নোয়াখালীতে মুসলিম ছেলেদের হিন্দু তরুণী অপহরণের বিভ্রান্তিকর দাবি

35
নোয়াখালীতে মুসলিম ছেলেদের হিন্দু তরুণী অপহরণের বিভ্রান্তিকর দাবি নোয়াখালীতে মুসলিম ছেলেদের হিন্দু তরুণী অপহরণের বিভ্রান্তিকর দাবি

Published on: [post_published]

“নোয়াখালীর সেনবাগ থানায় দিনে দুপুরে হিন্দু মেয়েকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে  মুসলিম ছেলেরা” – এমন দাবিযুক্ত একটি ফেসবুক পোস্ট ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, উক্ত তরুণী বিবাহিত ছিল এবং পারিবারিক কলহের কারণে স্বামীর কাছ থেকে পৃথকভাবে বসবাস করছিল। ৮ই আগস্ট উক্ত তরুণীর স্বামী (যে হিন্দু সম্প্রদায়েরই সদস্য) কয়েকজন সহযোগীকে (যারা মুসলিম ধর্মের নিয়ে উক্ত তরুণীকে বলপূর্বক অপহরণের চেষ্টা করেছিল। কাজেই ‘মুসলিম ছেলেরা হিন্দু তরুণীকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে’ এমন দাবি বিভ্রান্তিকর।

গুজবের উৎস

ছড়িয়ে পড়া কয়েকটা পোস্ট দেখুন এখানে,এখানে,এখানে,এখানে,এখানে,এখানে,এখানে,এখানে

জনৈক এস আর রায় ৮ সেকেন্ডের এই ভিডিও পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছেন,

দিনে দুপুরে হিন্দু মেয়েকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে 😥 মুসলিম ছেলেরা, নোয়াখালীর সেনবাগ থানার মইশাই গ্রামের দুলাল পালের মেয়ে। জাগো হিন্দু জাগো।

অধিকাংশ পোস্টকারী একই বক্তব্যই হুবহু লিখেছে।


অনুসন্ধান

বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোট এর কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সম্পাদক জনাব গৌতম হালদার প্রান্ত ৮ সেকেন্ডের এই ভিডিও আপলোড করে ক্যাপশনে লিখেছেন,

দুলাল চন্দ্র পালের মেয়েকে এভাবেই সিনেমা স্টাইলে মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে…

This is how Dulal Chandra Pal’s daughter is being picked up in a movie style microbus….

উল্লেখ্য, নোয়াখালী জেলার সেনবাগ থানার মইশাই গ্রামের পাল বাড়ি থেকে এই মেয়েকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাচ্ছিল তাঁর প্রাক্তন স্বামী! স্থানীয় লোকজন সেনাবাহিনীকে ফোন করলে তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছে এবং মেয়েটিকে উদ্ধার করেছে।

প্রসঙ্গত, মেয়েটার বিয়ে হয়েছিল। আর যে তুলে নিয়ে যেতে এসেছিল সে মেয়েটার প্রাক্তন স্বামী।

এর আগেও সে দুইবার তুলে নেয়ার চেষ্টা করেছিল। মেয়েটি তার স্বামীর সাথে থাকবে না। তাই যেতে চাইছিল না কিন্তু স্বামী জোরপূর্বক নিতে চেয়েছিল! সেনাবাহিনী খবর পেলে ঘটনাস্থলে এসে মেয়েটাকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে অত্যন্ত করে।

নোয়াখালীর সেনবাগের স্থানীয় বাসিন্দা মাহফুজ আলম ৮ই আগস্ট সন্ধ্যা ৬টা ৩৭ মিনিটে একটা ফেসবুক লাইভ করেন। তাঁর লাইভ ভিডিওতে কয়েকজন যুবককে আটক অবস্থায় দেখা যায়।ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়, মইশাই কুমার বাড়িতে দিনেদুপুরে অস্ত্রসহ তিন অপহরণকারী ধরা পড়ছে! তারা দুইটা হাইস গাড়ি নিয়ে মোট ১৭ জন আসছে। জনতার দৌড়ানিতে ১৪ জন একটি হাইস নিয়ে পালিয়ে যায়। বাকি ৩ জন ১টি হাইস সহ ধরা পড়ে। বর্তমানে তাদেরকে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

