যাদাবিকরাহচ্ছে: বিদ্বেষের কারণে ভারতীয় নাগরিকরা চিকিৎসা নিতে যাওয়া বাংলাদেশিদের উপর শারীরিকভাবে আক্রমণ করছে।
যাপাওয়াযাচ্ছে: এটা একটা স্ক্রিপ্টেড নাটকের খণ্ডিত অংশ। নাটকটি শুধুমাত্র বিনোদনের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিলো। বাস্তবে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। এ কারণে ফ্যাক্টওয়াচ এটিকে “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে চিহ্নিত করছে।
ভিডিওটির ০০.১১ মিনিট থেকে ০০.৩৭ মিনিট পর্যন্ত সময়ে বলা হয় “ আলোচনার শুরুতে আপনাদের একটা ভিডিও ক্লিপ দেখিয়ে আসবো, ভিডিওটা ভারতের কোন এক জায়গা থেকে স্যোশাল মিডিয়াতে সম্ভবত পোস্ট করা হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে একজন বৃদ্ধ বাংলাদেশি রোগী হাসপাতালের মেঝেতে পড়ে আছে এবং বেশ কিছু উগ্র হিন্দুত্ববাদী চরিত্রের যেসব বিজেপি, আরএসএস টাইপের যেসব হিন্দুরা আছে তারা তাদের উপর চড়াও হয়েছে, তাদেরকে সেখানে চিকিৎসা নিতে দিবে না।”
ভিডিওটির ০০.৪০ মিনিট থেকে ০০.৫২ মিনিট পর্যন্ত সময়ে বলা হয় “ এই ধরণের ঘটনা আপনারা এর আগেও বেশ কয়েকদিনে বেশ কয়েকটা ভিডিও দেখেছেন। আমরা যে ভিডিওটা নিয়ে কথা বলছি অল্প কিছু অংশ আমরা দেখে আসি।”
ভিডিওটির ০০.৫৩ মিনিট থেকে ০১.২৩ মিনিট পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশী চিকিৎসা প্রার্থীর উপর ভারতীয়দের চড়াও হওয়ার ভিডিও ক্লিপটি দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওটির ০১.২৪ মিনিট থেকে ০৩.০৯ মিনিট পর্যন্ত সময়ে বলা হয় “ দেখেন এই যে ভিডিওটা এই ভিডিওটার মতো ঘটনা এরকম ঘটনা কিন্তু গত কয়েকদিনে আপনারা যারা স্যোশাল মিডিয়াতে বিচরণ করেন তারা নিশ্চয় এরকম আরো কয়েকটা ভিডিও দেখেছেন যেখানে আরেকটা ভিডিওতে দেখা গিয়েছে একজন নারীর বাংলাদেশী একজন নারীর বোরকা ধরে টানাটানি করছে। তার কিছুদিন আগে বাংলাদেশি দুইজন নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। সেখানে এই যে হিন্দু, উগ্র হিন্দুত্ববাদী লোকজন আছে তাদের দ্বারা তারা ধর্ষিত হয়েছে। তো এই ঘটনার পরেও বাংলাদেশের মানুষ এখনো আমি আমার ফেসবুকেই দেখেছি অনেকে ভারতে ঘুরতে যাচ্ছে এরকম মানুষজন আছে। যে ভিডিওটা আপনাদের দেখালাম এই ভিডিওর একটা মজার অংশ আছে। সেটা হচ্ছে যে ওখানে যে ডাক্তার আছে, ডাক্তার কিন্তু চেষ্টা করছেন যারা বাধা দিচ্ছে তাদেরকে ঠেকানোর জন্য। তিনি যেকোন উপায়েই হোক তাকে চিকিৎসা দেবেন এটা তার বক্তব্য। তো চিকিৎসক কেন এটা বলছেন। আপনার মনে করার কোন কারণ নেই, ভারতের লোকজন বাংলাদেশের উপরে দয়া করে এটা করছেন। কারণ বাংলাদেশের মানুষ এখানে ভিক্ষা করার জন্য যায় না, ফ্রি পয়সায় ট্রিটমেন্টের জন্য যায় না। এই ডাক্তার জানে যে গেল কোভিডের সময় আমি আমার লাস্ট একটা অনুষ্ঠানে দেখিয়েছি যে হাগার জায়গা নেই ভারতের লোকজনের, কিছুটা ফানি ছিলো ভিডিওটা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও সেটা। সেখানে দেখিয়েছি যে কোভিডের সময় বা তার কিছুদিন আগে বাংলাদেশিদের ভিসা রেস্ট্রিক্টেড করা হয়, তখন ভারতের বিভিন্ন ব্যবসায়ী, হোটেল ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে হাসপাতাল ব্যবসায়ি যারা আছে তাদের অবস্থাটা কি হয় তখন বোঝা যায়। যেকারণে যারা এই ব্যবসার সাথে জড়িত তারা কিন্তু এই ধরণের ঝুঁকি আর নিতে চাই না।”
