গতকাল ১১ জুন ২০২১ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মেজাজ ধরে রাখতে না পেরে বিতর্কিত ঘটনার জন্ম দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। বিষয়টি কেন্দ্র করে “আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারেন সাকিব!” শীর্ষক একটি খবর ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে। এই ঘটনার জন্য সাকিবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ম্যাচ রেফারি ও আম্পায়ারদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে, যা এখনো প্রকাশিত হয়নি। বিসিবি কর্তৃক সাকিবের ব্যাপারে যথাযথ সিদ্ধান্ত প্রকাশের আগেই তাকে আজীবন নিষিদ্ধ করা হতে পারে – এ ধরনের সংবাদগুলো মূলত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অসত্য।
১১ জুন ২০২১ শুক্রবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ও আবাহনী লিমিটেডের ম্যাচে মেজাজ ধরে রাখতে না পেরে অশোভন আচরণ করেছেন সাকিব যা ক্রিকেটীয় পরিভাষায় ‘অসদাচরণ’ এবং শৃঙ্খলাভঙ্গের শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এহেন কাণ্ডে জড়ানোর কারণে বাংলাদেশের সফলতম এই ক্রিকেটারের কী শাস্তি হতে পারে তা নিয়ে যথাযোগ্য মহল কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাবার আগেই “আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারেন সাকিব!” শিরোনামে একটি গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় সামাজিক মাধ্যমে।
ফ্যাক্টওয়াচ টিম অনুসন্ধান করে দেখে, উক্ত প্রতিবেদনের শিরোনামে সাকিবের আজীবন নিষিদ্ধ হবার সম্ভাবনা দাবি করা হলেও তার পক্ষে নেই কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য-প্রমাণ। এমনকি মূল ঘটনার বিবরণ ছাড়া বিস্তারিত অংশে প্রতিবেদক কোন সূত্রেরও উল্লেখ করেন নি। কেবল শেষ লাইনে লিখেছেন “এই বিষয়টির শাস্তি হিসেবে হয়তো আজীবন ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধও হতে পারেন সাকিব।”
অন্যদিকে, দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার বরাত দিয়ে জানতে পারি, ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিসের (সিসিডিএম) চেয়ারম্যান কাজী ইনাম আহমেদ বলেছেন, “মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়ে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটানো সাকিবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ম্যাচ রেফারি ও আম্পায়ারদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে।” আজ রাতে ম্যাচের দুই আম্পায়ার ইমরান পারভেজ ও মাহফুজুর রহমান এবং ম্যাচ রেফারি মোরশেদুল আলম প্রতিবেদন জমা দেবেন বলে জানা গেছে। এতে বোঝাই যায়, সাকিবের শাস্তি বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয় নি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে।
স্ক্রিনশট
তবে ম্যাচ রেফারি মোরশেদ চৌধুরী সংবাদ মাধ্যম jagonews24’কে সাকিবের শাস্তি বিষয়ে একটি আভাস দিয়েছেন। তিনি জানান, যদি আচরণবিধির ‘লেভেল টু’ লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়, তবে এ অপরাধের শাস্তি হবে দুই ম্যাচ কিংবা কমপক্ষে এক ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা এবং আর্থিক জরিমানা। আর যদি ‘লেভেল ফোর’ ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয় তবে সাকিবকে কমপক্ষে পাঁচ ম্যাচ থাকতে হবে মাঠের বাইরে।
তবে কী হতে পারে সেই শাস্তি তা নিয়ে শুক্রবার বিকাল থেকেই সাধারণ মানুষের মনে কৌতূহলের শেষ নেই। এমন মুহূর্তে সাকিব আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারেন শীর্ষক খবর পাঠকমহলে তৈরি করছে বিভ্রান্তি। আমরা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল এই পোস্টগুলো যাচাই করে দেখেছি, কেবল শিরোনাম পড়ে অনেকেই সেখানে বিভ্রান্ত হয়েছেন।
সাধারণ পাঠকের বিভ্রান্ত হবার নমুনাঃ
অশোভন আচরণের মাধ্যমে সাকিব আল হাসান যে অপ্রত্যাশিত ঘটনার জন্ম দিয়েছেন, তাতে তার শাস্তি পাবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কিন্তু কী শাস্তি হবে তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ম্যাচের দুই আম্পায়ার ও রেফারির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সাকিবের ব্যাপারে নেয়া হবে সিদ্ধান্ত। সুতরাং তাকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করা হতে পারে এমন দাবিগুলো ভিত্তিহীন যা আমরা ‘মিথ্যা’ চিহ্নিত করেছি।
আপডেটঃ অশোভন আচরণ করায় মোহামেডান অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা ও ৩ ম্যাচের বহিষ্কারাদেশ দিয়েছেন ম্যাচ রেফারি। আজ ১২ জুন সন্ধায় বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিসিডিএম প্রধান কাজী ইনাম আহমেদ এই শাস্তির কথা জানান। প্রথম আলোর “তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ সাকিব, জরিমানা ৫ লাখ টাকা” শীর্ষক প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে।
আপনি কি এমন কোন খবর দেখেছেন যার সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন? কোন বিভ্রান্তিকর ছবি/ভিডিও পেয়েছেন? নেটে ছড়িয়ে পড়া কোন গুজব কি চোখে পড়েছে?