এই ভিডিওর ২ মিনিট ১৫ তম সেকেন্ডে একজনকে বলতে শোনা যায়– এ হল হিন্দু ছেলে। আজ এসেছিল দুলাল ডাক্তারের বাড়িতে হামলা করার জন্য। দুলাল ডাক্তারের মেয়েরে তুলে নিতে চেয়েছিল। পরে আমাদের এলাকাবাসী ধরেছে তারে।দিনে দুপুরে দুইটা Hiace (মাইক্রোবাস) নিয়ে আইছে হামলা করার জন্য।……এর পাশে দুইটা ছেলে মুসলমান, তাদের বাড়ি কুমিল্লা। তারা কান্নাকাটি করে বলতেছে যে তারা কিছু জানেনা, তাদেরকে ডেকে নিয়ে এসেছিল। ……মূল হোতা হল এ। দুলাল ডাক্তারের মেয়েরে আগে বিয়ে করেছিল,সেটা ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। তাকে আজ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ,দুইটা মাইক্রোবাস নিয়ে তুলে নিতে এসেছিল। এলাকাবাসী তাদেরকে ধরে ফেলেছে, একটা মাইক্রোবাস পালিয়ে গেছে, আরেকটা আটকা পড়েছে।

ভিডিওর ৫০ তম সেকেন্ডে ‘কেন এই কাজ করলেন’ এমন প্রশ্নের জবাবে উক্ত যুবককে বলতে শোনা যায়, ভাই ও, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে ,( এ সময় পাশ থেকে একজন বলেন, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে, তা গ্রাম আছে না! সমাজ আছে না ! উক্ত যুবক তখন আবার বলেন)  আমার জীবনে কোনোদিন হিন্দু সমাজে কেউ আমাকে সায় দেয় নাই,

এই ভিডিওর কমেন্ট বক্স থেকে জানা যাচ্ছে, উক্ত হিন্দু যুবকের সম্ভাব্য নাম মিঠুন ।

Bengali Hindu Post নামক ফেসবুক পেজ থেকে ৯ই আগস্ট রাত ১২টা ৭ মিনিটে এক পোস্টে জানানো হয়,  নোয়াখালীর সেনবাগ থানার মইশাই গ্রামের পাল বাড়ি থেকে একটা মেয়েকে গণধর্ষণের জন্য জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল ৭/৮ জন যুবক। মেয়ের বাবার নাম – দুলাল চন্দ্র পাল।

ঘটনাটি সম্পর্কে একটি আপডেট হচ্ছে এটি   একটি পারিবারিক ঝামেলা কেন্দ্রিক ঘটনা. তবে বাকি সব ইনফরমেশন সঠিক. হিন্দুদের দুঃখের দিনে সুযোগে কেউ এটা রিলিজ করে দিয়েছে. যেহেতু আমাদের বর্তমান কনটেক্স সাথে

এটা সাংঘর্ষিক তাই আমরা রিলেটেড পোস্টগুলো ডিলিট করে দিচ্ছি ধন্যবাদ.

ফেসবুকের বাইরে গণমাধ্যমে নোয়াখালীর সেনবাগের এই সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছেনা।

সিদ্ধান্ত

যেহেতু একাধিক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিন্ন ভিন্ন পোস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত করছেন যে উক্ত অপহরণের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন হিন্দু, এবং এটা কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক হামলা নয়, বরং পারিবারিক বিবাদ, তাই সাম্প্রদায়িক হামলার ইঙ্গিতবাহী পোস্টগুলোকে ফ্যাক্টওয়াচ ‘বিভ্রান্তিকর’ সাব্যস্ত করছে।

এই নিবন্ধটি ফেসবুকের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রামের নীতি মেনে লেখা হয়েছে।।
এর উপর ভিত্তি করে ফেসবুক যে ধরণের বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এখানে
এছাড়া এই নিবন্ধ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন, সম্পাদনা কিংবা আরোপিত বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করতে এই লিঙ্কের সাহায্য নিন।

কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে আমাদেরকেঃ
ইমেইল করুনঃ contact@factwatch.org
অথবা ফেইসবুকে মেসেজ দিনঃ facebook.com/fwatch.bangladesh

No Factcheck schema data available.