ফ্যাক্টওয়াচেরঅনুসন্ধান
কথিত সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইনের ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও পোস্টটি বিশ্লেষণ করে বোঝা যাচ্ছে তিনি চিকিৎসা নিতে যাওয়া বাংলাদেশিদের উপর ভারতীয়দের আক্রমণের ঘটনাকে ইঙ্গিত করেছেন।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে ‘Comedy Processing Unit’ নামক ফেসবুক পেজে ৪ঠা ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে প্রকাশিত ১২.৪৫ মিনিটের একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা ছিলো “বাংলাদেশি, বলে “হাসপাতালেও” জায়গা নেই!!”। ভিডিওটিতে দেখা যায় বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা নিতে ভারতে যাওয়া একজন যুবক এবং তার অসুস্থ বাবার উপর ভারতীয়রা ক্ষেপে যায়। বাংলাদেশি হওয়ায় ৪০ দিন যাবৎ তাদের ভর্তি নিচ্ছে না।
২০২৩ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারত অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে গেলে বাংলাদেশিরা ভারতকে নিয়ে স্যোশাল মিডিয়ায় ট্রল করে। ভিডিওতে এটাকেই বাংলাদেশের মানুষের ওপর ভারতীয়দের ক্ষেপে যাওয়ার কারণ হিসেবে দেখানো হয়। তার আমরা দেখি একজন ডাক্তার এসে উত্তপ্ত ভারতীয় জনতাকে শান্ত করছেন এবং বাংলাদেশি লোকটার চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন।
Comedy Processing Unit থেকে প্রকাশিত উক্ত ভিডিওর ০৯.২৩ মিনিট থেকে ০৯.৫৩ মিনিট পর্যন্ত ফুটেজের সাথে ইলিয়াস হোসেনের ছড়ানো ভিডিওর হুবহু মিল পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু মূল ভিডিওটির ১৮ তম সেকেন্ডে একটি ডিসক্লেইমার জানানো হয় এই ভিডিওটি শুধুমাত্র বিনোদনের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে, এটা কাউকে আঘাত দেয়ার জন্য করা হয়নি। এবং ভিডিওটিকে গুরুত্বের সাথে না নিতেও অনুরোধ করা হয়েছে। ইলিয়াস হোসেনের ভিডিওতে এই অংশটি বাদ দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য Comedy Processing Unit নামক ফেসবুক পেজ থেকে এরকম বিনোদনমূলক নাটকের ভিডিও নিয়মিত প্রকাশ করে থাকে।
উল্লেখ্য, এই একই গুজব কিছুদিন পূর্বে ভারতেও ছড়িয়ে পড়েছিল। বাংলাদেশি নাগরিক হওয়ার কারণে নাকি কোনও হাসপাতালে জায়গা দেওয়া হয়নি জনৈক রোগীকে- এমন দাবিতে এই ক্লিপটি অনেকে শেয়ার করেছিলেন। এই গুজবটা নিয়ে ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা আজতক বাংলা গত ৭ই ডিসেম্বর তারিখে ফ্যাক্ট চেক: বাংলাদেশি হওয়ার কারণে হাসপাতালে নেই ঠাঁই! স্ক্রিপ্টেড ভিডিয়ো ছড়াচ্ছে বিভ্রান্তিকর দাবিতে শিরোনামে ফ্যাক্টচেকিং প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। একই দাবিতে এটি বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে ভিডিওটি স্ক্রিপটেড নাটক। এটি বাস্তব কোন ঘটনা নয়। একারণে ফ্যাক্টওয়াচ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোকে “বিভ্রান্তিকর” হিসেবে চিহ্নিত করছে।
এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।। এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে। এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।