থেকে আপলোড করা এই পোস্টটি দেখা যাক । ৩ বাক্যের এই স্ট্যাটাসে লেখা হয়, আগামী ২০-০১-২২ তারিখ হতে অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। শিক্ষার্থীদের বাসায় বসে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং অনলাইন ক্লাসে মনযোগী হওয়ার আহবান জানিয়েছেন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দিপু মনি। এরকম খবর জানলে দয়া করে আমাকে সবার আগে জানাবেন🙂
পোস্টের শেষে একটি হাসিমুখের ইমোজিও যুক্ত করা হয় ।
ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মন্তব্য
এসব স্ট্যাটাস এর কমেন্ট বসে সাধারণ ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মন্তব্য থেকে দেখা যাচ্ছে , তারা অধিকাংশই প্রথম লাইন পড়ে ভেবেছিলেন, সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ এর নতুন ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার কারনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের খবর এসেছে। তবে সম্পূর্ণ স্ট্যাটাস পরে তারা আশাহত হয়েছেন। এমন স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে কেউ কেউ পেজ এডমিন/মূল পোস্টদাতা কে গালাগাল করলেও ,অধিকাংশই এমন কৌতুককর স্ট্যাটাসকে ইতিবাচকভাবেই নিয়েছেন। অনেকে কমেন্ট বক্সে আবার সরস মন্তব্য, স্টিকার কিংবা ফটো কমেন্ট করেছেন। । অনেকে আবার এই স্ট্যাটাস শেয়ার করতে থাকেন, কিংবা স্ট্যাটাসটা কপি করে নিজেরা অন্যান্য জায়গায় অনুরূপ পোস্ট করতে থাকেন। এভাবেই এই কৌতুকময় স্ট্যাটাসটি ছড়িয়ে পড়ে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর বক্তব্য
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট এই মুহুর্তে বন্ধ রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজেও গত ২ সপ্তাহে কোনো পোস্ট দেওয়া হয়নি ।
তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বরাতে জানা যাচ্ছে, শনিবার ১৫ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দপ্তর থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে । এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের যে কথা হচ্ছে, তা গুজব। শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়া সংক্রান্ত সাম্প্রতিক সময়ে কোনো বক্তব্য দেননি।
এতে আরও বলা হয়- করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার নিয়মিত পরিস্থিতি মনিটর করছে। করোনা-সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সাথে আবারও মিটিং করা হবে। এরপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সরকার এই মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার বিষয়টিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির বরাত দিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের যে কথা বলা হচ্ছে; তাতে কান না দিতে, এবং নির্দিষ্ট কাউকে কোনো আগাম তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকতে সবার প্রতি অনুরোধ করা হয়েছে।
এর আগে গত ৯ই জানুয়ারি তারিখে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি বলেছিলেন, যারা বলছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তারা শুধু সংবেদনশীলতা সৃষ্টি করার জন্য করছে; অন্য কিছু না। তারা নানাভাবে গুজব ছড়ায়, সব সময়ই গুজব হয়, গুজবে কান দেবেন না। যদি বন্ধ করতে হয় আমরাই বলব। প্রয়োজনে বন্ধ করব, কিন্তু যতক্ষণ না পর্যন্ত সেই প্রয়োজন অনুভুত হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বন্ধ করা হবে না।
‘তবে এটাও ঠিক, যদি মনে হয় খোলা রাখলে সংক্রমণ বাড়বে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখালে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা থাকবে তখন হয়তো বন্ধ করে দেওয়া হবে। কিন্তু এখন যে অবস্থা আছে, তাতে আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সুরক্ষিত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়। যদি বন্ধ করতেই হয় তাহলে আমরাই বলব। আমরা চাই শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরে যাক। কাজেই সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।’
ফ্যাক্টওয়াচের সিদ্ধান্ত
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে কেন্দ্রীয়ভাবে বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। সার্বিক বিবেচনায় এ সংক্রান্ত ভাইরাল ফেসবুক পোস্টগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ ‘স্যাটায়ার’ হিসেবে সাব্যস্ত করছে ।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?