“এই সেই সাগর যেখানে দুই ধরনের পানি কখনো মিশ্রিত হয় না” – শিরোনামে একটি পোস্ট ছবি ও ভিডিও আকারে ফেসবুকে পাওয়া যাচ্ছে। ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে পাওয়া যাচ্ছে, এখানে পানির দুটি ভিন্ন রঙ হবার কারণ প্রাকৃতিক বা স্থায়ী নয়, বরং মনুষ্যসৃষ্ট ডেড জোন।
গুজবের উৎস
২০১৬ সাল থেকে এমন শিরোনামে দুটি ভিন্ন ভিন্ন ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। একটিতে দেখা যাচ্ছে, পাশাপাশি সবুজ ও নীল রঙ বিশিষ্ট পানিতে একটি সাদা রঙের ওয়াটার বোট ছুটে যাচ্ছে, অপর ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে একটি নৌযান যাত্রীদের নিয়ে সবুজ ও নীল রঙ বিশিষ্ট পানিতে চলছে। এই দুই রঙের পানির দৃশ্য স্থিরচিত্র হিসেবেও পাওয়া যাচ্ছে। পোস্টগুলোতে দাবি করা হচ্ছে, এখানে দুটি সাগরের অথবা নদীর পানি মিশ্রিত হচ্ছে না। বেশিরভাগ পোস্টে এই ভিন্ন দুই রঙের পানির অবস্থান হিসেবে বলা হয়েছে মিসিসিপি নদী ও মেক্সিকো উপসাগরের মিলনস্থল, কিছু পোস্টে আলাস্কা উপসাগরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এবং এখানে।
ফ্যাক্টওয়াচ অনুসন্ধান
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, এই গুজবটি ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে প্রথমে ইংরেজি ভাষায় সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিলো। বেশ কিছু ফ্যাক্টচেকিং সাইট তখন এটির সত্যতা যাচাই করেছে।
প্রথম ভিডিওটি ২০১৫ সালে ইউটিউবে Marlin Magazine নামক চ্যানেল থেকে ‘Mississippi River Rip in the Flesh’ শিরোনামে সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়।
দ্বিতীয় ভিডিওটিও ২০১৫ সালে Maryan Pearson নামক একটি ইউটিউব চ্যানেল থেকে প্রকাশিত হয় যেখানে বলা হয়েছে, কানাডার ফ্রেজার নদীর পানি এসে জর্জিয়া প্রণালিতে মিলিত হচ্ছে।
Snopes ফ্যাক্টচেকিং সাইট ২০১৬ সালের রিপোর্টে প্রথম ভিডিওর স্থান হিসেবে মিসিসিপি নদী ও মেক্সিকো উপসাগরের মিলনস্থল নিশ্চিত করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, দুটি ভিন্ন রঙের পানি পরস্পরের সাথে মিশছে না দাবি করে এই ঘটনাকে সৃষ্টিকর্তার লীলা আখ্যা দেওয়া হয়েছে, যেটি ভুল। এই ভিডিওটি মেক্সিকো উপসাগরের ডেড জোনে ধারণ করা হয়েছে যেখানে মিসিসিপি নদী এসে মিশেছে। এই ডেড জোন (dead zone) একটি মানবসৃষ্ট পরিবেশগত সমস্যা। মিসিসিপি নদী ক্ষেতখামারের সার, মাটি ও গবাদিপশুর মলযুক্ত পানি মেক্সিকো উপসাগরে এনে ফেলে। এই নাইট্রোজেন ও ফসফরাসযুক্ত পানিতে শৈবালের জন্ম হয়, যা থেকে পরবর্তীতে পানির খাদ্যচক্র পরিবর্তিত হয় এবং পানিতে অক্সিজেন সংকট দেখা দেয়। এ অবস্থাকে ডেড জোন (সবুজ অংশ) বলা হয়। মিসিসিপি নদী ও মেক্সিকো উপসাগরের মিলনস্থল হলো পৃথিবীর অন্যতম বড় ডেড জোন যা প্রতি গ্রীষ্মকালে সৃষ্টি হয়। Snopes এই ঘটনাকে প্রাকৃতিক ও স্থায়ী দাবির অংশটিকে মিথ্যা আখ্যা দিয়েছে।
ফ্যাক্টচেকিং সাইট AFP Fact Check তাদের রিপোর্টে এই ঘটনাকে “মনুষ্যসৃষ্ট” বলে গুজবের মূল দাবিকে (পানি মিশ্রিত হচ্ছে না এবং এটি সৃষ্টিকর্তার লীলা) মিথ্যা আখ্যা দিয়েছে।
ফ্যাক্টচেকিং সাইট Africa Check তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেছে, International Society of Limnology-এর প্রফেসর Yves Prairie-এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নদী এবং সাগরের পানি মিশছে না এই দাবিটি মিথ্যা। দুটি ভিন্ন ঘনত্ব এবং রঙের পানি একত্রিত হলে প্রথমদিকে এটি বেশকিছু সময়ের জন্য অমিশ্রিত অবস্থাতে থাকলেও পরবর্তীতে মিশতে শুরু করে। পৃষ্ঠের পানি সবচেয়ে পরে মেশে বলে অনেকদিন ধরে এদের আলাদা অবস্থাতেই দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া তিনি ডেড জোনের বিষয়টিও ব্যাখ্যা করেন। Afica Check এই দাবিটিকে ভুল বলে আখ্যায়িত করেছে।